ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

২৪ বছরে আমার উপর অবিচারের বিচার কে করবে : সালমানের স্ত্রী সামিরা

বিনোদন প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০১:২০ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি, তিনি পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা পিবিআই। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে এমন তথ্য জানান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।

প্রতিবেদনে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এ হত্যা মামলার এক নম্বর অভিযুক্ত সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা। গেল মঙ্গলবার বিকেলে জাগো নিউজের মুখোমুখি হন তিনি। দীর্ঘ আলাপচারিতায় জানিয়েছেন প্রতিবেদন নিয়ে তার মনের ভাবনার কথা। প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে ঘিরে নানা সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন তিনি। সেই আলাপের চুম্বকাংশ পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরেছেন লিমন আহমেদ-

জাগো নিউজ : অনেক প্রতীক্ষার পর পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন এলো। সেখানে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন বলেই জানা গেছে। এই প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা দুইই হচ্ছে। আপনি এটাকে কীভাবে দেখছেন?

সামিরা : আমার আসলে এতে আনন্দও হচ্ছে না, আবার নতুন কোনো কিছু মনে হচ্ছে না। কারণ এর আগেও চার চারবার বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে আত্মহত্যাই এসেছে। আমি এটা ১৯৯৬ সাল থেকেই বলে আসছি। আমার চেয়ে তো কেউ বেশি জানে না। কিন্তু আমাকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ইমনের (সালমান শাহ) মা, ভাই ও কুমকুম মামা অপরাধী করেছেন। যা তা গল্প বানিয়ে সবার সামনে আমাকে অত্যন্ত বাজেভাবে খুনি হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। অনেক পরে এসে আবারও সেটাই প্রমাণ হয়েছে যা আমি বলেছি যে সালমান আত্মহত্যা করেছে। শুধু আমি নই, যারা ওইদিন বাসায় ছিলেন ঘটনার সময় সবাই এটা বলে আসছেন।

ইমনের মা, ভাই ও মামারা একেকবার একেক কথা বলেছে। তারা গল্প বানিয়েই গেছে। তাদের যে কথা ইমনের মৃত্যুর দিন ছিলো সেটা এক মাস পর অন্য রকম হয়েছে। পরের বছর আরও অন্যরকম হয়েছে। কাল পর্যন্ত তারা নতুন নতুন বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু আমি তাই বলে এসেছি পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে যা ১৯৯৬ সালে বলেছিলাম। কারণ আমি কোনো গল্প বানাইনি।

তবে যেটা ভালো লেগেছে পিবিআই মামলাটিকে দারুণভাবে বিশ্লেষণ করেছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এটাকে হ্যান্ডেল করে সবার সামনে প্রেজেন্ট করেছে। এর সঙ্গে জড়িত প্রায় সবাইকে জড়ো করে তাদের জবানবন্দি নিয়েছে নতুন করে। সবার বক্তব্য, আলামত, বিভিন্ন রিপোর্ট আমলে নিয়ে খুঁটিনাটি সব তুলে এনে তারপর প্রতিবেদন করেছে। তারা ভিডিও করে জিনিসটা প্রেজেন্ট করেছেন। এখানে অনেক কিছু নতুন তথ্য এসেছে। যা আমারও জানা ছিলো না। সবার জবানবন্দি নেয়ার কারণেই পিবিআই অনেক ইনফরমেটিভ একটি রিপোর্ট তৈরি করতে পেরেছে। এজন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই পুলিশের এই সংস্থার প্রতি।

জাগো নিউজ : আপনি সালমান হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি ছিলেন। এই প্রতিবেদন সেই অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে। এটা নিশ্চয়ই স্বস্তির......

সামিরা : তাতো বটেই। এই ২৪ বছরে যে গ্লানি, অপবাদ আমি বয়ে বেড়িয়েছি সেটা একজন নারী হিসেবে কতোটা কষ্টের ছিলো, কতোটা অমানবিক ছিলো তা কাকে বোঝাবো? চোখের সামনে স্বামীকে হারালাম যাকে এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে বিয়ে করেছিলাম। সেই স্বামীর খুনের অভিযোগ মাথায় নিলাম। একজন নারী হয়ে আমার শাশুড়ি আমার জীবনটাকে বিষিয়ে দিয়েছেন। এটা কি ঠিক হলো? এর বিচার কে করবে? এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিটা রাত, প্রতিটা দিন আমি নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। একটা সংসার আছে আমার, তিনটা বাচ্চা আছে। তারা হেয় হয়েছে, তাদের কাছে আমি ছোট হয়েছি। সমাজে আমি ছোট হয়েছি। সালমান ভক্তদের কাছে আমি ছোট হয়ে চলেছি। তবুও আমি ধৈর্যশালী ছিলাম। কারণ আজ কিংবা কাল, সত্যিটা সত্যিই হয়।

