আমরা কেউই সালমানের অভাব পূরণ করতে পারিনি : রিয়াজ
অকাল প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান এই অভিনেতা। মৃত্যুর ২৪ বছর পেরিয়ে এখনো ভক্তদের অন্তরে চিরসবুজ হয়ে আছেন এ স্বপ্নের নায়ক। সালমান শাহ আজও বেঁচে আছেন তার কাজের মাধ্যমে।
সালমানের প্রস্থান বেদনা জাগিয়েছে তার সহশিল্পীদের মনেও। মৃত্যুদিন কিংবা জন্মদিন ফিরে এলে তাকে ঘিরে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে। ভাবনায় ভর করে মন খারাপিরা! চিত্রনায়ক রিয়াজের বেলাতেও তাই। সুযোগ হয়েছিলো সালমানের সঙ্গে একটি ছবিতে কাজ করার। সেটাকে ক্যারিয়ারে দারুণ একটি প্রাপ্তি বলে মনে করেন তিনি।
সালমান শাহকে মনে করে ভারাক্রান্ত কণ্ঠ নিয়ে জাগো নিউজকে রিয়াজ বলেন, ‘আসলে সালমান এমন একজন মানুষ ছিলো যাকে দুই যুগ পর এসেও সবাই মিস করি। এটা একটা দারুণ ব্যাপার কিন্তু। সালমানের সঙ্গে অনেক স্মৃতি আছে। যতদিন যাচ্ছে স্মৃতিগুলো ততো গভীর হচ্ছে। মনে হচ্ছে সে ফিরে ফিরে আসে।
সালমান পরবর্তী সময়ে আমি কাজ করেছি। কিন্তু আমি নিজে কখনোই বা কেউ দাবি করতে পারবে না সালমানের অভাব আমরা পূরণ করতে পেরেছি। কেউই আসলে কারো জায়গা নিতে পারে না বা বিকল্প হতে পারে না। কিন্তু সালমানের যে ক্রেজটা ছিলো সেটি সে না থাকার ২৪ বছর পরও বহমান। এটা কিন্তু অস্বাভাবিক একটি গুণ। সালমানের মতো অভিনেতার জন্ম খুব রেয়ার। জাত অভিনেতা। সব শ্রেণির দর্শককে সে জয় করতে পেরেছিলো। তার মধ্যে কি যেন একটা ছিলো যা দর্শককে টানতো। সহশিল্পী হিসেবেও তাকে দেখতাম অবাক হয়ে। দুই যুগেও তার মতো কেউ হয়নি, আমার ধারণা আগামী দুই যুগেও হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি রিসেন্টলি করোনার আগে সিলেট গিয়েছিলাম। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল শাহজালালের মাজারে যাওয়ার আর ওখানে গিয়ে আমি সালমানের কবরের সামনে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। কেমন যেন একটা অনুভূতি হলো মনের ভেতর (দীর্ঘশ্বাস)। আমার সাথে দুটো সিনেমা ওর হয়েছিলো। একটি সম্পূর্ণ হয়েছিল ‘প্রিয়জন’। আরেকটি শেষ হওয়ার আগেই ও চলে যায়। আমি তখন নতুন ছিলাম। আমার কাছে সবসময় মনে হতো যে সালমান বেঁচে থাকতো, ওর সঙ্গে যদি আরও একবার স্ক্রিন শেয়ার করতে পারতাম! এমন একটি পার্সোনালিটি সম্পন্ন ব্যক্তির সঙ্গে আর দেখা হবে না, এটা ভাবলেও মন খারাপ হয় খুব।’
সালমানের স্মৃতিচারণ করে রিয়াজ জানান, ‘অনেক স্মৃতিই রয়েছে। আবার অনেক স্মৃতি শেয়ার করতে পারবো না। আসলে এমন অনেক স্মৃতি রয়েছে যেটি আমার ভেতরে থেকে যাবে চিরকাল। কারণ সব স্মৃতি বলা যায় না। তবে ছোট একটা ঘটনা বলি। আমি তখন গাজীপুরের হোতাপাড়ায় শুটিং করছি। তখন আমি নতুন। নিজের গাড়ি ছিলো না। সেসময়ে শুটিং ইউনিটের বাসে করে যাতায়াত করতাম।
তো সেখানে শুটিং করছিলাম। সালমান শাহও একটি শুটিংয়ের জন্য ওখানে ছিলেন। সঙ্গে তার স্ত্রী সামিরাও। শুটিং শেষে দুজনই ফিরছিলাম। ও জানলো যে আমি শুটিং ইউনিউটের বাসে যাবো। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, ‘তুমি একটা হিরো মানুষ, বাসে যাবা? আমার গাড়িতে ওঠো’। হোতাপাড়া থেকে ঢাকা পর্যন্ত একসাথে আসি। এই একটি জার্নি তার সঙ্গে আমার। প্রায়ই মনে হয় এটা আমার জন্য বেস্ট জার্নি হয়ে আছে। গাড়ির ভেতরে সালমান খুব মজা করছিলো, দুষ্টমি করছিলো। আমি পেছনে বসা ছিলাম। ওর স্পিড দেখে ভয় পেয়ে কুঁকড়ে ছিলাম। এটা দেখে ও আর ওর স্ত্রী আরও মজা করছিলো। সেই সময়টায় দুজনে বেশ অনেক গল্পই করলাম। সিনেমা নিয়েও অনেক কথা হচ্ছিলো।
‘প্রিয়জন’ ছবির জন্য কক্সবাজারে শুটিং করেছিলাম। সেখানেও মজার গল্প আছে। আমি, সালমান ও শিল্পী ছিলাম। দেখলাম সালমান দুর্দান্ত অভিনয় করছে। শুটিং শেষ হলেই মজা আর দুষ্টামি। সবার সঙ্গে সবসময় হাসিখুশি মানুষ। তার এভাবে মৃত্যু মেনে নেয়া যায়নি, যাবেও না। যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক সালমান শাহ, এটাই দোয়া করি।’
এলএ/এমকেএইচ