ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

শ্রদ্ধাঞ্জলি : স্মৃতিতে অম্লান মান্না দে

প্রকাশিত: ০৯:৪২ এএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৫

দেখতে দেখতে দুই বছর পার হয়ে গেল কালজয়ী কণ্ঠশিল্পী মান্না দে পৃথিবীতে নেই। কিন্তু তার অনবদ্য কর্ম জীবন, তার অমর সুর-কণ্ঠে তিনি অমলিন হয়ে আছেন বাংলা গানের শ্রোতাদের অন্তরে অন্তরে; রবেনও চিরকাল।

আজ শনিবার ২৪ অক্টোবর ‘কফি হাউজ’ খ্যাত এই কিংবদন্তি গায়কের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর ব্যাঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মান্না দে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন।

মান্না দে’র স্মরণে নানা রকম আয়োজন করেছে পশ্চিম বাংলার সরকার ও শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা। তাছাড়া বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তার ভক্তরাও এদিন তাকে স্মরণ করছেন গানে গানে। তারই ছোঁয়া দেখা গেছে বাংলাদেশিদের সোশাল মিডিয়াতেও। অনেকেই মান্না দে’র নানা গান ও স্মৃতি রোমন্থন করে শিল্পীর আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।

মান্না দে’র জন্ম ১৯১৯ সালের ১ মে কলকাতায়। তার আসল নাম প্রবোধ চন্দ্র। পড়ালেখা শুরু হয় ‘ইন্দু বাবুর পাঠশালা’ নামের একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। কাকা কৃষ্ণ চন্দ্র দে এবং ওস্তাদ দবির খানের কাছ থেকে গানের হাতেখড়ি হয় মান্না দে’র।

শিল্পী হয়ে উঠার তাগিদ নিয়ে ১৯৪২ সালে কাকা কৃষ্ণ চন্দ্র দের সঙ্গে মুম্বাই পাড়ি জমান। সেখানে শুরুতে কৃষ্ণ চন্দ্র দের অধীনে সহকারী হিসেবে এবং তারপর শচীন দেব বর্মণের (এসডি বর্মণ) অধীনে কাজ করেন। পরে তিনি অনেক স্বনামধন্য গীতিকারের সান্নিধ্যে আসেন এবং তারপর স্বাধীনভাবে নিজেই কাজ করতে শুরু করেন। এ সময় বিভিন্ন হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্য সংগীত পরিচালনার পাশাপাশি ওস্তাদ আমান আলী খান এবং ওস্তাদ আবদুল রহমান খানের কাছ থেকে হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতে তামিল নেন মান্না দে। ধীরে ধীরে প্রবেশ করেন বাংলা ছবির ভুবনে। আর সেখানে তিনি অল্প দিনেই হয়ে উঠেন প্লে-ব্যাক সম্রাট। ১৯৫০ থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্রে দারুণ জনপ্রিয়তা পান তিনি। সংগীত জীবনে তিনি সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করার গৌবর মান্না দে’র।

১৯৫৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দক্ষিণাঞ্চলের কেরালার মেয়ে সুলোচনা কুমারনকে বিয়ে করেন মান্না দে। তাদের সংসারে শুরোমা (১৯৫৬) ও সুমিতা (১৯৫৮) নামে দুই কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেন। ২০১২ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সুলোচনা।

২০০৫ সালে বাংলা ভাষায় তার আত্মজীবনী ‘জীবনের জলসা ঘরে’ আনন্দ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। পরে এটি ইংরেজিতে ‘মেমরিজ কাম এলাইভ’, হিন্দিতে ‘ইয়াদেন জি ওথি’ এবং মারাঠী ভাষায় ‘জীবনের জলসা ঘরে’ নামে ভাষান্তর হয়। মান্না দে’র জীবনী নিয়ে ‘জীবনের জলসাঘরে’ নামে একটি তথ্যচিত্রও মুক্তি পায় ২০০৮ সালে। মান্না দে সংগীত একাডেমি তার সম্পূর্ণ আর্কাইভ বিকশিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে। প্রখ্যাত রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় মান্না দে’র সংগীত সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।

দীর্ঘ প্রায় ষাট বছরের সংগীত জীবনে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’, ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং ‘দাদা সাহেব ফালকে’ খেতাবসহ অসংখ্য খেতাব অর্জন করেন তিনি। এ ছাড়া ২০০৪ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও ২০০৮ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ডি লিট সম্মাননা লাভ করেন।

মান্না দে’র গাওয়া জনপ্রিয় বাংলা গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- কফি হাউজের সেই আড্ডা, সবাই তো সুখী হতে চায়, যদি কাগজে লিখ নাম, পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা সেইদিন, কতদিন দেখিনি তোমায়, এ কূলে আমি, কথা দাও, খুব জানতে ইচ্ছে করে, আমি সারারাত, এ নদী এমন নদী, মাঝরাতে ঘুম, এই আছি বেশ, এই রাত যদি, কি এমন কথা, ক’ফোঁটা চোখের জল, সে আমার ছোটবোন, দীপ ছিল শিখা ছিল, যদি হিমালয়-আল্পসের সমস্ত জমাট বরফ, শাওন রাতে, আমার ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে, স্বপ্নে বাজেগো বাঁশি, তীর ভাঙা ঢেউ, না না যেও না, তুমি আর ডেকো না, সুন্দরী গো দোহাই দোহাই। এছাড়াও তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় হিন্দি গানেও কণ্ঠ দিয়েছিলেন।

গানের টানে মান্না দে তার জীবনের অনেক সময় কাটিয়েছেন বিশ্বের নানা দেশে। এসেছিলেন বাংলাদেশেও, এখানকার মানুষের গানের খোরাক মিটাতে, ভালোবাসার সম্মান জানাতে।

চোখের দেখায় মান্না দে নেই। কিন্তু প্রজন্মের ব্যবধানেও তিনি রয়ে যাবেন কফি হাউজের সেই আড্ডাটায়। আড্ডা কিংবা একাকিত্বের সময় মান্না দে আজো হয়ে উঠেন অনেকের খুব কাছের বন্ধু। এই কিংবদন্তির প্রয়াণ দিবসে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

তথ্যসূত্র : অনলাইন ও উইকিপিডিয়া

এলএ/পিআর