ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

সেন্সরকে বুড়ো আঙুল : গণমাধ্যমে রানআউট বন্দনা!

প্রকাশিত: ০১:২২ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৫

বেআইনি ও অবৈধভাবে ছবির পোস্টারে ‘১৮+’ প্রতীক ব্যবহার করা নিয়ে তুমুল সমালোচনার জন্ম দিয়েছে সদ্য মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র ‘রানআউট’। ছোট পর্দা থেকে পড় পর্দায় আসা নির্মাতা তন্ময় তানসেনের দ্বিতীয় চলচ্চিত্রটি গেল শুক্রবার সারাদেশ জুড়ে প্রায় ৬০টির মতো সিনেমা হলে এসেছে।

তবে এই ছবিটিকে ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘ব্ল্যাক ফিল্ম’ বলে উল্লেখ করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। কারণ, ছবিটি সেন্সর বোর্ডের বিধি নিষেধ, শাসন-নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পোস্টারে ‘১৮+’ প্রতীক নিয়েই প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে। বাংলা চলচ্চিত্রে ঘোষণা দিয়েই খুলে দিয়েছে অনিয়মের একটি দরজা। যা শিল্পের বিকাশে কখনোই কাম্য নয়।

সমালোচনার মুখে রানআউট ছবির পোস্টারে ‘১৮+’ প্রতীক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেন্সর বোর্ড। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেন্সর থেকে যে পোস্টার ছবিটির প্রচারণার জন্য অনুমোদন করা হয়েছে তার বাইরে আরো কমপক্ষে দুটি অনুমোদনহীন পোস্টার প্রচারণার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই দুটি অনুমোদনহীন পোস্টারে ‘১৮+’ শব্দটি সংযোজন করা আছে এবং পোস্টারে বাংলাদেশ সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেনের সাক্ষরিত ‘অনুমোদিত’ সিলটিও ব্যবহার করা হয়েছে!

সেন্সরের নির্দেশ অমান্য করে এবং চলচ্চিত্রের নীতিমালাকে অসম্মান করে ঢাকাই ছবির ষাট বছরের ইতিহাসে কোনো চলচ্চিত্রের এমন অবৈধ প্রদর্শনী এটাই প্রথম! পরিতাপের বিষয় হলো, এ বিষয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল থাকার পরও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না সেন্সর বোর্ড। এমনকি এ বিষয়ে কথা বলতে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করা হচ্ছিলো সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের সাথে। যখনই ফোন করা হয় তখনই ওপাশ থেকে বলা হচ্ছে ‘স্যার অফিসে নাই।’ কোথায় আছেন জানতে চাইলে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না কেউ। উনার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার চাইলে বলা হচ্ছে ‘স্যারের মোবাইল নাম্বার কেউ জানি না’!

তবে সেন্সরেরই আরেক কর্মকর্তা জালালউদ্দিন মুনশি গেল বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে বলেছিলেন, রানআউট ছবির পোস্টারে ‘১৮+’ প্রতীক ব্যবহার বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশ না মানলে ছবিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু সরেজমিন ঘুরে আজ শনিবার দেখা গেছে, এখনো রানআউট ছবির পোস্টারে ব্যবহার হচ্ছে ‘১৮+’! এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও হদিশ পাওয়া যায়নি জালালউদ্দিন মুনশির।

এদিকে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক বেশ কিছু সূত্র জানিয়েছে, রানআউট ছবির কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতা করেছে সেন্সর বোর্ড। শুধুমাত্র এ কারণেই সেন্সর এই ছবিটির অন্যায় ও অবৈধ আচরণে নিশ্চুপ রয়েছে। এক্ষেত্রে সকলে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে তা খতিয়ে দেখার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।

কেননা, চলচ্চিত্রের প্রচার ও প্রদর্শনের আইন ভেঙে ইতিহাস ব্রেক করে রেকর্ড সৃষ্টি করা ছবিটির ব্যাপারে সেন্সরের নীরবতায় খুব স্বাভাবিকভাবেই ফিল্ম পাড়ায় ঘুরে ফিরে আসছে বেশ কিছু প্রশ্ন। রানআউট ছবির কর্তৃপক্ষের ক্ষমতার উৎস কী বা কে? কেন তারা দেশের প্রচলিত চলচ্চিত্র আইন-সংবিধাণকে অসম্মান করার পরও নিশ্চুপ সেন্সর ও দেশের গণমাধ্যম?

