মৃত্যুশয্যায় ইত্যাদির গায়ক আকবর, প্রধানমন্ত্রীকে পাশে চায় পরিবার
দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ দিয়ে রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া সেই গায়ক আকবর ভালো নেই। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ডায়াবেটিস, কিডনির অসুখসহ বেশ কিছু জটিল রোগে আক্রান্ত। গেল দুই সপ্তাহ ধরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে।
অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আজ সোমবার (১৭ আগস্ট) সকালে আকবরকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। আকবরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা শিমি আজ সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তার ভাষ্যমতে, মৃত্যুশয্যায় রয়েছেন গায়ক আকবর।
তিনি বলেন, ‘অসুখের তো শেষ নেই। এই ভালো থাকে এই মন্দ। ঈদের দিন থেকেই অসুস্থতা বেড়েছে। খাওয়া দাওয়া বন্ধ। নড়তে পারেন না। কোমর থেকে শরীরের নিচ পর্যন্ত অবশ হয়ে আছে। হাত পা অবশ। আজ হাসপাতালে এনেছি। ডাক্তাররা অনেকগুলো টেস্ট করিয়েছেন। রাত ৯টায় রিপোর্ট পাবো। তখন বলা যাবে আসলে কি সমস্যায় এমন হয়েছে।’
শিমি আরও বলেন, ‘টাকা পয়সা নিয়ে খুবই বাজে অবস্থায় রয়েছি। আয় উপার্জনের তো একমাত্র তিনিই ছিলেন। কয়েক বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছেন। সঞ্চয় তো কবেই শেষ। অনেকে সাহায্য করেন, হানিফ সংকেত স্যার বিভিন্ন সময় পাশে দাঁড়ান; এভাবেই টিকে আছি। উনার চিকিৎসার জন্য এখন জরুরি ভিত্তিতে অনেক টাকা প্রয়োজন।’
সেই টাকার যোগান কীভাবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত বছর আমার স্বামী যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন সেই খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি ২ লাখ টাকা নগদ ও ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দান করেছিলেন। ২ লাখ টাকা তো সেই সময়ই খরচ হয়েছে চিকিৎসায়। এখন সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে একটা ব্যবস্থা করবে।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সঞ্চয়পত্রের টাকাটা একসঙ্গে পাওয়া গেলে দ্রুতই উনাকে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করাবো। উনার আসলে উন্নত চিকিৎসা দরকার।’
‘নাট্য পরিচালক জি এম সৈকত ভাইয়ের মাধ্যমেই তো প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলাম। উনার সঙ্গে কথা হয়েছে। সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেতে আবেদন করেছি। আশা করছি দ্রুতই এ বিষয়ে সাড়া পাবো’- সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সে প্রসঙ্গে বলেন শিমি।
প্রসঙ্গত, পেশায় ছিলেন রিকশাচালক। রাস্তায় রিকশায় প্যাডেল মারতেন আর গেয়ে বেড়াতেন নানারকম গান। তার গায়কীতে মুগ্ধ হতেন যাত্রী, পথচারীরা। তার সুরেলা কণ্ঠের সুনাম ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। ডাক পেলেন তিনি দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে।
হানিফ সংকেতের হাত ধরে উঠে এলেন তিনি ‘এলাম, গাইলাম, জয় করলাম’ স্টাইলে। নন্দিত সংগীতশিল্পী কিশোর কুমারের গাওয়া ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে’ গানটি ইত্যাদির মঞ্চে গেয়ে ১৫ বছর আগে রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যাওয়া সেই গায়কের নাম আকবর।
তারপর ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে’ গানটি প্রকাশ হয় ইত্যাদিতে। সেটিও তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করলে নিয়মিত শিল্পী বনে যান আকবর। তার জীবন যাপনেও আসে পরিবর্তন। তিনি গাইতে থাকেন দেশে-বিদেশের মঞ্চে।
হঠাৎ করেই কিডনির অসুখে আক্রান্ত হন আকবর। দেখা দেয় ডায়াবেটিসও। ছন্দপতন ঘটে জীবনের। গান গাইতে পারেন না। থেমে যায় সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী মানুষটির অর্থ যোগানের চাকা। ঢাকার মিরপুরে হারম্যান মাইনর স্কুলের পাশে স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক কন্যাকে নিয়ে থাকেন আকবর।
তার অসুস্থতার পর করুণ চারদিকে নেমে আসে অন্ধকার। সেই দিনগুলোতে ত্রাতা হয়ে আকবরের পাশে দাঁড়ান তার আবিষ্কারক হানিফ সংকেত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেও ২০ লাখ টাকার সহায়তা পান আকবর।
এরপর চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে নতুন করে শুরু করেছিলেন সবকিছু। কিন্তু হায়, জীবন বেরসিক! এক বছরের ব্যবধানে আবারও পুরনো অসুখের আক্রমণের শিকার গায়ক আকবর। এতদিন বাসাতেই শুয়ে বসে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু অবস্থার অবনতি ঘটায় আজ সোমবার (১৭ আগস্ট) তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ অবস্থায় স্বামীর জন্য দোয়া চেয়েছেন আকবরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা শিমি।
এলএ/পিআর