শিক্ষিকা থেকে অভিনেত্রী : কিংবদন্তি দিলারা জামানের জন্মদিন আজ
মায়ের ভূমিকায় তার বিকল্প নেই। বহু নাটকে তার মাতৃত্ব ছুঁয়ে গেছে দর্শকের হৃদয়। বিশেষ করে বলা যেতে পারে ‘নক্ষত্রের রাত’ নাটকের নাম। এখানে তিনি জাহিদ হাসান, শমী কায়সার, আজিজুল হাকিম ও লাকী ইনামের মায়ের ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। ৫১ বর্তী, রুপনগর নাটকগুলোও অন্যতম।
বলছি কিংবদন্তি অভিনেত্রী দিলারা জামানের কথা। আজ ১৯ জুন এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। এবারে তিনি ৭৮ বছরে পা রাখলেন।
১৯৪৩ সালের ১৯ জুন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন দিলারা জামান। তার পিতার নাম রফিকউদ্দিন আহমেদ এবং মাতার নাম সিতারা বেগম। তার জন্মের কিছুদিন পরে তার পরিবার আসানসোল জেলায় চলে যায়।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তারা যশোর জেলায় চলে আসে। তবে ঘটনাক্রমে দিলারার শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঢাকার বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুলেই তার অভিনয়ের হাতেখড়ি হয়। সেখানে প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন। পরে তিনি ইডেন মহিলা কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি নুরুল মোমেনের ছাত্রী ছিলেন।
শিক্ষা জীবন শেষ করে দিলারা জামান ক্যারিয়ার শুরু করেন শিক্ষিকা হিসেবে। তিনি শাহীন কলেজের শিক্ষিকা ছিলেন। সেখান থেকেই অভিনয় শুরু করেন। প্রথমে ছিলেন অপেশাদার। ধীরে ধীরে নিজেকে অভিনয়েই প্রতিষ্ঠিত করেন।
দেশে টেলিভিশন সম্প্রচার চালু হওয়ার দুই বছর পর ১৯৬৬ সালে ‘ত্রিধরা’ নাটক দিয়ে অভিনয় ক্যারিয়ারে শুরু করেন দিলারা জামান। এই নাটকে তার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর স্ত্রী লিলি চৌধুরী।
দিলারার অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক সকাল সন্ধ্যা।
১৯৯৩ সালে তিনি মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘চাকা’-তে অভিনয় করেন। ২০০৮ সালে তিনি মুরাদ পারভেজ পরিচালিত ‘চন্দ্রগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে ময়রা মাসী চরিত্রে অভিনয় করে প্রথমবার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
বয়সের কাছে হার মানেননি দিলারা জামান। এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। তাকে দেখা যাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ সিনেমায়। এখানে তিনি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মা সায়রা খাতুনের চরিত্রে অভিনয় করছেন। ছবিটি রয়েছে নির্মাণাধীন।
এছাড়াও দিলারা জামানকে নিয়মিত দেখা যায় অভিনয়ে। গেল কয়েক বছরে তিনি আলোচনায় এসেছেন দেশের বেশ কিছু শীর্ষ ম্যাগাজিনের কভার গার্ল হয়ে। ৭৫ পার হয়েও দিলারা দেখা দিয়েছেন সুইট সিক্সটিন রূপে। যা বেশ চমক তৈরি করেছিলো শোবিজে।
শেষ জীবনে এসে নিজেকে বড় একা হিসেবে আবিষ্কার করেন দিলারা জামান। তার স্বামী মারা গেছেন বছল সাতেক হয়। দুই মেয়ে থাকে বিদেশে। বাসায় তিনি একা। একজন আছেন আশিক নামে। তার দেখাশোনা করেন। এই বয়সে একাকীত্বটা সইতে পারেন না। তাই চেষ্টা করেন অভিনয়ে ব্যস্ত থাকতে।
শুটিংয়ে থাকলেই যেন প্রাণ ফিরে পান। একটা পরিবারের মধ্যে থাকার আনন্দটা পান। তাকে সম্মান করেন ইন্ডাস্ট্রির সবাই। উপভোগ করেন তিনি। সেকারণে অভিনয়কেই জীবনের সেরা সঙ্গী হিসেবে মেনে নিয়েছেন। যার সঙ্গে তার পথচলা দীর্ঘদিনের।
এলএ/এমএস