ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

পরিবেশ যখন নায়িকাদের শত্রু

প্রকাশিত: ০৭:৫৮ এএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বর্তমানে চলচ্চিত্রের আলোচিত ঘটনা নতুন ছবি বুলবুল বিশ্বাসের ‘রাজনীতি’ ছবি থেকে লাক্স সুন্দরী পিয়া বিপাশার সরে দাঁড়ানো। এ নিয়ে বিস্তর জল ঘোলা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। কেউ বলছেন ‘চুক্তি’ ভঙ্গ করায় পিয়াকে বাদ দেয়া হয়েছে। আবার পিয়া বলছেন, অনৈতিক প্রস্তাব দেয়ায় ছবিটি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি।

ঘটনা যাই হোক, চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের দাবি ঢাকাই ছবিতে ডিজিটাল হাওয়া লাগলেও বদলায়নি এর পরিবেশ। ভদ্র ও শিক্ষিত পরিবারের অনেক সুন্দরী-মেধাবী মেয়েরা যোগ্যতা থাকা সত্বেও পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে না পারায় হারিয়ে যাচ্ছেন অকালেই। পিয়া বিপাশা সেই তালিকার সর্বশেষ নাম।

চলচ্চিত্রের পরিবেশ বলতে এর চারপাশটাকেই বুঝে থাকি। যারা ইন্ড্রাষ্ট্রিটা পরিচালনা করছেন তারা, সহকর্মী, চলচ্চিত্রের গল্প, চরিত্র, এখানে ভাব বিনিময়ের ভাষা-ইত্যাদি। আর আমাদের এখানে পরিবেশের এই উপাদানগুলো নায়কদের জন্য সার্বজনীন হলেও নায়িকাদের ক্ষেত্রে নয়।

বাণিজ্যিক ভাবনার বাইরে যারা একটু অভিনয় নির্ভর অভিনেত্রী, যারা রচিশীল দর্শকদের কাছেও নিজেকে জনপ্রিয় করে তুলতে চান তারা তাল মিলাতে পারে না। অবশ্য সুবর্ণা মুস্তাফা থেকে শুরু করে শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি- অনেকেই জোর করে তাল মিলানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কেউই সাফল্য পাননি।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, এ দেশে চলচ্চিত্রের শুরুর দিকে নায়িকা হয়ে কাজ করাটা মেয়েদের জন্য সহজ ছিলো না। তখন কোনো মেয়ে অভিনয় করে পেট চালাবে সেটি ভাবাটা ছিলো রীতিমত ভয়ংকর বিষয়। কিন্তু সময়ের স্রোতে প্রেক্ষাপট বদলেছে আজ। ষাট বছরের চলচ্চিত্র ইতিহাসে আমরা পেয়েছি শতাধিক নায়িকা বা অভিনেত্রী। শুরু থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত এ জায়গাটিতে রাজত্ব করেছেন শিক্ষিত-ভদ্র ও বনেদি পরিবারের মেয়েরা।

কিন্তু সময়ের স্রোতে ঢাকাই ছবি তার গৌরব হারিয়েছে। নষ্ট হয়েছে এর পরিবেশ। আজকাল যাদের নায়িকা বলে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই স্কুল পেরিয়ে কলেজের বারান্দায় পা রাখলেও কলেজ পার হননি। তাদের অভিনয় বলতে গায়ে পড়া ন্যাকামি, কান্না আর নাচের নামে শারীরিক কসরত। অবশ্য ঢাকাই ছবিতে নায়িকাদের চরিত্রের বহরটাও এটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এখানে নায়িকারা আসে গল্পের কাটতি বাড়াতে, নায়কের জোড়া মিলাতে। নারী প্রধান চলচ্চিত্র আমাদের ইন্ড্রাষ্ট্রিতে উল্লেখ করার মতো  নেই।

তারমধ্যে যারা ভিন্ন ধারার ভাবনা নিয়ে কিছু ভালো গল্পের ছবি নির্মাণ করতে আসছেন তাদের ছোট পর্দার নির্মাতা আখ্যা দিয়ে পাশ কাটিয়ে রাখা হচ্ছে। ফলে ভালো গল্পের দেখা মিলছে না। চাহিদা হারাচ্ছে অভিনয় জানা শিক্ষিত ও রুচিশীল দর্শকদের নায়িকারা।

লক্ষ করার বিষয় গত এক দশক ধরেই এক জায়গাতেই আটকে আছে সব। সেই জোড়াতালির গল্প, গান দিয়ে সময়ক্ষেপন, নির্মাণে মুন্সিয়ানার অভাব। সেইসাথে আজও আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পটি শিক্ষিত-রুচিশীল শিল্পীদের জন্য শতভাগ আশ্রয় হয়ে উঠতে পারেনি।