হলোও। সালমানের মা ও পরিবারের অন্যদের ষড়যন্ত্র এবং উদ্দেশ্য সবাই বুঝতে পারছে। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের পর অসংখ্য ভক্তরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তারা উপলব্ধি করছে যে সালমান সত্যি খুন হলে বারবার সেটা আত্মহত্যা হয়ে আসতো না। আমি এমন কেউ নই যে দেশের সবাইকে কিনে নেবো। এখানে এমন অনেকের বক্তব্য নেয়া হয়েছে যাদের কথা আমিও জানতাম না। এসব বিষয় সবাইকে ভাবাচ্ছে৷ সবাই সত্যটা বুঝতে পারছেন। প্রিয় নায়ক আত্মহত্যা করেছেন এটা মানতে কষ্ট হলেও তারা বাস্তবতা মেনে নিচ্ছেন। এটা ভালো লাগছে।

জাগো নিউজ : সবসময় শোনা গেছে আপনি নতুন বিয়ে করে স্বামী-সন্তান নিয়ে বিদেশে পালিয়ে আছেন.....

সামিরা : আমার নামে এহেন কোনো মিথ্যে নেই যা তারা বলেনি, ছড়ায়নি। আমাকে নিয়ে মনগড়া চটি গল্প বানিয়ে সেগুলো পত্র-পত্রিকায় ছাপিয়ে সালমান ভক্তদের কাছে আমাকে খারাপ বানানো হয়েছে। আমি কেন পালিয়ে যাবো? আমি স্বামী সংসার নিয়ে সবসময়ই দেশে ছিলাম, আছি। বরং তারাই কেউ দেশে নেই। সালমানের মৃত্যুর পর তার বিষয় সম্পত্তি নিয়ে দেশ ছেড়েছে। সালমানের মা ও ভাই লন্ডনে থাকে। মামা আলমগীর কুমকুম আমেরিকায় থাকেন।

বিদেশে এসি রুমে বসে বসে তারা সালমান খুনের বিচার চান, বাচ্চা বাচ্চা ভক্তদের রাস্তায় নামিয়ে আন্দোলন করান। এসব আর বলতে ইচ্ছে করে না। ভক্তরা আবেগের জায়গায় এসব করে। তারা যতোই বাস্তববাদী হবে ততোই মঙ্গল। আমি কখনো পালাইনি। দেশে থাকি। মাঝেমাঝে বিদেশ বেড়াতে যাই। আর তারা মাঝেমাঝে দেশে বেড়াতে আসে।

জাগো নিউজ : সালমান শাহের মৃত্যুর পর থেকে আপনি আড়ালে। মিডিয়ায় আসেননি কখনো। এজন্যই অনেক তথ্যের গ্যাপ তৈরি হয়েছে। সবসময় সালমানের পরিবারের পক্ষ থেকে একতরফা কথা শোনা গেছে। এইটা সালমান ভক্তদের কাছে আপনাকে খুনি বা অভিযুক্ত হিসেবে আরও বেশি প্রতিষ্ঠা করেছে বলে মনে হয় না?

সামিরা : হতে পারে। কিন্তু আমি কখনো চাইনি মিডিয়ার সামনে কথা বলতে। এর কিছু কারণ আছে। এক নম্বরটি হলো আমি চাইনি সালমানকে খাটো করতে। আমাকে কে ভালোবাসলো না বাসলো তা নিয়ে আমি ভাবি না। আজও ভাবি না। কিন্তু সবাই সালমানকে ভালোবাসছে এটা আমার ভালো লাগে। তাই চুপ থেকেছি। কারণ কথা বলতে গেলেই অনেক কথা বাড়ে। এই যে এখন সবাই শাবনূরকে টেনে এনে সালমানের চরিত্র নিয়ে নানারকম সমালোচনা করছে। এটা আমি চাইনি কোনোদিন। কিন্ত মা হয়ে, ভাই হয়ে তারা চেয়েছে। আত্মহত্যা জেনেও এটা নিয়ে নাটক বানিয়েছে, একবার দাফন করা লাশ আবার উঠিয়েছে। একবারের রিপোর্ট বারবার করিয়ে ঘাঁটতে ঘাঁটতে সালমানকে সমালোচনার পাত্র বানিয়েছে। এটা তাদের পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। আমি কোনোদিন চাইনি। যা হয়েছে মেনে নিয়েছিলাম।

