শুভ জন্মদিন বিপাশা হায়াত
বিপাশা হায়াত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত জনপ্রিয় অভিনেত্রী।তিনি একাধারে টেলিভিশন, মঞ্চ, চিত্রশিল্পী ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য খ্যাত।
নব্বই দশকে জনপ্রিয় অনেক টিভি নাটকে অভিনয়ই তাকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। মঞ্চনাটকেও তিনি সমানভাবে সফল ছিলেন।
হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমনি’র সিনেমার ঢাকা শহরে আটকে পড়া তরুণী রাত্রি, যে দেশ স্বাধীন হবার স্বপ্ন দেখে, মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়তে চায়, ভালোবাসে মুক্তিযোদ্ধা আলমকে, কিংবা আরেক মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা ‘জয়যাত্রা’য় পাকিস্তানিদের ভয়ে পলায়নরত সন্তানহারা মায়ের চরিত্র ‘হাওয়া’। দু’টো চরিত্রকেই নিজ অভিনয়গুণে নিজেকে প্রশংসিত করেছেন, পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। তিনি বাংলা টেলিভিশন জগতের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় অভিনেত্রী ‘বিপাশা হায়াত’।
মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল মার্চে শিল্পীর ঘরেই জন্ম তার, প্রখ্যাত অভিনেতা আবুল হায়াতের বড় কন্যা তিনি। কালের প্রবাহে তিনিও হয়ে উঠেছেন জাত শিল্পী। আশির দশকে ‘খোলা দুয়ার’ নাটকে বাবার মেয়ে হয়েই অভিনয় শুরু করেন। এরপর যুক্ত হন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে। টিভি নাটকে প্রথমে আলোচনায় আসেন ‘অয়োময়’ ধারাবাহিক দিয়ে।
এরপর পুরো নব্বই দশকে ছিলেন শীর্ষ অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন। একে একে অভিনয় করেন শঙ্কিত পদযাত্রা, রুপনগর, ছোট ছোট ঢেউ, অন্য ভুবনের ছেলেটা, চেনা অচেনা মুখ, থাকে শুধু ভালোবাসা, বীজমন্ত্র, স্পর্শ, শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই, বিপ্রতীপ, অতিথি, হার জিত, আশিক সব পারে, বিষকাঁটার মত জনপ্রিয় নাটকগুলিতে।
সেই দশকে অনেক অভিনেত্রীই লাক্সের বিজ্ঞাপন করেছিলেন। তবে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক তিনিই নিয়েছিলেন। মডেলিং জগতেও খেতাব ছিল তার। একটা সময় পর অভিনয় জগত থেকে বিরতি নিয়েছিলেন। তবে যখনই ফিরে এসেছেন তখনই নিজেকে সমাদৃত করেছেন।
এর মধ্যে অন্যতম কাজ ছিল দিল দরিয়া, ইনসমনিয়া, শেষ বলে কিছু নেই, দুই বোন, হাতটা বাড়িয়ে দাও, চিনিখোর অন্যতম।
জানা যায়, নব্বই দশকের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ এ অভিনয়ের জন্য অফার পেয়েছিলেন বিপাশা। তবে বাণিজ্যিক ছবি করবেন না বলে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর দু’টি মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা আগুণের পরশমনি ও জয়যাত্রায় অভিনয় করেন।
অভিনয়ের বাইরে তিনি নাট্যকার। অনেক নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে শুধু তোমারেই জানি, শুকতারা, শঙখবাস, ঘাসফুল, প্রেরণা অন্যতম।
উপস্থাপক হিসেবেও সুপরিচিতি আছে তার। ‘বিপাশার অতিথি’ নামক একটা অনুষ্ঠান বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। আবৃত্তি ও গানেও দক্ষ তিনি।
তার অন্য আরেকটি প্রতিভা হল তিনি একজন চিত্রশিল্পী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। বছর কয়েক আগে এসিড আক্রান্ত নারীদের সাহাযার্তে নিজের আঁকা ছবির প্রদর্শনী করেছিলেন।
বর্ণিল ক্যারিয়ারে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও পেয়েছেন মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার। সাংস্কৃতিক জীবনের মত ব্যক্তিগত জীবনটাও মসৃন ও পরিস্কার। বোন নাতাশা হায়াত ও তাঁর স্বামী শাহেদ শরীফ খানও পরিচিত অভিনয় শিল্পী। ফুফাতো বোন ফিমা আহমেদও নাটক ও বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন।
ব্যক্তিজীবনে নিজের ক্যারিয়ারের সেরা জুটি অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদকে বিয়ে করেছেন। সংসারে রয়েছে দু’টি সন্তান; এক ছেলে ও এক মেয়ে। মিডিয়া জগতে সুখী দম্পতি হিসেবে তাদের বেশ সুপরিচিতি আছে।
এলএ/এমকেএইচ