ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

একতার অভাবেই শোবিজের এই দুরবস্থা

প্রকাশিত: ০২:৩২ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫

দৈনিক আমাদের অর্থনীতির বার্তা সম্পাদক রিমন মাহফুজ। ছাত্রাবস্থায় ১৯৮৩ সালে দৈনিক খবরের গফরগাঁও প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর নিজেকে তিনি নিয়ে এসেছেন অনেকটা পথ। বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন তারকা কাগজের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন।

এছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির (বাচসাস) সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সংস্কৃতিবিষয়ক সাংবাদিকতায় উজ্জ্বল এই মানুষটি মুখোমুখি হয়েছেন জাগো নিউজের। কথায় কথায় জানালেন নিজের পেশা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নানা বিষয় সম্পর্কে। সঙ্গে ছিলেন লিমন আহমেদ
জাগো নিউজ : শুরুতেই জানতে চাইব এ পেশায় আপনার কীভাবে আগ্রহ জন্মালো?
রিমন : স্কুলে পড়া অবস্থায় সাংবাদিকতা পেশার প্রতি আগ্রহ জমে। শিশু-কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সক্রিয় সদ্যস্য থাকা অবস্থায় সমাজের বিভিন্ন সমস্যা-অনিয়ম নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় পরিবর্তে এই পেশায় যুক্ত হতে আগ্রহী করে তুলে।

জাগো নিউজ : কোন পত্রিকা দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন?
রিমন : ছাত্রাবস্থায় ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত আজকের বাংলাদেশের গফরগাঁও প্রতিনিধির মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু।
Rimonজাগো নিউজ : তারপর....?
রিমন : তারপর আজ অবধি অনেকগুলো পত্রিকায় কাজ করেছি। তারমধ্যে ১৯৮৩ সালে দৈনিক খবরে গফরগাঁও প্রতিনিধি। এরপর কাজের ধারাবাহিকতায় পরবর্তিতে ঢাকায় ১৯৯৭ সালে দৈনিক ভোরের কাগজে শিক্ষানবিস প্রতিবেদক হিসেব কাজ শুরু করি। ১৯৯৮ সালে শিশুতোষ পত্রিকা কিশোর ভুবনে সহকারী সম্পাদক, ২০০২ সালে দৈনিক জনকণ্ঠে নিজস্ব প্রতিবেদক, ২০০৪ সালে দৈনিক খবরে নিজস্ব প্রতিবেদক ও ২০০৭ সালের মার্চে দৈনিক আমাদের সময়ে বিনোদন প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেই। বর্তমানে দৈনিক আমাদের অর্থনীতির বার্তা সম্পাদক পদে কর্মরত। পাশাপাশি বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন তারকা কাগজের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি।

জাগো নিউজ : বর্তমানের কর্মস্থলে কাজটি কেমন উপভোগ করছেন?
রিমন : পেশা যেহেতু সাংবাদিকতা সেহেতু সব জায়গায় মানিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি। তবে বিনোদনের পাশাপাশি বার্তা সম্পাদক হিসেবে প্রমোশন পাওয়ায় দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে ভালোই উপভোগ করছি।
Rimonজাগো নিউজ : দিন দিন গান-নাটক-চলচ্চিত্র; সর্বোপরি আমাদের বিনোদন অঙ্গনটাই অস্থির হয়ে উঠছে। সবাই বিদেশি সংস্কৃতির প্রতি ঝুঁকছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
রিমন : হ্যাঁ, আগের চেয়ে এখন আমাদের সাংস্কৃতি অঙ্গন কিছুটা অস্থির। তবে এটা সাময়িক। দেশে এখন শিক্ষিত নতুন পরিচালক-অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আসছেন। পাশাপাশি অভিজ্ঞ নির্মাতা, অভিনেতা-অভিনেত্রী রয়েছেন। সবার প্রচেষ্ঠায় আবার ঘুরে দাঁড়াবে এই অঙ্গন; এই বিশ্বাস করি আমি। আর দেশে এখন প্রচুর টিভি চ্যানেল আসছে, এক সময় বিদেশি সংস্কৃতির প্রতি আমাদের সমাজ বেশি ঝুঁকবে না বলেই আমার ধারনা। তবে সেখানে মান সম্পন্ন কাজ থাকতে হবে। অনুকরণ না করে মৌলিক কাজের প্রতি মনযোগী হতে হবে। তুমুল প্রতিযোগিতার মধ্যেই আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। কারণ আকাশ সংস্কৃতিতো বন্ধ করতে পারবেন না। তার সাথে মানিয়ে নিয়েই আমাদের এগিয়ে চলতে হবে।

