স্নিগ্ধার পালকী হওয়ার গল্প
বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিবারগুলো আজও মেয়েদের শোবিজ কিংবা মিডিয়াতে কাজ করার বিষয়টি একটু বাঁকা দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। ঠিক তার উল্টো এক পরিবারের মেয়ে স্নিগ্ধা মোমিন। বাবা-মায়ের অুনপ্রেরণাতেই তিনি শোবিজের রঙিন পথে হাঁটার জন্য শৈশব থেকে স্বপ্নটা নিজের মধ্যে পুষে রেখেছেন।
সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে কতদূর এগুলেন এমন প্রশ্নের জবাবে স্নিগ্ধা মিষ্টি হেসে বলেন, ‘সবে তো শুরু। তবে একথা বলতে পারি দীপ্ত টিভিতে প্রচার হওয়া ‘পালকী’ সিরিয়ালটি আমার ভাগ্য বদলে দিতে যাচ্ছে। এই নাটকের নাম ভূমিকায় আমি অভিনয় করেছি। মাত্র অল্প কিছু পর্ব প্রচার হয়েছে। কিন্তু রেসপন্স পেয়েছি প্রচুর। সবাই খুব প্রশংসা করছেন। সবাই পালকী নামে ডাকছেন। আমিও সাহস পাচ্ছি।’
তবে পালকী সাফল্য পেয়েছে বলছেন? জবাবে স্নিগ্ধা বলেন, ‘আমরা তো কেবল যাত্রা করলাম। অল্প সময়ে যেটুকু সাড়া পেয়েছি তাতে সাফল্যের কথা বলাই যেতে পারে। তবে দীপ্ত টিভি এবং এর অনুষ্ঠানগুলোর প্রচারে আরো কিছু সময় প্রয়োজন। এত শ্রম, এত ধৈর্য, এত পরিকল্পিত বিনোয়োগ বৃথা যেতে পারে না। আর ব্যক্তি সাফল্যের জায়গা থেকে বলবো আমি সফল। তবে সফলতা শতভাগ হবে যখন আমাদের দর্শকেরা বিদেশি চ্যানেলগুলো বন্ধ করে আমাদের অনুষ্ঠান দেখবেন। তারা পালকীকে চিনবেন নিজের ঘরের মানুষ হিসেবে।’
কুড়িগ্রামের মেয়ে স্নিগ্ধার জন্ম ও বেড়ে উঠা রাজধানী ঢাকাতে। বাবা অবসর প্রাপ্ত ঢাকা ওয়াসা’র প্রকৌশলী। মা-বাবার একমাত্র সন্তান এবং লেখাপড়ায় তুখোড় হলে মিডিয়ার প্রতি স্নিগ্ধার ছিল আলাদা টান।
রঙের দুনিয়ার প্রতি স্নিগ্ধার মুগ্ধতা সেই ছোটবেলা থেকে। মিডিয়াতে প্রতিষ্ঠার জন্য শৈশবেই নাচের তালিম রপ্ত করেছেন বুলবুল ললিত কলা একাডেমির সোহেল রহমানের কাছ থেকে। তারপর নিজেকে তৈরি করেছেন দেখে দেখে, অভিজ্ঞতার আলোকে।
শোবিজ নিয়ে তুমুল আগ্রহ থাকলেও পড়াশোনার প্রতি তিনি ছিলেন যথেষ্ট যত্নশীল। বাবা-মাও বলতেন, উপযুক্ত শিক্ষা ছাড়া যথার্থ শিল্পীর জন্ম ঘটে না। তাই বরাবরই ভালো ফল অর্জন করতেন পরীক্ষায়। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় স্কুল-কলেজের গণ্ডি টপকিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স করেছেন রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে মাস্টার্স অব পপুলেশন রি-প্রডাক্টিভ হেলথ অ্যান্ড জেন্ডার ডেভেলপমেন্ট (এমপিআরএইচজিডি) বিষয়ে অধ্যয়ন করছেন ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শোবিজে স্নিগ্ধার আজকের যে অবস্থান সেটির বীজ তিনি বুনেছিলেন ২০০৮ সালে ‘লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়ে। যদিও সেখানে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের দেখা মেলেনি। স্নিগ্ধাকে খুশি থাকতে হয় লাক্সের ১১তম পজিশন নিয়ে। কিন্তু সেই প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে শিখেছিলেন অনেক কিছুই। যা পরবর্তীতে তার কাজে লেগেছে।
লাক্সে চূড়ান্ত সাফল্য না পেলেও থেমে থাকেননি তিনি। মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রয়াস তাতে এগিয়ে নিয়ে গেছে প্রতিনিয়তই।
