অনুদানের সিনেমা ‘হৃদিতা’ নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ
জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ‘হৃদিতা’ নিয়ে। অভিযোগটি করেছেন যাদুকাঠি মিডিয়ার কর্ণধার চলচ্চিত্র প্রযোজক মো. মিজানুর রহমান। তার দাবি তিনি যে নির্মাতাদ্বয়কে তার প্রযোজনায় হৃদিতা গল্প নিয়ে ছবি বানানোর জন্য চুক্তি করেছিলেন সেই দুই পরিচালক চুক্তি ভঙ্গ করেই নিজেরাই এই গল্প দিয়ে অন্য প্রযোজনায় ছবি বানাচ্ছেন।
‘হৃদিতা’ মূলত কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের লেখা একটি উপন্যাস। এ উপন্যাস নিয়েই নির্মিত হবে সরকারি অনুদানের ‘হৃদিতা’ ছবি। কিন্তু প্রযোজক মিজানুর রহমানের দাবি, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি এ উপন্যাস থেকে ছবি নির্মাণের জন্য লেখক আনিসুল হকের লিখিত অনুমতি নেন তিনি। লেখক উপন্যাসটি নিয়ে ছবি বানানোর জন্য প্রযোজকের অফিসিয়াল প্যাডে লিখিত অনুমতি দেন।
সেসময় ছবিটির পরিচালনা করার জন্য প্রযোজক দ্বৈত পরিচালক ইস্পাহানি আরিফ জাহানকে চূড়ান্ত করেন। আনিসুল হকের লিখিত অনুমতির পর এ উপন্যাস নিয়ে নির্মিতব্য ছবির মহরতও করা হয়। ছবির নাম রাখা হয়েছিল ‘ড্রিমগার্ল’। যেখানে নায়ক হিসেবে রোশন এবং নায়িকা হিসেবে অধরা খানের অভিনয় করার কথা চূড়ান্ত করা হয়।
এদিকে গত ২৫ জুন সরকারি অনুদানের গেজেট প্রকাশের পর দেখা যায় আনিসুল হকের ‘হৃদিতা’ উপন্যাস নিয়ে একই নামে ছবির নির্মাণের জন্য অনুদান দেয়া হয়েছে, যেখানে প্রযোজক হিসেবে এমএন ইস্পাহানি ও পরিচালক হিসেবে ইস্পাহানি আরিফ জাহানের নাম উলেখ রয়েছে! বিষয়টি নজরে এলে যাদুকাঠি মিডিয়ার কর্ণধার প্রযোজক মিজানুর রহমান বেশ ক্ষুদ্ধ হন।
তিনি আজ বুধবার (১৯ আগস্ট) জাগো নিউজকে বলেন, ‘আনিসুল হক সাহেবের লিখিত অনুমতি নিয়েছি আমি। তিনি আমার অফিসিয়াল প্যাডে নিজের হাতের লেখায় অনুমতি দিয়েছেন আমাকে। তারিখসহ তার স্বাক্ষরও আছে। সেখানে কীভাবে অন্য কেউ এ গল্প নিয়ে ছবি নির্মাণের জন্য অনুদান পেতে আবেদন করে? নিশ্চয়ই লেখক অন্য কাউকে তার গল্প নিয়ে ছবি বানানোর অনুমতি দেননি। আমিও সরকারি গেজেটে উলেখিত পরিচালক কিংবা প্রযোজককে অনুদানের জন্য জমা দেয়ার অনুমতি দেইনি।
সবচেয়ে বড় কথা যারা জালিয়াতি করেছেন তাদেরকেই আমি আমার ছবিটি নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তাদের পরামর্শেই বেশ জমকালো আয়োজনে এফডিসিতে এ ছবির মহরতও আমি করেছি। দেশের অসংখ্য বিনোদন সাংবাদিক সেখানে সেদিন উপস্থিত ছিলেন এবং প্রায় সব গণমাধ্যমেই সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। তারপরও এমন কাজটি কেন করলেন তারা?’
আর্থিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে প্রযোজক মিজানুর রহমান বলেন, ‘হৃদিতা গল্পের ছবিটির জন্য আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। দুই পরিচালকের পেছনে টাকা গেছে। নায়ক নায়িকার সাইনিং মানি দিয়েছি। শুটিং প্রস্তুতি নেয়ার জন্যও আমার অনেক অর্থ ব্যয় হয়েছে। সুতরাং অন্যায়ভাবে জালিয়াতি করে একটি গল্প প্রযোজকের নাম বদলে অনুদানের জন্য জমা দেয়া আইনের পরিপন্থি। বিষয়টি আমি অবশ্যই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে লিখিত আকারে জানাব। এ নিয়ে আমি আইনি ব্যবস্থাও নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘হৃদিতা নিয়ে যেহেতু আমি লেখক থেকে ছবি বানানোর অনুমতি নিয়েছি তাই আমিই এটি নির্মাণ করব। শিগগিরই এ নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে ‘হৃদিতা’র লেখক আনিসুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একজন প্রযোজককে গল্পটি থেকে ছবিটি নির্মাণের অনুমতি দিয়েছি। দ্বিতীয়বার কাউকে অনুমতি দেইনি। আমি জেনেছি ছবিটি অনুদান পেয়েছে। আমি মনে করেছি তিনিই অনুদান পেয়েছেন যাকে আমি অনুমতি দিয়েছি। নতুন করে কেউ ছবিটির প্রযোজক হলে সেটা আমার জানা নেই। আমার কাছে যদি আসে তাহলে আমি যাকে শুরুতে অনুমতি দিয়েছে সেই পাবে।
যার অফিসিয়াল প্যাডে অনুমতি দিয়েছি সেই প্রযোজক যদি ছবি তৈরির মালিকানা নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেন তাহলে সেখানেও সমর্থন থাকবে। কারণ আমি তাকেই অনুমতি দিয়েছি আমার উপন্যাস নিয়ে ছবি নির্মাণ করার।’
নতুন করে সরকারি অনুদান পাওয়ার পর ইস্পাহানি আরিফ জাহান গেল ২৪ জুলাই ‘হৃদিতা’ সিনেমার জন্য এবিএম সুমন ও পূজা চেরীকে জুটিবদ্ধ করে তাদের নাম ঘোষণা করেন। তবে প্রযোজক মিজানুর রহমানের অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে আজ এ প্রতিবেদক মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে পরিচালকদ্বয় ইস্পাহানি আরিফ জাহানের সাড়া মেলেনি।
এলএ/জেআইএম