শাকিবকে ধরতে পারেনা তাই সবাই পেছনে লেগে থাকে : আলীরাজ
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা আলীরাজ। টিভি নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে অভিষেক ঘটে তার। বিটিভিতে সেলিম আল দীনের লেখা ও নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নির্দেশনায় ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। সে সময় ডব্লিউ আনোয়ার নামে পরিচিত ছিলেন। নায়করাজ রাজ্জাকের হাত ধরে সিনেমায় এসে আলীরাজ নাম নেন।
ছেলেবেলায় সিরাজগঞ্জে থাকতেই বর্ণালী ক্লাবের সাথে অভিনয় শুরু করেন। এরপর কাজ করেছেন তরুণ সম্প্রদায়, দুর্বার, সংলাপ থিয়েটারে। ঢাকায় চলে আসার পর ঢাকা থিয়েটারে কাজ শুরু করেন। সেখানে তার সহ অভিনেতা ছিলেন হুমায়ূন ফরিদী, আফজাল হোসেন, সুবর্ণা মুস্তাফা, রাইসুল ইসলাম আসাদের মত অভিনয় তারকারা।
প্রায় একশটিরও বেশি চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন। চরিত্রাভিনেতা হিসেবে তিনি অগণিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
বর্তমানে এই অভিনেতা নিজ গৃহে পরিবারের সাথে আছেন। করোনার সতর্কতা হিসেবে। তার সাম্প্রতিক দিনকাল নিয়ে তিনি কথা বলেছেন জাগো নিউজের সাথে। লিখেছেন অরণ্য শোয়েব-
জাগো নিউজ : ঘরবন্দি সময় কাটছে কেমন ?
আলীরাজ : প্রায় তিন মাস ধরেই বাসায় আছি। তবে এর মধ্যে বের হয়েছি জরুরি কিছু প্রয়োজনে। আসলে এমন লম্বা সময় এর আগে পাইনি। ঘরে আছি, পরিবারকে সময় দিচ্ছি।ভালোই কাটছে তাদের সাথে।
আসলে শুটিংয়ে থাকলে তো খুব একটা সময় দিতে পারতাম না। এছাড়াও সবার খোঁজ নিচ্ছি, যোগাযোগ করছি সবাই কেমন আছে।
জাগো নিউজ : অবসরে কি করছেন?
আলীরাজ : সময়টা যে কিভাবে পার হচ্ছে এটি সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউই জানেন না। এই যে এখন (বিকেল বেলা) ঘুম থেকে উঠলাম। মাঝেমধ্যে এই রুম থেকে ওই রুমে যাই, টিভি দেখি, সিনেমা দেখি, নাটক দেখি। কখনো বই পড়ি। ফেসবুক একটু একটু চালাতে শিখেছি। এসব করেই সময় পার করছি।
জাগো নিউজ : শেষ ব্যস্ততা কি ছিল?
আলীরাজ : নিকলীতে শুটিং করলাম মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত 'আনন্দ অশ্রু' ছবির। এর ডাবিং করলাম। এটিই ছিল শেষ কাজ করোনার আগে। আরো একটি ছবির শুটিং করছিলাম। নামটা মনে পরছেনা ঠিক। তারপর তো করোনা চলে এলো।
জাগো নিউজ : শুটিং শুরু হয়েছে আবার। আপনি করবেন এই মুহূর্তে ?
আলীরাজ : ফেসবুকে দেখলাম, নিউজে দেখলাম অনেকেই শুটিং করছেন।প্রপারলি কোনো শুটিং শুরু হওয়ার খবর দেখিনি। কিছু ডাবিং এবং একটি ছবির শুটিং হয়েছে দুই একদিন শুনেছি এফডিসিতে। আর নতুন ছবির শুটিং যে করবে কোথায় মুক্তি দিবে? হল তো বন্ধ। তাহলে এত আতঙ্কের মাঝেও সিনেমা করে লাভ কী।
এই অবস্থায় কেউ কি ইনভেস্ট করবে সিনেমায়! তাই শুটিং না করাই হবে উত্তম। তবুও কেউ করতে চাইলে যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদে কিছু করা যায় তবে রাজি আছি।
জাগো নিউজ : অবস্থা যদি দীর্ঘদিন এমন থাকে তাহলে ভবিষৎ পরিকল্পনা কি?
আলীরাজ : ভবিষৎ পরিকল্পনা করার মতো অবস্থাও এখন নেই। ধরুন সবকিছু মেনেই সিনেমার শুটিং হচ্ছে, কিন্তু সিনেমাটি শেষ করার পর আপনি চালাবেন কোথায়? হলের মধ্যে যদি কেউ হাঁচি দেয় সব দর্শক তো বের হয়ে যাবে।হলে বসে ছবি দেখার যে তৃপ্তি পাওয়া যায় সেটি ঘরে বসে পাওয়া যাবে না।
তাই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ এই বিপদ থেকে মুক্তি দিতে পারবে না।
জাগো নিউজ : নানারকম চরিত্রে আপনাকে দেখা যায়। তারমধ্যে নেগেটিভ নাকি পজেটিভ; কোন ধরনের চরিত্র ভালো লাগে আপনার ?