বিশেষ করে একটু ভিন্ন ভাবনার-রুচির মেয়েরা এখানে এসে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে পারছেন না। বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে তারা যাত্রা করলেও হারিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন চলচ্চিত্রের পরিবেশের সাথে তাল মিলাতে না পেরে। তাদের মধ্যে উল্লেখ করা যায় ফারহানা মিলি, শখ, রোমানা, বিন্দুদের নাম। এদের মধ্যে তিনজনই হালের সেরা নায়ক শাকিবের বিপরীতে কাজ করেছেন। আর ফারহানা মিলি উপহার দিয়েছেন বিগত পাঁচ বছরের সবচেয়ে ব্যবসা সফল ছবি ‘মনপুরা’। কিন্তু চলচ্চিত্রের বাণিজ্যিক ভাষাটা রপ্ত করতে না পারায় থিতু হতে পারেননি তাদের কেউ-ই। তাই অনেক আলোচনার জন্ম দিতে পারলেও তারা এখন চলচ্চিত্রের বাইরে। বিন্দু তো ঘোষণা দিয়েই সবরকম অভিনয় ছেড়েছেন। রোমানা আছেন বিদেশে। আর শখেরও আর নাকি শখ নেই সিনেমার নায়িকা হবার। মিলি ব্যস্ত ছোট পর্দা নিয়েই।

একইভাবে উল্লেখ করা যায় লাক্স সুন্দরী বিদ্যা সিনহা মিম ও ফারিয়ার কথা। যদিও দুজনেই অভিনয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ফারিয়া কাজ করেছিলেন আকাশ কতদূরে ছবিটিতে। ইমপ্রেসের এই ছবিটি বেশ আলোচনার জন্ম দিলেও হালে পানি পাননি নায়িকা। তাকে নিয়ে আগ্রহ দেখাননি নির্মাতারা। বরং বাণিজ্যিক ধারার নির্মাতাদের দাবি, ফারিয়া ছবি নয়, করেছেন টেলিফিল্ম। অবশ্য তারা স্বনামধণ্য চিত্রনির্মাতা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীকেও টেলিছবির পরিচালক বলে থাকেন! এদিকে হুমায়ূন আহমেদের ‘আমার আছে জল’ ছবি দিয়ে যাত্রা শুরু করা মিমও চেষ্টা করছেন নিজেকে চিত্রনায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। কিন্তু সাফল্য সেভাবে ধরা দিচ্ছে না। শাকিবের সাথে ছোট কাপড় পড়ে ‘ফুল কমার্শিয়াল’ টাইপের ছবিও তিনি করেছেন; তবে চিত্রনায়িকা তকমাটা দখল করতে পারেননি। পারেননি বাণিজ্যিক ধারার পরিচালকদের মন জয় করতেও। যদিও বাপ্পির বিপরীতে ওয়াজেদ আলী সুমনের ‘সুইটাহার্ট’ ছবিটি শতভাগ বাণিজ্যিক ছবি। হতেই পারে এটি চিত্রনায়িকা মিমের ক্যারিয়ারের জন্য তুরুপের তাস।

উল্লেখ করা যায়, জয়া আহসান, রুহি, মৌসুমী হামিদ, জাকিয়া বারি মম, প্রসূন আজাদসহ আরো বেশ কজন অভিনেত্রীর নাম। যারা ছোটপর্দা থেকে রুচিশীল দর্শকের নায়িকা হয়ে কাজ করে চলেছেন, সাড়াও পাচ্ছেন। কিন্তু ইন্ড্রাষ্ট্রি তাদের নায়িকা হিসেবে মেনে নিতে নারাজ।

দেশের মিডিয়াগুলোও এসব অভিনেত্রীদের নামের আগে ব্যবহার করছেন মডেল-অভিনেত্রী, কখনো বা লাক্স সুন্দরীর উপাধি। কিন্তু পরপর চারটি ফ্লপ ছবি উপহার দেয়ার পরও পরীমনির নামের আগে লাগছে ‘চিত্রনায়িকা’ খেতাব! এইসব বৈরি পরিবেশের সাথে মোকাবিলায় না পেরে একটা সময় হারিয়ে যান নায়িকারা। শখ, বিন্দু, রোমানা, শায়না আমিনদের পর সেই তালিকায় নাম উঠেছে পিয়া বিপাশার। খুব শিগগির হয়তো যোগ হবে আরো কিছু নাম। এটা কখনোই একটি ইন্ড্রাষ্ট্রির জন্য সুখের বিষয় নয়।

তাই, শিল্পী সংকটের এই দুর্দিনে নতুন নতুন মুখের আমদানি না বাড়িয়ে পুরোনো এবং প্রতিষ্ঠিত মুখগুলোকে টিকে থাকার সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কোনো আপত্তিজনক খবরে নয়, ঢাকাই ছবি দেশজুড়ে আলোচিত হোক সাফল্য আর অতীতের জৌলুস ফিরে পাওয়ায়।

এলএ/এমএস