Samira-02.jpg

সালমান আমাকে সরি বলেছিলো, আমি সব ভুলে তার সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলাম। শাবনূরকেও ক্ষমা করে দিয়েছি। কোথাও একটি কথাও আমি বলিনি সালমান-শাবনূরের সম্পর্ক নিয়ে। শাবনূরকে নিয়ে একটা অভিযোগও তুলিনি আমি। আমি চাইনি এসব নিয়ে আলোচনা হোক।

দুই নম্বর হলো মিডিয়া চিনেছি আমি ইমনের হাত ধরে। সে চলে যাবার পর এই মিডিয়া আমি আর নিতে পারিনি। ইমনের মায়ের কথামতো মিডিয়া আমাকে নিয়ে তথ্য প্রমাণ ছাড়াই এত বাজেভাবে লিখেছে যা আমি নিতে পারিনি। তিন নম্বর হলো আমার আইনজীবী সবসময় না করেছেন মিডিয়াতে না আসতে৷ এটা নিয়ে মামলার ঝামেলা হতে পারে তাই।

জাগো নিউজ : আর একটা বিষয় জানতে চাই, সালমান শাহের বাবা মা ও ভাই থাকতেন গ্রিনরোডে। আপনারা ইস্কাটনে আলাদা থাকতেন কেন? শ্বশুর-শাশুরির সঙ্গে কী ঝামেলা ছিলো?

সামিরা : এটা আমি আসলে বলতে চাইনি কখনো। কারণ আমাকে ছোট করলেও আমি সালমানের মা হিসেবে নীলা চৌধুরীকে কখনো কারো কাছে ছোট করতে চাইনি। সে আমার নামে যত বাজে কথা ছড়িয়েছে আমি কিন্ত তাকে নিয়ে কোনো টিভি-রেডিওতে গিয়ে কুৎসা রটাইনি। বললে বলার শেষ হবে না। আজ যখন প্রসঙ্গটা আসলো তাই বলছি। নীলা চৌধুরী আমার গায়ে হাত তুলেছিলেন। তখন গাজী মাজহারুল আনোয়ারের 'স্নেহ' ছবির শুটিংয়ে বান্দরবান ছিলো সালমান।

আমাকে মারধরের খবর পেয়ে বিনা নোটিশে একদিনের জন্য ও ঢাকায় ছুটে এসেছিলো। গাজী সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেই এটা জানতে পারবেন। আমি রেফারেন্স দিয়ে কথা বলছি। বানিয়ে নয়। সালমান ঢাকায় এসে দেখলো আমি বাসায় পড়ে কান্নাকাটি করছি। তার মা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ছেলেকে ইমোশনাললি ব্ল্যাকমেইল করতে। সালমান কিন্তু তার নাটক বিশ্বাস করেনি। সবার কাছে ঘটনা শুনে সে বিরক্ত হলো। এরপর আলাদা হয়ে আমাকে নিয়ে ইস্কাটনের বাসায় উঠলো।

সেখানে খুব একটা আসতেন না নীলা চৌধুরী। সবমিলিয়ে হয়তো চারবার এসেছেন। তবে আমার শ্বশুর আসতেন প্রায়ই। তিনি আমাকে খুব আদরও করতেন। মা বলে ডাকতেন। আমিও তাকে কোনোদিন অশ্রদ্ধা করিনি।

জাগো নিউজ : পিবিআইয়ের প্রতিবেদন নিয়ে সালমানের মা আপত্তি জানিয়েছেন। এটাকে নাটক বলেছেন। তার দাবি আপনি ও পিবিআই মিলে মনগড়া নাটক বানিয়েছেন বিচারের নামে। এ বিষয়ে কী বলবেন?