আলীরাজ : আমার সব চরিত্র করতেই ভালো লাগে। আমি উপভোগ করি অভিনয়।আলাদা করে কোনো বিষয় নেই।
চরিত্রের সাথে আমি মিশে যাই সবসময়। আপনি যে কাজটি মেনে নিয়ে করবেন সেটি আপনি উপভোগ করতে পারবেন।
জাগো নিউজ : এমন যদি অবস্থা থাকে তাহলে সিনেমার ভবিষৎ কি হবে বলে মনে করেন?
আলীরাজ : সিনেমার করুণ অবস্থা আগে থেকেই চলছে। শুধু শুধু করোনাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। করোনা তো মাত্র কিছুদিন ধরে। আর সিনেমা তো বেশ কয়েকবছর ধরেই ভালো অবস্থায় নেই।
সবাই বলছে করোনার জন্য তিন মাস ঘরে বসে আছি। কিন্তু করোনার আগেই কয়টি শিল্পী কাজ করতে পেরেছে?কয়টি সিনেমা হয়েছে? অনেক ক্ষতির মধ্যেই আমাদের বাস। নতুন করে আর কিছু হবার নেই।
জাগো নিউজ : দীর্ঘদিন ধরেই শাকিব খান নির্ভর ইন্ডাস্ট্রি। এটাকে কীভাবে দেখেন আপনি?
আলীরাজ : এর ভাল মন্দ দুটি দিকই আছে। শোবিজে দর্শকপ্রিয়তা বলে একটি বিষয় আছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যার হাতে এর জোর থাকবে তারই রাজত্ব। নানা কৌশলে সবাই এই রাজত্ব ধরে রাখতে চায়।
এখন কেউ যদি রাতারাতি হিরো হয় এবং দর্শক যদি না নেয় তাহলে কি হবে? শাকিবকে অনেকেই পছন্দ করে না। কিন্তু গালি দিয়েও ওর ছবি দেখে। বহু প্রমাণ আছে। শাকিব ছাড়া আমাদের কাছে দর্শকপ্রিয় নায়ক নেই। যারা আছেন তাদের নামে সিনেমা হিট বা ফ্লপ হয় না। কেউ কেউ দর্শকদের কাছে সমাদৃত হচ্ছেন। এটা আশার খবর। তবে শাকিবের বিকল্প বা সমকক্ষ পেতে সময় লাগবে।
এখানে হিংসার কিছু নেই। শাকিবের পেছনে ইন্ড্রাস্ট্রির অনেকেই অনেক কিছু বলে চলেছেন। এই ছেলেটার পেছনে কেউনা কেউ লেগেই থাকে। ওকে কেউ ধরতে তো পারে না তাই কি করবে, সমালোচনা করে। কিন্তু ওকেই সিনেমায় নেয় প্রযোজকরা।কারণ ও বর্তমানে সিনেমার ডিম পাড়া হাঁস।
জাগো নিউজ : এই মুহূর্তে সবার জন্য কি বার্তা রয়েছে আপনার?
আলীরাজ : পৃথিবী একজন যে বানিয়েছিলো আমরা তাকেই ভুলে গিয়েছিলাম। পুরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিলাম যেন সবাই। করোনা সেটা উপলব্ধি করাচ্ছে।
সবাইকে বলবো সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করুণ। মাফ চান এবং ঘরে থাকুন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হবেন না। সরকারি সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং আপনি যদি করোনা মুক্ত থাকতে চান দেশ ও দেশের মানুষকে ভালো রাখতে চান তাহলে সচেতন থাকুন।
জাগো নিউজ স্পেশাল; শেষ দুই প্রশ্নের উত্তর চাই-
১/ এই প্রজন্মের নায়ক-নায়িকাদের মাঝে কী ঘাটতি আছে বলে মনে করেন?
উত্তর : সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হচ্ছে নিয়ম শৃঙ্খলার।
২/ কোন নায়ককে দেখে হিংসে হতো আপনার ?
উত্তর : হাহাহা মজার প্রশ্ন। আমার সবচেয়ে ভালো লাগতো আমার গুরু নায়করাজ রাজ্জাক ভাইকে দেখে। মানুষ যখন হেটে অভিনয় করতো তিনি তখন লাফালাফি করে অভিনয় করতেন। এটা বিশাল ব্যাপার। অভিনয়টাকে তিনি রপ্ত করেছিলেন রক্তের ভেতর, কলিজায়। তার মতো কাউকে দেখি না আমি। আমার গুরু, আমার ভালোবাসা ও ঈর্ষার মানুষ। তবে হিংসার নন।
এমএবি/এলএ/পিআর