ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

বোনদের নিয়ে চঞ্চল চৌধুরীর আবেগঘন স্ট্যাটাস

বিনোদন প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:১৩ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি বড় উৎসব ভাইফোঁটা। এই উৎসব ভ্রাতৃদ্বিতীয়া অনুষ্ঠান নামেও পরিচিত। কার্তিক মাসের শুক্লাদ্বিতীয়া তিথিতে অর্থাৎ কালীপূজার দুদিন পরে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সেই আজ পালিত হচ্ছে ভাইফোঁটা। এই দিনটিতে শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় ভাইফোঁটা নিতে পারেননি জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী।

প্রিয় বোনদের কাছে ভাইফোঁটা না নিতে পেরে দীর্ঘ এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। তার লেখাটি পড়ে যে কারো চোখ ছল ছল করে উঠবে। লেখাটিতে ফুটি উঠেছে উৎসবের দিনে পরিবারের সঙ্গে না থাকতে পারার কষ্ট ও জীবনযুদ্ধ করা এক সংসারের গল্প।

চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, ‘আমার বোনদের নিয়ে কোনো দিন তেমন কিছু লেখা হয়নি। আমরা পাঁচ বোন, তিন ভাই। আমি সবার ছোট, অনেক আদরের। পাঁচ বোনকে ডাকি দিদি, মনদি, রাঙাদি, সোনাদি, খুকদি। আজ আমি বা আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সব কৃতিত্ব আমার এই বোনদের, ভাইদের। আমার বাবা-মা যে কত কষ্ট করে প্রত্যেকটা সন্তানকে বড় করেছেন, সে সব আজ অতীত।

আমার মা-বাবার সাথে আমাদের এই জীবনযুদ্ধে প্রথম সঙ্গী হয়েছিল আমার বড় দিদি ও তার শ্বশুর বাড়ির পরিবার। আমরা প্রায় সবগুলো ভাইবোন কমবেশি পড়ালেখা করেছি আমার দিদি বাড়ি বেলগাছী, রাজবাড়িতে। তারপর আমার মনদি তার ছোট্ট চাকরির সবটুকু বেতন দিয়ে, সোনাদি তার শ্বশুর বাড়ি থেকে জমানো লুকানো টাকা দিয়ে আমাদের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছে।

আমার মনদি এখনো প্রত্যেকবার আমার বাসায় আসার সময় পোটলা বেঁধে গ্রামের বাড়ি থেকে সবজি, আম, কাঁঠাল, পেঁপে যখন যা পায়, নিয়ে আসে আমি রাগারাগি করি, বলি। তুই এত কষ্ট করে, এত বড় বড় ব্যাগ নিয়ে, এত রাস্তা পার হয়ে কেন আসিস? রাস্তায় যদি কোনো বিপদ হয় তোর। এগুলো তো ঢাকায়ই পাওয়া যায়। মনদি হেসে দিয়ে বলে, এ ভাই, ঢাকায় তুরা কি খাস না খাস। আমি এগুলো শুদ্ধ’র জন্যি আনছি, তোর তাতে কি? আমি আর কিছু বলতে পারি না এই ভালোবাসা আর স্নেহ দেখে গোপনে চোখ মুছি।

আমাদের বোনদের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়রা আসলে মানুষ নয়, তারা দেবতা। আমার বড় দিদি আসলে মাতৃরূপী দুর্গা। শুধু আমাদের ভাইবোন নয়, আমাদের সন্তানদেরও এখনো লালন পালন করে চলছে।

আমি আমার নতুন সিনেমা ‘হাওয়া’র শুটিংয়ে এখন সেন্টমার্টিনে সাগরের মাঝখানে। অনেক দিন এখানে থাকতে হবে। প্রায় প্রতিদিনই আমার কোনো না কোনো বোন ও ভাই আমাকে ফোন করে বলবে, এ ভাই তুই খাইছিস, এ ভাই তুই রুমে আইছিস, এ ভাই তুই ঘুমাইছিস, এ ভাই তোর শরীর ভালো আছে? আমি শুধু হ্যাঁ হ্যাঁ করি আর ফিরে যাই সেই ছোটবেলায়। কারণে অকারণে কতবার জড়িয়ে ধরতাম তোমাদের।

অনেক দুষ্টু ছিলাম ছোটবেলায়, এখন কিছুটা কমেছে। আমার ছোট দিদি খুকদির সাথে প্রায় প্রতিদিন রুটিন করে মারামারি করতাম। মাছের গাদা পেটি নিয়ে, ডিম ভাগাভাগি নিয়ে, বই নিয়ে। ও আমার এক ক্লাস ওপর পড়তো, পিঠাপিঠি ভাইবোন আমরা। আমার সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগতো, আমি কোনো দিন স্কুলে নতুন বইয়ের মালিক হতে পারিনি। আমাদের বাবার সেই আর্থিক সঙ্গতি ছিল না আমাদের নতুন বই কিনে দেয়ার। খুকদিকে বাবা যে পুরনো বই কিনে দিতো, ওর এক বছর পড়ার পর সেই ছেড়া লুচি বইগুলো আমাকে পড়তে হতো, এ কারণেই ওর সাথে বেশি মারামারি হতো।

আর আমার রাঙাদি ছোটবেলা থেকেই মাটির মানুষ। মমতায় ভরা মুখ, আমার সাথে কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেলে পড়ালেখায় খুব মেধাবী ছিল। আমার ছেলেকে এখন রাঙাদি প্রায়ই স্কুল থেকে নিয়ে আসে। বৃন্দাবন দা আর খুশি প্রথম যে বার আমাদের গ্রামের বাড়ি যায়, তখন বলেছিলেন, তুমি ভাগ্যবান, এমন ভাইবোন বাবা-মা পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের। আসলেই তাই, আমার শতজনমের সৌভাগ্য, আমি এমন বোনদের ভাই হয়ে জন্মেছি।

আজ ভাইফোঁটা। অন্তত শত ব্যস্ততার মধ্যেও তোমাদের আশীর্বাদ আর আদরের স্পর্শ পেতে তোমাদের কাছে যাই, ছোটবেলার মতোই এখনো তোমাদের জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে। এবার তোমাদের ভাইফোঁটা নিতে পারলাম না। এজন্য এই লেখাটা লিখতে গিয়ে বারবার চোখ জলে ঝাপসা হয়ে আসছে। বিশাল এই সমুদ্রের মাঝখান থেকে এটুকু খুব ভালো করেই বুঝি, আমার প্রত্যেকটা বোনের মন সমুদ্রের চেয়ে বড়, আকাশের চেয়ে উদার। আবার যদি জন্ম নেই, তোমাদের মতো ভাইবোনের ভাই হয়েই যেন জন্মাই। আমার কাছে তোমরা আমার শুদ্ধ’র মতোই। অনেক আদরের। অনেক ভালোবাসার।’

‘দেবীর’ পর নায়ক চঞ্চল চৌধুরীর নতুন ছবি ‘হাওয়া’। ছবিটি নির্মাণ করছেন মেজবাউর রহমান সুমন। ‘হাওয়া’ এই নির্মাতার প্রথম সিনেমা। সিনেমাটিতে আরও অভিনয় করছেন সুমন আনোয়ার, শরিফুল রাজ, নাসির, বাবলু বোস, রিজভী, সোহেল, মাহমুদ, নাফিসা টুসি প্রমুখ। ‘হাওয়া’র ক্যামেরায় আছেন ‘মনপুরা’ ও ‘দেবী’ সিনেমার ক্যামেরাম্যান কামরুল হাসান খসরু।

এমএবি/এলএ/জেআইএম

আরও পড়ুন