অনেক কষ্টে বড় হয়েছি, প্রায়ই ঘরে খাবার থাকতো না : বর্ষা
প্রতিটি জীবনের গল্পেই সামনে থেকে যা দেখা যায় তার আড়ালে অনেক কিছু লুকানো থাকে। অনেকেই জীবনে অনেক সংগ্রাম আর ত্যাগের বিনিময়ে সুখের দেখা পান। সমাজে তারাই সফল মানুষ হিসেবে স্বীকৃত।
তেমনি একজন দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা ও শিল্পপতি-অভিনেতা অনন্ত জলিলের স্ত্রী আফিয়া নুসরাত বর্ষা। শৈশব ও কৈশোর ছিলো তার নানা প্রতিবন্ধকতায় ভরপুর। প্রায়ই ঘরে খাবার থাকতো না। সকালের নাস্তা না খেয়েই স্কুলে গিয়েছেন। সেই কঠিন সময় ও অতীতকে ভুলে যাননি বর্ষা।
নিজের আজকের অবস্থানটাকে যেমন উপভোগ করেন তেমনি অতীতের দিনগুলোকেও স্মরণ করেন। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে নিজের জীবনের জানা অজানা অনেক গল্পই শোনালেন বর্ষা। সেখানে তার অতীত নিয়েও কথা বলেন তিনি।
‘খোঁজ-দ্য সার্চ’ সিনেমায় অভিনয় করে চলচ্চিত্রে পা রাখেন বর্ষা। ইফতেখার চৌধুরী পরিচালিত এ সিনেমায় চিত্রনায়ক অনন্ত জলিলের বিপরীতে অভিনয় করেছেন তিনি। এরপর একসঙ্গে অনেকগুলো সিনেমায় অভিনয় করেছেন অনন্ত-বর্ষা। কাজ করতে গিয়ে প্রেম ও বিয়ে। বর্তমানে দুই সন্তান নিয়ে তারা সুখী দম্পতি।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে বর্ষা তার জীবনের ফেলে আসা দিনগুলো নিয়ে বলেন, ‘আমি খুব সাধারণ ঘরের মেয়ে ছিলাম। এমনও হয়েছে সকালে আনমনে স্কুলে চলে গিয়েছিলাম। আমার ঘরে খাবারও ছিল না যে আমি এটা খেয়ে যাব। হঠাৎ করে স্কুলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। তারপর আমার টিচার আমাকে তার বাসায় নিয়ে গিয়ে ডিম দিয়ে খিচুড়ি খাইয়েছিলেন। তারপর আবার ক্লাসে আসি।’
কথাগুলো বলতে বলতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে যান বর্ষা। তার চোখের কোণায় পানি জমে যায়। নিজেকে সামলে অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘আমার ৮-১০ বছর পর্যন্ত অনেক কষ্টে দিন কেটেছে। খাবারটাও ঠিকমতো পাইনি। তারপর আলহামদুলিল্লাহ, আমার ফ্যামিলি এটাকে ওভারকাম করতে পেয়েছে।’
ছোটবেলা থেকেই মানুষের ভালোবাসা অনেক বেশি পেতেন বলেন জানান চিত্রনায়িকা বর্ষাা। তার ভাষায়, ‘প্রাইমারি শেষ করে হাইস্কুলে যাওয়ার পরও টিচারদের ভালোবাসা পেয়েছি। বার্ষিক অনুষ্ঠানে নাটক করতে শিক্ষকরা আমাকে ছেলেদের চরিত্রগুলো দিতেন। একবার চেয়ারম্যান চরিত্রে অভিনয় করে কলম উপহার পেয়েছিলাম।’
সিরাজগঞ্জে বেড়ে ওঠা বর্ষা কি ছোটবেলা ফিরে পেতে চান? এমন প্রশ্নের উত্তরে তার জবাব, ‘সত্যি কথা বলতে কী, আমি আসলে ছোটবেলায় ফিরে যেতে চাই না। কারণ অনেক কষ্টে বড় হয়েছি। তবে ধানমন্ডি লেকে গিয়ে চটপটি-ফুসকা খাওয়া, নদীর ধারে বসা, বান্ধবীদের সঙ্গে গল্প করা খুব মিস করি। এখন চাইলেই এগুলো করতে পারি না। আমার কাছে মনে হয়- ইশ, ওই দিনগুলোতে যদি ফিরে যেতে পারতাম। তাহলে বান্ধবীদের অনেক ভালো ভালো খাওয়াতে পারতাম। হাহাহা।’
নিজের জীবনের অতীতকে ভুলে যেতে চান না বর্ষা। লুকিয়েও রাখতে চান না। তিনি মনে করেন দীর্ঘদিনে সংগ্রাম ও পরিশ্রমের পর আজকে তার যে অবস্থান তা হয়তো কারো জন্য প্রেরণা হতেও পারে। যদি তার জীবন একটি মানুষকেও প্রেরণা দেয়, স্বপ্ন দেখায় তবে সেটা হবে তার জন্য বিরাট প্রাপ্তি। হতাশাকে জয় করেই পৃথিবীতে বাঁচতে হয়।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ‘নেত্রী-দ্য লিডার’ সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বর্ষা। তুরস্কের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হচ্ছে এ ছবিটি।
এছাড়া মুক্তির অপেক্ষায় আছে তার সিনেমা ‘দিন-দ্য ডে’। ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে এটি। অভিনয়ের পাশপাশি সিনেমা দুটি প্রযোজনা করেছেন অনন্ত জলিল। বর্ষার বিপরীতে অভিনয়ও করেছেন তিনি।
এলএ/এমকেএইচ