ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বছরে ক্ষতি ১৯ লাখ টাকা

প্রকাশিত: ০৯:০০ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

পুরান ঢাকার একমাত্র সরকারি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হওয়া এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র যে উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়েছিল তা বাস্তবায়ন তো হয়নি, বরং প্রতিবছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগদ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।

যে মঞ্চে নাট্যকর্মীদের সংলাপে উত্তাপ ছড়ানোর কথা, যেখানে মঞ্চকর্মীদের নাটক উপভোগ করার জন্য দর্শণার্থীদের নাটক দেখার জন্য উপচেপড়া ভিড় থাকার কথা-সেই জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। ভবনের নীচতলার পার্কিংয়ের পাশে দেয়ালে আঁকা জহির রায়হানের একটি ছবি অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে। যার নামে এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, তার ছবিটিই যদি অবহেলিত অবস্থায় থাকে, তাহলে অন্যান্য বিষয়ের কী হাল হবে তা ভাবায় দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানা সংলগ্ন পুরোনো লোহার পুলের ৯০ কেবি গেন্ডারিয়ায় সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চা, সংস্কৃতির বিকাশের জন্য এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ২০০৮ সালের ২২ মার্চ আনুষ্ঠিকভাবে যাত্রা শুরু করে। শুরুতে এ সংস্কৃত চর্চা কেন্দ্রের এ ঝিমানো অবস্থা ছিল না। যখন এটি চালু হয় তখন বেশ নাট্য মঞ্চায়ন হতো। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রতিনিধি না থাকা, অতিরিক্ত ভাড়া, পরিবহন ব্যবস্থা ভালো না থাকা, কেন্দ্রের ভিতরে ডেকোরেশন না থাকা, কেন্দ্রে ঘরের শীতাতপ যন্ত্র নষ্ট থাকার কারণে এটি ঝিমিয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

কেন্দ্রের অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে অবিভক্ত ঢাকার প্রয়াত প্রথম নির্বাচিত মেয়র হানিফ এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রথম ভিত্তি স্থাপন করেন গেন্ডেরিয়ায় একটি দ্বিতল কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের মাধ্যমে। ২০০৮ সালের ২২ মার্চে উদ্বোধন করার এক বছর পর ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠানের জন্য এর ভাড়া দেয়া শুরু হয়। এতে সাত হাজার স্কয়ার ফিটের অডিটরিয়ামে মোট ৪০৮টি আসন রয়েছে।

সরেজমিনে আরো জানা যায়, পুরান ঢাকাকে সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চার জন্য নয় একর জায়গার উপর দুই ধাপে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা বিশিষ্ট জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৮ সালের মার্চে। সে বছরই ২২ মার্চ এর উদ্বোধন করেন তৎকালীন অবিভক্ত ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। তখন পুরান ঢাকাবাসী ভেবেছিল, এ এলাকায় সংস্কৃতির পরিবর্তন আসবে। কিন্তু দীর্ঘদিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে জনপ্রতিনিধি না থাকায় এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি অযত্নে পড়ে আছে। তবে পুরান ঢাকাবাসী এখন আশায় বুক বাধছে ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র সাবেক প্রয়াত মেয়র হানিফের পুত্র সাঈদ খোকন নতুন মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই। তাদের ধারণা হানিফপুত্র এ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের যত্ন নেবেন।

জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী জানান, আগে এখানকার হল ভাড়া ছিল পাঁচ হাজার টাকা। এখন এখানে মূল ভাড়া ১২ হাজার টাকার সঙ্গে অতিরিক্ত এক হাজর ৮ শত টাকা ভ্যাট গুণতে হয়। তাই এখন কেউ ভাড়া নিতে তেমন একটা আসেন না। অতিরিক্ত টাকা আর সার্ভিস খারাপের জন্য কেউ এ সংস্কৃতিক কেন্দ্র ভাড়া নিতে চান না।

তাছাড়া এখানকার ডেকোরেশন বিশেষ করে শীতাতপ যন্ত্রে ১৮টির মধ্যে ১৪টি নষ্ট থাকায় এ কেন্দ্র কেউ কোনো কারণে একবার ভাড়া নিলে দ্বিতীয়বার আসেন না বলে জানান এখানকার লাইটিং এবং সাউন্ড সার্ভিসের দায়িত্বে থাকা আলমগীর নামের এক কর্মী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুরান ঢাকার একজন সংস্কৃতিকর্মী ক্ষোভ নিয়ে এ প্রতিবেদকে বলেন, যেখানে শিল্পকলা একাডেমিতে সকল সুযোগ সুবিধাসহ একটি নাট্যদল ছয় হাজার টাকার মধ্যে হল পাচ্ছে, সেখানে গেন্ডারিয়ায় গিয়ে একটি নাট্যসংগঠন এতো বেশি ভাড়ায় হল নেবে কেন? এই বিষয়টি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকেও বুঝতে হবে। সেখানে দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তার সুদৃষ্টি প্রয়োজন। কারণ শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশের জন্য সিটি কর্পোরেশনেরও পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন।

জহির রায়হান সাংস্কৃকিত কেন্দ্রর সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এর তত্ত্বাবধায় অমরেশ মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, এখানে সিটি কর্পোরেশনের প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল ও কর্মকর্মচারীদের বেতন বাবাদ দুই লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করতে হয়। আর মাসে বড় জোড় তিনটি শো হয়। সে হিসেবে বছরের গড়ে ২৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আয় হয় চার লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। সেবার মান খারাপ হওয়ায় কেউ একবার ভাড়া নিলে দ্বিতীয়বার আসে না। এখানকার এসি অধিকাংশই নষ্ট। আমি প্রশাসনকে অনেকবার এ অবস্থার কথা জানিয়েছি।

বিএ