ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

আমাদের একজন ডলি জহুর আছেন

বিনোদন প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০১:৩২ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৯

অনবদ্য এক অভিনেত্রীর নাম ডলি জহুর। পর্দায় তিনি সবসময় প্রাণবন্ত। চার যুগেরও বেশি সময় ধরে মুগ্ধ করে রেখেছেন দর্শকদের। আপাদমস্তক একজন অভিনেত্রী, সত্যিকারের একজন শিল্পী তিনি। একইসঙ্গে চমৎকার বন্ধুসুলভ মানুষ।

নব্বই দশক থেকে এই প্রজন্মের তারকারা তাকে মা বলে ডাকেন। তিনিও স্নেহ আর মায়ায় সবাইকে কাছে টেনে রাখেন। অভিনয়ের আঙিনাটাকেও তিনি ভালোবাসেন সন্তানের মতো।

আজ সেইসব সন্তানদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন তিনি। কারণ, আজ ১৭ জুলাই ডলি জহুরের জন্মদিন। চিত্রনায়ক ওমর সানি, চিত্রনায়িকা পপিসহ অনেক তারকা ফেসবুকে ডলি জহুরকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে নানারকম পোস্ট করছেন।

ডলি জহুরের ক্যারিয়ার দারুণ সমৃদ্ধ। ১৯৭৪-৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন নাট্যদল ‘নাট্যচক্র’তে যুক্ত হন। ওখান থেকেই নিয়মিত অভিনয়ের শুরু। নিজের অভিনয় নিয়ে ডলি জহুর এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে সিদ্ধান্ত হলো আমাদের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে নাটক করা হবে। আমি যেহেতু এলাকায় নাটক করতাম ভাবছিলাম নাটকে নাম লিখাব; তার আগেই শেখ কামাল ভাই (বঙ্গবন্ধুপুত্র) বলল, ‘তুই না নাটক করিস, এখানে নাম লিখ।’

বিভাগের এই নাটকে অভিনয় করতে দেখেই হয়তো হামিদ ভাই বা নাট্যচক্রের কেউ আমাকে নাট্যচক্রে নিয়ে আসেন। নাট্যচক্রে প্রথম ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নাটকে অভিনয় করি। ওখান থেকে পরে আমার এক বন্ধুর (আমার হাজবেন্ড) সঙ্গে গেলাম কথক নাট্যগোষ্ঠীতে। ওখানে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রাগৈতিহাসিক’ করলাম। এই নাটক বেশকিছু প্রদর্শনীর পর বন্ধ হয়ে যায়।

এই সময়ে মামুন ভাই (মামুনুর রশীদ) আমাকে তার বাংলা থিয়েটারে ‘মানুষ’ নাটকে কাজ করার কথা বলেন। মামুন ভাই জানালেন আমাকে মাথায় রেখে স্ক্রিপ্ট তৈরি করেছেন। আমি মানুষ নাটকে কাজ শুরু করলাম। নাট্যচক্রের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ম. হামিদ ভাই আর ভাবী আমাকে ‘অনুস্বারের পালা’ নাটকে অভিনয় করতে বললেন। এ নাটকেও কাজ করলাম। তবে ‘মানুষ’ নাটকে নিয়মিত শো করছিলাম।

মানুষ নাটকের শো করতে একবার গেলাম দেশের বাইরে। ওখানে আরণ্যকের ‘ইবলিশ’ নাটকেরও শো হয়। নাজমা ভাবীর অবর্তমানে ‘ইবলিশ’ নাটকেও অভিনয় করলাম। পরে দেশে এসে আরণ্যকের ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকে প্রিন্সেস বলাকার চরিত্রে অভিনয় করলাম। এভাবেই আরণ্যকের কর্মী হয়ে গেলাম। তখন অভিনয়ে বেশ নিয়মিত আমি।’

এরপর টিভি ও চলচ্চিত্রে ব্যস্ততা বেড়েছে এই অভিনেত্রীর। আশির দশকে হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘এইসব দিন রাত্রি’ নাটকে অভিনয় করে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেন ডলি জহুর। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘অসাধারন’।

অসংখ্য জনপ্রিয় নাটক-ছবিতে তার অভিনয় কালজয়ী হয়ে আছে। তারমধ্যে ‘আগুনের পরশমনি’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘সন্তান যখন শত্রু’, ‘রং নাম্বার’, ‘ঘানি’, ‘দ্বারুচিনি দ্বীপ’, ‘নিরন্তর’, ‘এবাদত’ ইত্যাদি ছবিগুলো উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৯২ সালে ‘শঙ্খনীল কারাগার’ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান।

প্রয়াত অভিনেতা জহুরুল ইসলামের সঙ্গে ডলি জহুরের বিয়ে হয় ১৯৭৬ সালের ৫ নভেম্বর। বিয়ের নয় বছর পর তাদের ঘর আলোকিত করে পুত্র রিয়াসাতের জন্ম হয়। ডলি জহুর তার স্বামীকে হারান ২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর। সেই থেকে জীবনের কঠিন সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে একমাত্র সন্তান রিয়াসাতকে মানুষ করেছেন।

তার একমাত্র ছেলে রিয়াসত আজিম স্বস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়া থাকেন। তিনি ওখানে শিক্ষকতা করেন। ছেলের সঙ্গেই বছরের বেশিরভাগ সময় কাটে ডলি জহুরের। কালেভদ্রে দেশে আসেন। সবার সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু নাটকে কাজ করতে খুব একটা দেখা যায় না।

আর সিনেমায় একসময়ের ব্যস্ত এই অভিনেত্রী দীর্ঘদিন কোনো সিনেমাতে কাজ করেন না। কিছু অভিমান মনে ধরে রেখে তিনি সিনেমা ছেড়েছেন। বছর দুই আগে জাগো নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘২০১২ সালে হজে যাওয়ার আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, দেশে ফিরে আর চলচ্চিত্রে অভিনয় করবো না। তারপর থেকে আমি আর বড় পর্দায় অভিনয় করিনি। আর আশা করি কাজ করবও না। যে কদিন বাঁচি চলচ্চিত্র থেকে দূরে থাকবো।

ইন্ডাস্ট্রিটা আর আগের মতো নেই। কাজ, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন বলতে কিচ্ছু দেখা যায় না। কয়জন সিনিয়র শিল্পী নিয়মিত কাজ করেন এখন চলচ্চিত্রে? সবাই সব নষ্ট করে দিয়ে কেবল ভাবে- ছবি কেন চলে না!’

পর্দার নন্দিত জননী ডলি জহুর, শান্তিতে-সুখে আর আনন্দের সমৃদ্ধিতে বেঁচে থাকুন। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে তার জন্মদিনে শুভেচ্ছা। নিজেকে যতোই তিনি আড়ালে রাখুন এদেশের অভিনয়ের আঙিনা চিরদিন গর্ব করে বলবে- আমাদের একজন ডলি জহুর আছেন।’

এলএ/এমকেএইচ

আরও পড়ুন