সৃজিতের ফেলুদা ফেরতের গান নিয়ে সত্যজিতের ছেলের আড্ডা
সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট অনবদ্য গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা আজও সমান ভাবে প্রিয় পাঠক ও দর্শকের সঙ্গে। এবার সৃজিত মুখার্জীর পরিচালনায় ওয়েব সিরিজে হাজির হতে যাচ্ছে চরিত্রটি। শনিবার বিকেলে প্রকাশ হয়েছে এই ওয়েব সিরিজের টাইটেল গান।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন আজ। এ উপলক্ষে ফেসবুক লাইভে এসে গানটির আনুষ্ঠানিক মুক্তি দেওয়া হয়।
এই ফেসবুক লাইভে প্রধান চমক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের ছেলে সন্দীপ রায়। গানটি লিখেছেন শ্রীজাত। সুর করেছেন জয় সরকার। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন অনুপম রায়, রূপম ইসলাম ও রূপঙ্কর বাগচী। লাইভে উপস্থিত ছিলেন শিল্পীরাও।
সৃজিত মুখার্জী বলেন, ‘ফেলুদা থাকেন আমাদের আশে পাশেই। বিশেষ করে ফেলুদার এই ‘দা’ শব্দটা সবার। এটা আমাদের সবার একটা আশ্রয়। পরিবারে একজন দাদা থাকে কিংবা পাড়ায় একজন দাদা থাকে। যার কাছে আশ্রয় নেয়া যায়। ফেলুদা যেনো এমনই, আমাদের খুব কাছের একটি চরিত্র।’
সবাই ছেলেবেলার প্রিয় ফেলুদাকে নিয়ে স্মতিচারণ করেন এই আড্ডায়।
সত্যজিৎ রায়ের ছেলে সন্দীপ রায় বলেন,‘বাবার লেখা ফেলুদা সিরিজের ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’ আমার অত্যন্ত প্রিয়। কারণ, এটা একটা অদ্ভুত গল্প। এখানে অদ্ভুত একটা সিচুয়েশন আছে, ধাঁধা আছে। সবমিলিয়ে জব্বর একটা ব্যাপার। এটা নিয়ে ছবি নির্মাণ করার সময় আমার একটু ভয় লেগেছিল। মনে হচ্ছিলো বেশি কথা যেন না হয়ে যায়।
ফেলুদা যখন প্রথম লেখা হয় ১৯৬৫-৬৬ সালে। তখন তো ছোটদের জন্য বাংলা গোয়েন্দা কেউ ছিলেন না। অদ্ভুত মজা লেগেছিল। সেটা যে সিরিজ হবে, এটা আমরা কল্পনা করতে পারিনি। বাবাও কল্পনা করেননি। ফেলুদা লেখা হলো। সন্দেশ পত্রিকায় ছাপা হলো। বাবা চিঠি পেতে শুরু করলেন। সন্দেশের বিক্রি বেড়ে গেল। এরপর এটা সিরিজ হলো।’
রূপম ইসলাম বলেন, ‘একেবারে ছোটবেলাতেই ফেলুদার গল্প গুলে খাওয়া। প্রথম আমি যেটা পড়েছিলাম সেটা হচ্ছে- ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’। অসাধারণ লেগেছিল তারপর ক্রমাগত পড়তে থাকি। প্রায় সব শেষ করে ফেলেছিলাম। যেগুলো পড়া বাকি ছিল। মা বলেছিল, মাধ্যমিকে যদি ভাল রেজাল্ট করি তাহলে সেগুলো কিনে দিবে। মা যেমনটি চেয়েছিলেন তার চেয়ে বেটার হয়েছিল পরীক্ষা। এরপর সমস্ত ফেলুদা ঘরে চলে এলো। গর্বের বিষয় যে ফেলুদার গানে অংশ নিতে পারছি।’
রুপঙ্কর বাগচী বলেন, ‘একই রকম। আমিও রূপমের মতোই ফেলুদা গুলিয়ে খেয়েছি। একসময় আমার কাছে শুধু সত্যজিৎ ছিলেন। গোয়েন্দা বলতে আমি জানতাম ফেলুদাকেই। যখন আবার সিনেমা দেখলাম, আমার মনে আছে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ দেখলাম। আমার এক মামা বললেন, একটা গোয়েন্দা পাঞ্জাবীওয়ালা হেঁটে যাচ্ছে, কেমন একটা লাগছে না! আমি বলেছিলাম এই গোয়েন্দায় আমার গোয়েন্দা। এর চেয়ে আর ভালো কোনোটা হয় না। আমি সব সময় ফেলুদার সঙ্গে রয়েছি। আমারও নিজেকে ফেলুদা মনে হয়।’
অনুপম বলেন, ‘একবার জন্মদিনে আমি দুটো বই উপহার পাই। একটা ‘নয়ণ রহস্য’ আরেকটা ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’। সেই থেকে ফেলুদার সঙ্গে পরিচয়, পড়া। পরে সিনেমায় ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ দেখা, ‘সোনার কেল্লা’ দেখা। ফেলুদাকে ভালোবেসে ফেলা। এটা যার সৃষ্টি সেই মানুষের জন্মদিনে আমরা কথা বলতে পারছি তাকে নিয়ে। সত্যি খুব ভালো লাগছে। ফেলুদা ফেরত নিয়ে তোমার সঙ্গে (সৃজিতের) যে স্মৃতি জড়িয়ে আছে সেটা আলাদাভাবে আর না বললাম।’
সম্প্রতি শেষ হয়েছে ফেলুদা ফেরত ওয়েব সিরিজের শুটিং। কাঠমান্ডু থেকেই দর্শকের জন্য একটি সুন্দর বার্তা লিখেছিলেন সৃজিত। প্রথম থেকেই তিনি বলেছিলেন তার নিজের মতো করে ফেলুদা, তোপসে এবং জটায়ুকে বেছে নেবেন।
সেই মতো বেছে নিয়েছেন টোটা, কল্পক এবং অনির্বাণকে। এছাড়াও প্রতিটি চরিত্রের জন্যই রয়েছে চমক। বাঙালির যোগ্য ফেলুদা হয়ে উঠতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়েছেন টোটা। এখন শুধুই মুক্তির অপেক্ষা। এর আগে শুনে নেওয়া যেতে পারে এই ওয়েব সিরিজের গান।
এমএবি/এমকেএইচ