শিল্পীদের কাজ দরকার, ইফতারি-গরুর গোস্ত নয় : বাপ্পারাজ
ঢাকাই চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম বাপ্পারাজ। অভিনয়ে নিজের প্রতিভা ও মেধার বিকাশ ঘটিয়েছেন চলচ্চিত্রে। বাবা নায়করাজ রাজ্জাক পরিচালিত ১৯৮৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘চাপাডাঙার বউ’ ছবি দিয়ে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক। তিন দশকেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে বাপ্পারাজ অভিনয় করেন শতাধিক চলচ্চিত্রে।
নানা আমেজ, ইমেজ, স্বাদের গল্প ও চরিত্রে তাকে দেখেছেন দর্শক। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ত্রিভুজ প্রেমের ছবিতে স্যাক্রিফাইসিং চরিত্রগুলোতে বা ব্যর্থ প্রেমিকের চরিত্রে বাপ্পারাজ এই দেশের সিনেমায় একটি ব্র্যান্ড এবং দারুণ সাফল্যের উদাহরণ।
‘প্রেমের সমাধি’, ‘প্রেমগীত’, ‘হারানো প্রেম’, ‘ভুলোনা আমায়’, ‘বুক ভরা ভালোবাসা’, ‘ভালোবাসা কারে কয়’ ইত্যাদি চলচ্চিত্রগুলো বাপ্পারাজকে দিয়েছে অনন্য জনপ্রিয়তা।
আজকাল আর অভিনয়ে নিয়মিত নন। দীর্ঘদিন পর সর্বশেষ তিনি কাজ করেছেন ‘পোড়ামন-২’ সিনেমায়।
গতবছর পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বাপ্পারাজ৷ সেরে উঠেছেন সুচিকিৎসায়৷ আবারও করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে পৃথিবীতে। এমনি সময়ে বাপ্পারাজের দিনগুলো কেমন যাচ্ছে? এসব নিয়ে এবং সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র শিল্প নিয়ে গণমাধ্যমে মুখ খুলেছেন এ অভিনেতা৷ তিনি জানান, আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি। সবাই নিরাপদে আছি।'
মনের মতো গল্প আর নিজেকে প্রমাণ করা যায় এমন চরিত্র মেলে না বলে সিনেমার অভিনয় থেকে দূরে আছেন বলে জানান বাপ্পারাজ। তার মতে, 'অন্যান্য দেশে শিল্পীদের বয়স হয়ে গেলেও তাদের উপর বেস করে চরিত্র ঠিক করা হয়। আমাদের এখানে ঐ ট্রেন্ডটা নেই। গড়পড়তা গল্প লেখা হয়। আমি ভিন্নধর্মী কিছুর অপেক্ষা করছি৷ পেলে করবো।'
সাম্প্রতিক সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাপ্পারাজ বলেন, 'ইন্ডাস্ট্রি আর কি! আমাদের সব কিছুই সমিতি নির্ভর হয়ে গেছে। সমিতি সব কিছুর সিদ্ধান্ত নিবে। এটা ঠিক না। এসব করে সংগঠনগুলো আমাদেরকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। কিছুদিন আগে আমাদের একটা পরিবার গঠন হলো, হেন হলো তেন হলো। পরে কিন্তু কিছুই হলো না। তারপর শিল্পী সমিতি নিয়ে আলাদা একটা শিল্পী ঐক্যজোট হলো। ঐটাও টিকলো না। ভাগ হয়ে গেলো সবাই। পরিবার তো আমরা সবাই ছিলামই। নতুন করে পরিবার গঠনের দরকার ছিল না। মাঝখান দিয়ে তৃতীয় পক্ষ ফায়দা লুটে চলে গেছে। আমরা আমাদের জায়গাতেই পড়ে আছি।
চলচ্চিত্রে মূল সমস্যা হলো সবাই চেয়ার চায়৷ চায় নেতা হতে। এর জন্য মারামারিও হয়। অযোগ্য লোকজন পজিশন নিয়ে বসে আছে, তাই এই দুরাবস্থা৷ চলচ্চিত্র নিয়ে মাথাব্যথা নেই। নেতা কয় বালতি সিন্নি বিতরণ করলো, গরু জবাই দিল কিনা, ইফতারি দিল কিনা এগুলোই হলো খবর৷ সিনেমার নিউজ বলতে এগুলোই দেখি৷ আমাদের ইফতারি দরকার নাই, কোরবানি ঈদে গরুর গোস্তের তো দরকার নাই। শিল্পীদের দরকার কাজ, সিনেমা। কাজ থাকলে সবাই গোস্ত, উৎসব সব আপনা থেকেই পেতো৷
একদিকে সবাই বেকার। অন্যদিকে দান-খয়রাতের মহাউৎসব চলছে৷ যতো না দান তারচেয়ে তিনগুণ চলছে প্রচার৷ সিনেমায় এমন দিন আসবে ভাবনাতেও ছিলো না৷
অথচ আব্বাদের সময় দেখতাম শিল্পীরা নিজেরা টাকা তুলে দান করতেন। সেসব কেউ জানতোও না৷ প্রচারও হতো না৷ তখনো ঈদ হতো, খেলা হতো, উৎসব হতো শিল্পীদের৷ স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলতেন৷ আমাদের সময়ে আমরাও করতাম। এখন নিজেদেরকে এমন অবস্থায় নিয়ে গেছি যে সারা দেশের মানুষের কাছে আমরাই দুঃস্থ, আমাদেরকেই মানুষজন ডোনেট করছে। কষ্ট হয়৷'
দেশে গুণিজনরা যথাযথ কদর পান না। বাবা রাজ্জাকের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে এফডিসি বা রাষ্ট্রের নিরবতা প্রসঙ্গে বাপ্পারাজ বলেন, 'অনেকে বলেন আব্বার স্মৃতি রক্ষার্থে কি করছি। আমার বাবার জন্য সন্তান হিসেবে আমি অনেক কিছুই করতে পারি, করি৷ কিন্তু রাষ্ট্র বা ইন্ডাস্ট্রি কি করলো সেটা হলো আসল৷ নায়করাজ আমার কাছে ভাব, শুধু আমার আব্বা না, দেশে অনেক গুণী লোকজন ছিলেন, তাদের চলে যাওয়ার পর ওখানেই সব শেষ। তারপর কিছু হয়নি। অথচ দেশের জন্য, ইন্ডাস্ট্রির জন্য তারা অনেক বড় অবদান রেখেছিলেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আব্বা মারা যাবার পর অনেক কিছু নতুন করে দেখা হয়েছে৷ শেখা হয়েছে৷ বলা চলে একটা অদেখা ভুবন আবিষ্কার করেছি৷ যাদেরকে আপন বা কাছের ভাবতাম দেখলাম যে আসলে ওসব ছিলো ব্যবসায়িক সম্পর্ক৷ গুটিকয়েক সহকর্মী আছেন যাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়৷ এছাড়া কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করতে ইচ্ছে করে না৷
এজন্য এফডিসিতেও যাই না৷ যদি তেমন কোনো কাজ পাই করবো৷ নইলে যেভাবে আছি তাই থাকবো৷'
এলএ/এমএস