জাগো নিউজের সাথে এক আড্ডায় স্নিগ্ধা বলেন, ‘লাক্স চ্যানেল আই প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ার পর খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, অন্তত ১০ জনের মধ্যে আসতে পারব। কারণ এতে করে পরবর্তী কাজে ব্যাকআপ পাওয়া যায়, কিন্তু আমি সেটা পাইনি। তাই নতুন করে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় এতটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। এরপর লেখাপড়ার সাথে সাথে ২০১০ সালে উপস্থাপনা শুরু করি। পরে কিছু সিরিয়ালও করেছি। এর মধ্যে রেদওয়ান রনির ‘রেডিও চকোলেট’, মাসুদ সেজানের ‘ চলিতেছে সার্কাস’ অন্যতম। অনেক বেশি কাজ না করলেও ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলাম।’
সেই ধীর চলায় গতি এনে দিল দীপ্ত টেলিভিশন। তার সাথে যুক্ত হলেন গেল বছর থেকে। বাকি কাহিনি কেবলই স্বপ্ন বুনে যাওয়ার। যার বিন্দু বিন্দু বিকাশ ঘটছে ‘পালকী’ নাটকটি প্রচারের পর থেকে।
পালকীর সাথে যোগ হওয়া প্রসঙ্গে স্নিগ্ধা বলেন, ‘গত বছরের মাঝামাঝিতে ‘পালকী’র অডিশন শুরু হয়। এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হলে আমি তা দেখেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এর পর আমাকে সিলেক্ট করেন। কিন্তু তখনও আমি জানতাম না যে পালকীর জন্য মনোনীত হয়েছি। এটা ছিল আমার জন্য বিগ সারপ্রাইজ। পরে আমাকে জানানো হয় আমি ‘পালকী’তে কেন্দ্রীয় চরিত্রে কাজ করবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ নাটকের পুরো গল্পটাই ‘পালকী’কে ঘিরে। আসলে প্রত্যেক অভিনেতা- অভিনেত্রীর চাওয়া থাকে নাম ভূমিকায় অভিনয়ের। সেক্ষেত্রে বলব, আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান।’
স্নিগ্ধার কাজের প্রতি একাগ্রতা দেখে দীপ্ত টিভি’র কর্মকর্তা মোস্তফা মনন বলেন, ‘পালকীতে কাজের জন্য আমরা স্নিগ্ধার মতই একজন মেয়েকে চাচ্ছিলাম। তাকে সিলেকশন করার পর অনেকটা ভীতি ছিল সে পারবে কি না! কারণ গতানুগতিক নাটকগুলোর চেয়ে পালকী একটু ভিন্ন আবহের গল্প, ভিন্ন ধরনের নির্মাণ। কিন্তু খুব অল্প সময়েই সে নিজেকে প্রমাণ করেছে। আর নাটকটি টিভিতে প্রচারের পর থেকে স্নিগ্ধা পুরোদস্তুরই পালকী হয়ে গেছে। চরিত্রটির সাথে সে মিশে গেছে। এখন আমরা সবাই তাকে ‘পালকী’ নামেই ডাকি। কাজের যে স্পৃহা, কোয়ালিটি সেটা যদি ও ধরে রাখতে পারে অভিনেত্রী হিসেবে স্নিগ্ধার ভবিষ্যত উজ্জ্বল বলেই প্রত্যাশা করি।’
আগামীতে স্নিগ্ধার ধ্যান শুধুই মিডিয়াকে ঘিরে। সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে সকলের নজরে আসতে চান তিনি। স্নিগ্ধা মনে করেন, ‘অভিনয় শেখার আসলে কখনো শেষ হয় না। প্রতিটি সিরিয়ালের পর্ব করার পর মনে হয়, ইশ আর একটু যদি মনিটর দেখতাম, তাহলে হয়তো অন্যরকমভাবে করতে পারতাম। বোধহয় সেটাই ভালো হতো। আমাকে আরো অনেক শিখতে হবে। এখন নিজেকে ঝালাই করছি।’
তিনি বললেন, ‘ছোটবেলা থেকেই পরিবার আমাকে পুরোপুরি সার্পোট দিয়ে যাচ্ছে। পরিবারের স্বদিচ্ছা না থাকলে হয়তো আমি আজ এতদূর আসতে পারতাম না। পাশাপাশি পালকী নাটকের প্রতিটি শিল্পীই আমাকে নানাভাবে অনুপ্রাণীত করেছে। চমৎকার এই টিমে কাজ করে আমি সত্যিই আনন্দিত। আর দর্শকদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই শত সমালোচনার পরও তারা দীপ্ত টিভি গ্রহণ করেছেন, এর অনুষ্ঠানগুলো পছন্দ করেছেন, পালকীকে ভালোবেসেছেন।’
সবশেষে যোগ করলেন, ‘অনেকে শখের বশে মিডিয়াতে কাজ করে। দু’দিন পর হারিয়ে যায়। আমি এমনটা চাইনা। নিজেকে আমি চলচ্চিত্রেও প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’
এনই/এলএ