বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে সরানো হলো মান্নার সিনেমা
অনলাইন মাধ্যম ইউটিউবে প্রকাশ করা একটি বাংলাদেশি সিনেমার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে। আদালতের আদেশ অমান্য করে ইতিহাস বিকৃত করেছেন বলে প্রযোজক-পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, ইউটিউব চ্যানেল এসআইএস মিডিয়ার এম. এন ইস্পাহানি ও লাভা মুভিজের মো. জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক ও নাট্যনির্মাতা মাকসুদুল হক ইমু।
অভিযুক্ত সেই ছবির নাম ‘বীর সৈনিক’। এটি মুক্তি পেয়েছে ২০০৩ সালে। ছবিতে অভিনয় করেছেন মান্না, মৌসুমী ও হুমায়ুন ফরীদি। ছবির পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। এটির ইউটিউব কন্টেন্ট স্বত্বাধিকারী এসআইএস মিডিয়ার কর্ণধার এম এন ইস্পাহানি। যিনি চিত্রপরিচালক ইস্পাহানি আরিফ জাহান নামে খ্যাত। এই দুই অভিযুক্তসহ লাভা মুভিজের মো. জাহাঙ্গীরকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন অভিযোগকারী ইমু। তার পক্ষে ৩ সেপ্টেম্বর নোটিশ পাঠিয়েছেন আইনজীবী মোস্তফা কামাল মুরাদ।
ইমুর অভিযোগ, ‘প্রয়াত নায়ক মান্না অভিনীত ‘বীর সৈনিক’ নামের এ ছবিটিতে ইচ্ছাকৃত ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। ছবিতে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মেজর জিয়াউর রহমানের নাম ও ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ উপেক্ষা করে হঠাৎ ২৬ মার্চে জিয়াউর রহমানের ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ২০০৯ সালের ২১ জুন হাইকোর্ট এক রায়ের মাধ্যমে বিতির্কত এই বিষয়টির সমাধান করে দিয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে- ‘জিয়া নন, বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষক’।
সেই সঙ্গে আদালত জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক উপস্থাপন করে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দলিলপত্র’-এর তৃতীয় খণ্ড বাতিল ঘোষণা করেছেন। যেহেতু ছবিটি ২০০৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল, তখন বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে আদালত যে রায় দিয়েছেন, সেটিকে অমান্য করে ছবির সিস মিডিয়া (SIS Media) নামের ইউটিউব চ্যানেলে বিকৃত ইতিহাসের ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে। এ জন্যই ছবিটির সঙ্গে জড়িত প্রধান তিনজনকে আদালতের আদেশ অমান্য করায় আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ও ৭ মার্চের ইতিহাস বিকৃতির সঙ্গেও জড়িত তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাদেরকে বিষয়টির সমাধানের জন্য বারবার বলেছি। তা সত্ত্বেও তারা সেটি সমাধান করেননি। কন্টেন্ট মালিক এমএন ইস্পাহানি ছবিটি ইউটিউব থেকে না সরানোর কারণে বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। ছবিটির নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার প্রতি সম্মান রেখেই আমি চাইছি ছবিতে ভুল ইতিহাস যাই দেখানো হয়েছে সেটা ঠিক করা হোক।’
এদিকে এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে সিস মিডিয়ার কর্ণধার এমএন ইস্পাহানি আরিফ জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কিছু গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘ছবিটি আপলোড হওয়ার আগে তাতে কী ছিল আমি দেখিনি। আমি নিজে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লোক। আমি শুধু ছবিটির স্বত্ব কিনেছি। জানতাম না এখানে বিতর্কিত বিষয় আছে। আইনি নোটিশ পাওয়ার পর আমরা সেটি ইউটিউব থেকে সিরিয়ে দিয়েছি। প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে।’
প্রসঙ্গত, গতকাল বিকেল থেকে এখন পর্যন্ত ইউটিউব চ্যানেলে ‘বীর সৈনিক’ ছবিটি আর দেখা যায়নি।
এলএ/জেআইএম