অলিকের হাত ধরে ফিরছে রিয়াজ-পূর্ণিমা জুটি?
নব্বই দশকের শেষের দিকে জুটি হিসেবে ঢাকাই সিনেমায় যাত্রা শুরু করে রিয়াজ-পূর্ণিমা। জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘এ জীবন তোমার আমার’ ছবি দিয়ে প্রথমবার জুটি বাঁধেন তারা। এরপর দুজনকে দেখা গেছে ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’, ‘লাল দরিয়া’, ‘মায়ের সম্মান’, ‘খবরদার’, ‘জামাই শ্বশুর’সহ আরও অনেক সিনেমায়।
তবে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তারা পর্দায় নেই, একসঙ্গে। এ নিয়ে তাদের ভক্তদের আক্ষেপ শোনা যায় প্রায়ই। এদিকে দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো না বলে তারা একসঙ্গে সিনেমা করেন না এমন গুঞ্জনও উড়ে বেড়ায় ঢালিউডের বাতাসে। তবে রিয়াজ ও পূর্ণিমা দুজনই বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন তাদের মধ্যে পেশাদার সম্পর্ক বেশ ভালো। সময়োপযোগী পছন্দমতো গল্প পেলে আবারও জুটি হয়ে তারা সিনেমায় অভিনয় করবেন।
এবার কী সেই গল্পের দেখা পেতে চলেছে এই জুটি? সরকারি অনুদান পাওয়া এস এ হক অলিকের ছবিটি দিয়েই কী আবারও প্রত্যাবর্তন হবে সুপারহিট ছবি ‘হৃদয়ের কথা’ জুটির? নির্মাতা অলিকের সঙ্গে তার নতুন ছবি প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রশ্নগুলো চলে আসে নিজের অজান্তেই।
জবাবে এ পরিচালক বলেন, ‘আমার ছবিটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পের। এখানে সত্তরের পরের সময়টাকে তুলে ধরা হবে। সেদিক থেকে রিয়াজ ও পূর্ণিমাকে নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে আমার। এই দুজন শিল্পী আমার খুব পছন্দের। তাদের সঙ্গে সফল কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে আমার। চিত্রনাট্য এখনো শেষ হয়নি। সব গুছিয়ে তাদের কাছে যাবো। আমার প্রথম সিনেমা ‘হৃদয়ের কথা’ সুপারহিট। এরপর ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’ও হিট। ছবি দুটিতে রিয়াজ-পূর্ণিমা ছিলেন। নতুন ছবিতেও যদি এই জুটিকে পাই তবে তা বেশ আনন্দের হবে।’
‘অভিনয় নিয়ে এখনও কারোর সঙ্গে কথা হয়নি। ঈদের আগে এ বিষয়ে চূড়ান্ত তথ্য দিতে পারবো। গল্প ও চরিত্রের সঙ্গে অভিনয়ে পারফেক্ট হবেন এমন শিল্পীদেরকেই চূড়ান্ত করবো’- যোগ করেন এস এ হক অলিক।
এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চিত্রনায়ক রিয়াজ এস এ হক অলিককে সরকারি অনুদান পাওয়ায় অভিনন্দন জানান। এ নায়ক বলেন, ‘অলিক তার সিনেমার জন্য সরকারি অনুদান পেয়েছে, এটা অনেক বড় একটা সুসংবাদ। তাকে আমি অভিনন্দন জানাই। আমি মনে করি এটা ওর প্রাপ্য।’
রিয়াজ যোগ করে বলেন, ‘ছবির কাস্টিং কি হবে না হবে এটা অলিক ভালো বলতে পারবে। গল্প ও চরিত্রানুযায়ী যাকে নেওয়া উচিত সেটাই সে করবে। এটা তার উপর নির্ভর করে। আমার কথা বলতে গেলে বলবো অলিকের সঙ্গে কাজের খুব ভালো অভিজ্ঞতা আছে আমার। আমি তার নাটকেও অভিনয় করেছি। তার নতুন ছবিতে কাজ করার সুযোগ হলে অবশ্যই ভালো লাগবে। এখানে আসলে পরিচালক-নায়ক-নায়িকার জুটি কামব্যাক করবে কী না তারচেয়ে বড় বিষয় হলো ছবির গল্প কী ডিমান্ড করছে। পরিচালক কী ভাবছেন।
হ্যাঁ, রিয়াজ-পূর্ণিমা একটা সময় ভালো জুটি ছিলো। দর্শকরা এ জুটিকে পছন্দ করেছে। এখনও হয়তো দর্শক মনে মনে চায় জুটিটিকে। এজন্য আলোচনা তৈরি হয়। কিন্তু নতুন করে আবার আমাদের জুটি হওয়া নির্ভর করে পরিচালকদের উপর, গল্প ও চরিত্রের চাহিদার উপর। সুযোগ পেলে অবশ্যই পূর্ণিমার সঙ্গে কাজ করবো।’
অলিককে নিয়ে রিয়াজ বলেন, ‘সে রুচিশীল একজন মানুষ ও নির্মাতা। অলিক প্রথম সিনেমা নির্মাণ করে ‘হৃদয়ের কথা’, যেটি সুপারহিট। এটা ছিলো আমার প্রথম প্রযোজিত সিনেমা। ওর মধ্যে সেরকম গুণাবলী ছিলো বলেই আমার জীবনের প্রথম সিনেমাটা তাকে দিয়ে বানিয়েছি। তার গুণের প্রমাণ সে রেখেছে প্রথম সিনেমাতেই। অশ্লীলতার চরম যুগে বাঘা বাঘা পরিচালকদের ছবির সঙ্গে ‘হৃদয়ের কথা’ নির্মাণ করে সে বাজিমাত করে দিয়েছিলো।
বিশেষ করে বাংলাদেশের সিনেমার গানে বিরাট এক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ‘হৃদয়ের কথা’। দর্শককে সিনেমার গানের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিলো এ ছবি। তখন ছবিটির গানের সিডি বাজতো ঘরে ঘরে, হাটে-ঘাটে এমনকী গাড়িতে গাড়িতে। সাইকেল হোন্ডার হর্ন ছিলো হাবিব ওয়াহিদের কণ্ঠে ‘ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু’ গানটি। এটা একটা বিপ্লব, আমি বলবো। অলিক সেই বিপ্লব করতে পেরেছে। তার নির্মাণ নিয়ে তাই সবসময়ই আমি ইতিবাচক।’
তবে অলিকের নতুন ছবি প্রসঙ্গে পূর্ণিমার অভিনয় করার ইচ্ছে বা আগ্রহের কথা জানতে গিয়ে নায়িকার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ছবি নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদানে পেয়েছে অলিকের নতুন সিনেমা ‘যোদ্ধা’। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ সিনেমাটির গল্প লিখেছেন ইমদাদুল হক মিলন এবং চিত্রনাট্য করছেন এস এ হক অলিক নিজেই। ছবিটি নির্মাণের জন্য মুক্তিযুদ্ধ শাখায় ৫০ লাখ টাকা অনুদান পাচ্ছেন এ নির্মাতা। পাশাপাশি তিনি নিজেও এতে প্রযোজনা করবেন। লিখবেন ছবির গানগুলোও।
এলএ/এমকেএইচ