সামিরা : তিনি কিছুই মানেন না। ডিবি, সিআইডি, জজকোর্ট এবার পিবিআই। সবাই মিথ্যে বলছে। সবাইকে কিনে ফেলেছি আমি? এই ২৪ বছরে সরকার বদলেছে বারবার, কত অফিসারের মৃত্যু হয়ে গেল, কতজন নতুন এলেন। সবাইকে আমি বশ করে ফেলেছি? এটা বিশ্বাসযোগ্য? তিনি আইনের সমালোচনা করেন, আইনের সংস্থাকে নাটক বলেন। আসলে তিনি প্রতিবেদন মেনে নিতেন যদি সেখানে আমাকে খুনি বলা হতো।

কিন্তু এটা তো হয়নি। পৃথিবীর যে প্রান্তে গিয়েই তদন্ত করা হোক না কেন সত্য কখনোই বদলে যাবে না।

তিনি তো অনেক চেষ্টাই করলেন। কত গল্প বানালেন, আমাকে দুনিয়ার লোকের সঙ্গে প্রেম করালেন। ফটোশপের কারসাজিতে এর সঙ্গে বসালেন, ওর সঙ্গে শুয়ালেন। একটাও প্রমাণ হয়নি। কারণ মিথ্যেকে জোর করে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। আমার কষ্ট হয়, কেমন করে পারলেন তিনি এতকিছঠু? আমি না তার ছেলের বউ ছিলাম। আমি তো সালমানের সঙ্গে সঙ্গেই বেশি সময় কাটাতাম। সিনেমার মানুষেরা তার সাক্ষী। তাছাড়া ইস্কাটনের বাসাতে অনেক সিকিউরিটি ছিলো, কাজের লোকজন ছিলো। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এত প্রেম আমি করলাম কখন? সালমান কিছুই জানতো না? আর কেন করবো? সময়ের সেরা হার্টথ্রব পুরুষটি আমার স্বামী ছিলো। সালমানের বউয়ের আর কোনো প্রেমিক লাগে না। কীসব নাম বলেছে আমার সঙ্গে জড়িয়ে। আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে আমি চিনতাম না। নীলা চৌধুরী চিনতেন। তিনি আরও অনেককেই চিনতেন।

সালমান আমার প্রেমিক, সালমান আমার স্বামী। আজও মানুষ নায়ক সালমানকে যেমন মনে রেখেছে, আমিও আমার জীবনের সেরা মানুষটিকে মনে ধারন করে রেখেছি। যাকে এখন বিয়ে করেছি সে এটা জেনে ও মেনেই আমাকে বিয়ে করেছে। কে বিশ্বাস করলো না করলো তাতে কিছুই যায় আসে না। চিৎকার করে লোক দেখিয়ে আমার ভালোবাসা আমি কোনোদিন প্রচার করিনি।

জাগো নিউজ : নীলা চৌধুরী এও দাবি করেছেন যদি এটা আত্মহত্যাও হয় তবে শাবনূর এবং আপনার দোষ। আপনাদের গ্রেফতার হওয়া উচিত......

সামিরা : তিনি তো আমাকে গ্রেফতার দেখাতেই চান। আমাকে সরিয়ে সালমানের সবকিছু ভোগ করছেন। আমার নামে বনাবীতে ফ্ল্যাট কিনেছিলো সালমান, আমাকে লাল রঙ্গের একটা গাড়ি গিফট করেছিলো বিয়েবার্ষিকীতে। সেগুলো কই? কেউ কিছু বলার নেই। ইচ্ছেমতো সব ভোগ করা যাচ্ছে। আমি এতো খারাপ হলে আমাকে ছোট ছেলেকে দিয়ে বিয়ে করিয়ে রাখতে চান কেন? একটা রেডিওতে তিনি বলেছেন, আমাকে সালমানের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে রেখে দিতে চেয়েছিলেন। আমি তো খারাপ। তাহলে কেন এমনটা ভাবেন। আর সালমানের ছোটভাই আমার পাঁচ বছরের ছোট। তিনি কেমন করে এ ধরনের ভাবনা ভাবেন।

তবে পয়েন্ট হলো তিনি এখন এটাকে আত্মহত্যা বলে মানতে শুরু করেছেন। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন এটা আত্মহত্যাই। কিন্তু তিনি এটা নিয়ে জল ঘোলা করতে চেয়েছেন, আমাকে ও আমার পরিবারকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারতে। কারণ তার কথা না মেনেই ইমন আমাকে বিয়ে করেছিলো। তার শোধ নিচ্ছেন তিনি। তার কথা হলো যে কোনোভাবেই হোক আমাকে অপরাধী করা। নতুন করে শাবনূরের নাম যোগ করেছেন। কারণ এখন পিবিআই বলে দিয়েছে শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে চাপে ছিলো সালমান। আসলে সেই ১৯৯৬ সাল থেকেই তিনি আসামীর তালিকা বাড়িয়ে চলেছেন। তার কথার কোনো ঠিক নেই, স্থিরতা নেই।