বোদ্ধারা মনে করেন, এসব প্রশ্নের উত্তর খতিয়ে না দেখলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপরই। কারণ, অনিয়মের যে দরজাটা খোলে দিয়েছে রানআউট তার খেসারত শেষাবধি এই মন্ত্রণালয়কেই হয়তো দিতে হতে পারে।

তারা আরো বলেন, প্রয়োজনে চলচ্চিত্র নির্মাণের আইন ও নীতিমালা পরিবর্তন করা হবে। বিশ্বের প্রায় সব দেশের ছবির পোস্টারেই ‘১৮+’ লিখা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশেও এর প্রচলন হতেই পারে। কিন্তু সেই প্রচলনের অনুমোদন না পাওয়া অবধি এই প্রতীক ব্যবহার করা দন্ডনীয় অপরাধই বটে। তাই ছবির পরিচালক-প্রযোজকের উচিত ছিলো ‘১৮+’ ব্যবহারের আগে এ সংক্রান্ত নীতিমালার সংশোধন। কিন্ত তারা সে পথে হাঁটেননি। এগিয়েছেন অনিয়মের পথ ধরে। যা আগামীতে অন্যদেরকেও নিয়মের বাইরে যেতে উস্কানি দিবে।

সেইসাথে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে ফিরে আসছে বেদনার অতীত। প্রয়াত চলচ্চিত্রকার নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিলো ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’। ছবিটি মুক্তি দেয়ার আগে হুমায়ূন আহমেদ সুদুর আমেরিকা থেকে সেন্সর বোর্ডের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন ছবিটার পোস্টারে যেন লিখে দেয়া হয়- ‘এই ছবিটি শিশুদের দেখাবেন না’। কারণ, ছবির একটি দৃ্শ্য ছিলো আপত্তিকর, যা শিশুদের না দেখানোই উত্তম মনে করছিলেন তিনি। কিন্তু সেন্সর তার মতো কিংবদন্তির কথা রাখেনি! একজন মৃত্যু পথযাত্রী নির্মাতার শেষ ইচ্ছেটাও পূরণ করার কথা ভেবে দেখেনি। তখন তাকে অজুহাত দেয়া হয়েছিলো- চলচ্চিত্রের গ্রেডিং করার সিস্টেম ঢাকাই ছবিতে নেই। এটা আইনসিদ্ধ নয়। কিন্তু শিল্পের নামে নগ্নতায় ঠাসা ‘রানআউট’ ঠিকই আইনকে নিজের মতো করে তৈরি করে নিয়েছে। মজবুত দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে অনিয়মের। প্রমাণ করে যাচ্ছে চলচ্চিত্রের সেন্সর বোর্ড কাগুজে বাঘ। চাইলেই যে কোনো নির্মাতা-প্রযোজক-পরিবেশক চলচ্চিত্রের প্রচলিত আইনকে অসম্মান-অবহেলা করতে পারেন। এবং তার জন্য কোনো শাস্তিও নেই।

রানআউটের এইসব কিছুকেই গণমাধ্যম সমর্থন যুগিয়েছে ছবিটির নির্মাতা ও কলাকুশলীদের ঢালাও প্রচারে নেমে। কেউ কেউ মনের মাধুরী মিশিয়ে ৬০টির মতো প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া ছবিটিকে পত্রিকার পাতায় সেঞ্চুরির মাইলফলক ছুঁইয়ে দিয়েছেন! অথচ, বললেন না- যে অনিয়মের দরজাটা খুলে দিয়েছে রানআউট তার নেতিবাচক প্রভাবের দায়টা নিবে কে?

এদিকে জানা গেছে, ছবিটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে বেশ ভালোই আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ভালো সাফল্যই পেতে পারে সজল নূর, মৌসুমী নাগ, রোমানা, তারিক আনাম খান, ওমর সানী প্রমুখ অভিনীত অভি কথাচিত্রের ছবি ‘রানআউট’।

এলএ