ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

শ্রোতারা বিভোর ছিলেন জাকির হোসেনের তবলায়

প্রকাশিত: ১০:১৮ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৫

চতুর্থ দিন তো বটেই; পুরো উৎসবেরই অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন তিনি। সবাই কেবল দিন গুনেছেন কবে আসবে সোমবারের দিবাগত রাত। কবে তিনি আসবেন? কবে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে কান পেতে উপভোগ হবে সম্মোহনী তাল। অবশেষে তিনি এলেন। বাজালেন এবং জয় করে নিলেন।

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসেবর চতুর্থ রাতে সুরের পিয়াসীরা বিভোর হয়ে রইলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেনের তবলায়। শিল্পীর শৈল্পিক আঙুল চালনায় তবলায় বেজে উঠলো ডমরুর আওয়াজ, লাহোরী গৎ আর ত্রিতালের ত্রিকাল স্পর্শী ছন্দের দ্বন্দ। বৃষ্টির ধ্বনী, ট্রেনের শব্দ, মেঘের গর্জন, দুই বন্ধুর কথপোকথন, ঘোর দৌড়-আরো কতো কি!

শ্রোতাদের হৃদয়ে আরো একবার খোদাই করে দিয়ে গেলেন নিজের নামটি। তাই সবাই বেরিয়ে আসতে আসতে কেবল বলছিলেন ধন্য জীবন, ধন্যবাদ সংগীতের এই অনন্য আসরের আয়োজকদের।

নিজের পরিবেশনা শেষে ওস্তাদ জাকির হোসেনের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। মঞ্চে তার সাথে সারেঙ্গীতে ছিলেন সাবির খান।

এদিন মঞ্চে এসেছিলেন সংগীতের আরেক কিংবদন্তি শিবকুমার শর্মা। তার জাকির হোসেনের সাথে বাজানোর কথা থাকলেও শ্রোতাদের বাড়তি আনন্দ দিতে দুজনে আলাদা করে পরিবেশনা নিয়ে এসেছেন। শিবকুমার শর্মার সন্তুর মুগ্ধ করে গেছে উপস্থিতিদের।​ রাগ যোগ কোষে আলাপ, জোড় আলাপ ঝালা এবং রূপক ও তিনতালে কম্পোজিশন বাজিয়ে শোনান। শিল্পীকে তবলায় সহযোগিতা করেন পণ্ডিত ইয়োগেশ শামসী। তানপুরীতে ছিলেন দিলীপ কালে।

Shibkumar
এর আগে পাঁচ দিনব্যাপি বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের চতুর্থ দিনের আয়োজন শুরু হয় ৩০ নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে। শুরুতেই বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়। কালজয়ী এই শিল্পী গত বছর উৎসব চলাকালীন এ মঞ্চেই অকস্মাৎ মৃত্যুবরণ করেছিলেন। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৫ উৎসর্গ করা হয়েছে বিশিষ্ট এই চিত্রশিল্পীকে।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, ‘কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সুহৃদ ও আপনজন। তাঁর মৃত্যুতে এদেশের চিত্রকলা আন্দোলন এবং সংস্কৃতি ভুবনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে পূরণ হবার নয়।’

বক্তব্য শেষে কাইয়ুম চৌধুরী স্মরণে ৮ মিনিট দৈর্ঘ্যের প্রামাণ্যচিত্র ‘নিসর্গের আঁকিয়ে’ প্রদর্শিত হয়।

চতুর্থদিনের প্রথম পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে এসেছিলেন গুরু রাজা ও রাধা রেড্ডির কুচিপুডি নৃত্য। তারা গণপতি বন্দনা, শিবাতান্ডব, কৃষ্ণাকালিঙ্গা নর্তনাম এবং নটবর তরণী তরঙ্গম পরিবেশন করেন। রাজা ও রাধা রেড্ডির সহনৃত্যশিল্পী হিসেবে ছিলেন ভাবনা রেড্ডি, কৌশল্য ও ইয়ামিনি রেড্ডি। বাঁশিতে ছিলেন কিরণ কুমার, কর্ণাটকি কন্ঠসংগীতে লাবন্য সুন্দরম এবং মৃদঙ্গমে বান্না ভাস্কর রাও। পরিবেশনা শেষে শিল্পীদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন ইনাম আহমেদ চৌধুরী।

Ganapati
এরপর সংগীতবেত্তা আলিমুর রহমান খান শাস্ত্রীয় সংগীত বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। পরবর্তী পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন গণেশ ও কুমারেশ রাজাগোপালন। রাগ মায়া, মায়া মালব গৌল, সুগা সুগা মৃদঙ্গম তালম শ্রীরঞ্জনী রাগম এবং রাগম তালাম পল্লবী সুচরিত্র রাগম বাজিয়ে শোনান শিল্পীদ্বয়। তাদের মৃদঙ্গমে সহযোগিতা করেন আর শঙ্কর নারায়ণন এবং ঘটমে এস কৃষ্ণস্বামী। তানপুরায় ছিলেন উৎপল রায়। শিল্পীদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন শিল্পী মনিরুল ইসলাম।

Ganesh
ধারাবিাহিকতায় পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার সরোদ বাজিয়ে শোনান। তিনি রাগ হেমন্ত- এ আলাপ, জোড় আলাপ ঝালা এবং গৎ বাজান। পরে মাঝ খাম্বাজ রাগে ঠুমরি পরিবেশন করেন। তাকে তবলায় সহযোগিতা করেন পণ্ডিত শুভঙ্কর ব্যানার্জী এবং তানপুরীতে সুপ্রিয়া দাস। সাবেক প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জুল ইসলাম। 

Sarod
চতুর্থ দিনের শেষ পরিবেশনা ছিলো পণ্ডিত উল্লাস কশলকরের। তিনি রাগ কোমল ঋষভ আশাবরী ও ভৈরব বাহার পরিবেশন করেন। রাগ ভৈরবিতে ঠুমরি বাজিয়ে তিনি শেষ করেন পরিবেশনা। পণ্ডিত উল্লাস কশলকরকে তবলায় সহযোগিতা করেন পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকার, হারমোনিয়ামে  সুধীর নায়েক এবং তানপুরায় তালহা বিন আলী ও সামিহান কশলকর। শিল্পীকে উৎসব স্মারক তুলে দেন ড. সাফকাত হোসাইন খন্দকার।

Vairab
আজ, ১ ডিসেম্বর পঞ্চম ও শেষদিনের উৎসব শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। চলবে পরদিন ভোর ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত। এদিন উৎসবে অংশ নেবেন অনিমেষ বিজয় চৌধুরী ও তার দল (ধামার), বিদুষী আলারমেল ভাল্লি (ভরতনাট্যম), ইরশাদ খান (সুরবাহার), সামিহান কশলকর (খেয়াল), ওস্তাদ সুজাত খান (সেতার), ওস্তাদ রশিদ খান (খেয়াল), পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া (বাঁশি)।

এলএ