জাগো নিউজ : সালমানের মামা আলমগীর কুমকুম ও আরও অনেকেই একটা প্রশ্ন তুলেছেন যে আপনার মামী এই মামলার রাজসাক্ষী রুবি সুলতানাকে ডাকেনি পিবিআই। তাই তদন্ত পূর্ণ হয়নি......

সামিরা : প্রথমেই বলে রাখি রুবি সুলতানা আমার কেউ নয়। আমার তিন মামা, তারা তিনজনই চাইনিজ মেয়ে বিয়ে করেছেন, কানাডায় থাকেন। রুবি আমার বোনের শাশুরির এক দূর সম্পর্কের চাইনিজ আত্মীয়কে বিয়ে করেছেন। তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।

রুবি সুলতানা ফেসবুকে ফেসবুকে এসে হঠাৎ করে নিজের স্বামী ও ভাইকে সালমানের খুনি বানিয়ে মুখরোচক গল্প ছড়ালো। পরে তার পরিবার জানিয়েছে রুবি মানসিক ভারসাম্যহীন। সে চিকিৎসাও নিচ্ছে। পিবিআই হয়তো এ কারণেই তার বক্তব্য নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। এ নিয়ে পিবিআই কিন্তু ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারপরও প্রশ্ন তোলার মানে হচ্ছে বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার।

জাগো নিউজ : সালমানের মামা আরও একটি প্রসঙ্গ এনেছেন। তিনি বলছেন স্বামী আত্মহত্যা করছে দেখেও আপনি অজ্ঞান হয়ে যাননি.....

সামিরা : কেন সেন্সলেস হবো আমি। স্বামী মারা যাচ্ছে দেখে কী বউরা সেন্সলেস হয়ে যায়? নাকি সেটা সামলানোর চেষ্টা করে, সবাইকে ডেকে আনার চেষ্টা করে? কুমকুম মামা এত কথা বলেন, উনার এক ছেলে মারা গেছে। কই কখনো তো সেই ছেলের জন্য তাকে কাঁদতে দেখিনা। তিনি সালমান সালমান করেন সারাবেলা। সালমান তো তাকে মোটেও পছন্দ করতো না। আমার চেয়ে এসব আর কে বেশি জানে।

আসলে উনাদের কথার কোনো শেষ নেই। একেকবার একেকবার কথা বলেছেন। কখনো বলেছেন ঘটনার সময় আমি রুমে ছিলাম না। কখনো বলেছেন আমি মেকাপ করে সাজগোজ করা অবস্থায় ছিলাম। কখনো বলেছেন আমি পাশের রুমে ছিলাম। কিন্তু সত্যটা হলো আমি ওখানেই ছিলাম। ভাই রে ওই বাসায় কয়টা রুম ছিলো?

আর আমি কেন সেন্সলেস হবো? এখানে সেন্সলেস মানে কী আমাকে অজ্ঞান হয়ে যেতে হবে? ইমনের মামা হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন আমি স্বাভাবিক ছিলাম। ডাহা মিথ্যা কথা। দরজা খোলে ইমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেই তো আমি আতংকে চিৎকার-কান্নাকাটি শুরু করলাম। প্রশ্ন উঠেছে কেন ডাক্তার ডাকিনি, হাসপাতালে নিয়ে যাইনি। তখনও তো ভাবিনি যে ইমন আর নেই। তাকে নামিয়ে সবাই চেষ্টা করছিলাম জ্ঞান ফেরানোর।

আর ডাক্তার ডাকিনি কে বললো? বাসায় কোনো ল্যান্ডফোন ছিলো না। যে ফোনটা ছিলো সেটাও রাতে ইমন ভেঙে ফেলেছিলো। সাথে সাথে কাউকে ফোন করে ডেকে আনার উপায় তো ছিলো না। এগুলো তো কমন বিষয়। তারা জানেন না? নাকি বুঝেন না। আমার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকরা ছুটে এলো। কেউ নিচে গিয়ে একজন ডাক্তারকে ডেকে আনলো। ইমনের বাবা-মায়ের কাছে খবর দেয়া হলো। উনারা এলেন।

আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না এটা কেমন করে বলেন তারা? ওই রুমে কম করে হলেও ২৫ জন মানুষ ছিলো। যখন ইমনের বাবা, মা ও ছোট ভাই এলো তখন আমার কোলে ইমনের মাথা। আমি চিৎকার করে কাঁদছি। আমাকে কেউ স্বান্তনা দেয়নি। আমার শ্বশুর-শাশুরিও না। শাশুরি আমার পিছন দিক থেকে রুমে ঢুকেই আমার পিঠে একটা লাথি মারেন। অকথ্য ভাষায় গালি দিতে শুরু করেন। ইমনের ছোট ভাই সেও তো ধমকাধমকি করলো। সেই ঘটনা কাজের লোক ও উপস্থিত সবার সামনে ঘটেছে। পিবিআইয়ের কাছে জবানবন্দীতে অনেকে বলেছেও এই কথা।

তাদের সন্তান-ভাই হারিয়েছে, আর আমার? আমার তো স্বামী গেল। ২২ বছরের একটা মেয়ে বিধবা হলাম। কেউ কী সেদিন আমার কষ্টটা বুঝতে চেষ্টা করেছিলো। উল্টো রঙ চঙ মাখিয়ে আমাকে মক্ষীরানী সাজিয়ে দেশবাসীর কাছে স্বামীর খুনী হিসেবে পরিচয় করানো হলো। ২৪ বছর ধরে আমার সঙ্গে যে অবিচারটা করা হলো তার বিচার কে করবে? একজন নারী হিসেবে আমার এই লড়াইটা, সংগ্রামটা কেউ কী অনুধাবন করতে পারবেন? যারা কোনো তথ্য প্রমাণ না পেয়েই কেবল গল্প আর মনগড়া তথ্যের আবেগে ভেসে আমার শাস্তি চেয়ে আন্দোলন করেছেন, আমাকে ও আমার পরিবারকে গালাগালি করেছেন তাদের কাছে আমার এই প্রশ্নটা রইলো।

জাগো নিউজ : সালমানের মা নীলা চৌধুরী আরও একটি প্রশ্ন তুলেছেন, সালমান শাহ যদি আত্মহত্যা করে থাকেন তাহলে তাকে হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজারে কীভাবে দাফন করা হলো? মাজারে তো আত্মহত্যার মৃতদের দাফন নিষেধ.....

সামিরা : সেটা তো তাদেরই জানা উচিত কীভাবে সালমানকে তারা সেখানে দাফন করেছে। আপনারা প্রশ্ন করুন। কেন তাড়াহুড়ো করে এভাবে তাকে দাফন করা হলো? আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি তো লাশের সঙ্গে। তারা সত্য কথা লুকিয়ে মাজারের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এটা তাদের দায়, আমার নয়।

তবে আমি খুশি সালমানের দাফন মাজারে হওয়াতে। একবার এক সিনেমার শুটিংয়ে সিলেট গিয়েছিলাম আমরা। সেবার শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারত করেছিলাম দুজনে। হঠাৎ সালমান বললো সে মারা গেলে তাকে যেন এখানে দাফন করা হয়। যেভাবেই হোক তার এই ইচ্ছেটা পূরণ হয়েছে।

জাগো নিউজ : সালমান শাহের পরিবার থেকে বলা হচ্ছে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন মানেন না তারা। বিচার চালিয়ে যাবেন। হয়তো উচ্চ আদালতে যাবেন.....

সামিরা : আমি তো আগেই বলেছি। তারা কিছুই মানবে না। তাই বলে সত্য মিথ্যে হয়ে যাবে না। দেশের আইন ব্যবস্থার উপর তাদের ভরসা নেই। ডিবির তদন্ত মানেই, সিআইডিরটাও মানেনি, র্যাবকে দিতে চেয়েছিলো কিন্ত এটা র্যাবের মামলা নয় বলে র্যাব নেয়নি, জজকোর্ট মানেনি, পিবিআই মানছে না। তাহলে এখন কার কাছে যাবে? কে করবে তদন্ত? তারা নিজেরাই? নাকি জনগণ? জনগণ সব কথা তো এতদিন জানতো না। এখন জানছে। জনগণের রায়ও তাদের পক্ষে যাবে না।

এলএ/এমএস

আরও পড়ুন