জাগো নিউজ : দেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা বিশেষ করে বলতে হয়। ছবি হচ্ছে প্রচুর, প্রচুর নতুন মুখ আসছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু সেসব হলে ব্যবসা করছে না। কী কারণ আছে বলে মনে হয়?
রিমন : ব্যবসা করছে না এটা যেমন সত্য, তেমন সত্যি ব্যবসা করার মতো ছবি আমরা বানাতে পারছি না। সর্বত্রই ফাঁকা আওয়াজ হচ্ছে। সেলিব্রেটি বাড়ছে ফেসবুকে। কিন্তু বাস্তবতায় সবই অসাড়। পুরোনোরা বেশিরভাগই কাজ ছেড়েছেন। নতুন যারা এসেছেন এবং যারা নির্মতা তারা সবাই নকল ছবি করছেন, তাই ব্যবস্যা হচ্ছে না। আমাদের তুমুল প্রতিযোগিতা করতে হবে। কিন্তু সেইদিকে না গিয়ে এখন যারা ছবি করছেন তারা ভারতীয় ছবি নকল করছেন। শর্টকাটে বিখ্যাত হওয়ার পথ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। সেখানেই গলদটা থেকে যাচ্ছে। কারণ এই ছবিগুলো দর্শক আকাশ সংস্কৃতির কারণে আগেই দেখে ফেলেছে। নকল বাদ দিয়ে মৌলিক কিছু করতে হবে। তবেই সম্ভব এর থেকে পরিতান পাওয়।
Rimonজাগো নিউজ : চলচ্চিত্র তথা সংস্কৃতি অঙ্গনের উন্নয়ন ও বিকাশে সরকার কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে?
রিমন : এখানে সরকারি ভূমিকাটা না যত গুরুত্বপূর্ণ তার থেকে প্রাইভেট সেক্টরের ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সরকার তো ছবির ব্যবস্যা করিয়ে দিবে না। যারা ব্যবস্যা যারা করবেন তারা কিভাবে এটা ব্যবহার করবেন সেটা মূখ্য বিষয়। মূলত আমি বলতে চেয়েছি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো ও পরিচালকদের কথা। দেখুন ছবির নিয়ন্ত্রণ করে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি। অথচ এই প্রতিষ্ঠানটিতে এত দ্বন্দ্ব-অবিশ্বাস- যা আমার দৃষ্টিতে সরকারি ভূমিকাকে আরো বেগবান করতে বিরাট প্রতিবন্ধকতা বলে মনে হয়। সরকারের হয়তো অনেক কিছুই করার আছে কিন্তু আগে নিজেদের ঠিক হতে হবে। সবাইকে এক হয়ে চলচ্চিত্র শিল্পকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে হবে। ভালো ছবি বানাতে হবে। হলগুলো ভালো করতে হবে।

জাগো নিউজ : চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান নিয়ে অনেক অভিযোগ শোনা যায়। একজন সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে এ ব্যাপারে আপনার অভিমত শুনতে চাই.....
রিমন : হ্যাঁ। এই অভিযোগ বরাবরই ছিল এবং আছে। সরকারি অনুদান ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান কমিটিকে আমলা নির্ভর না করে এটাকে সার্বজনিন করা দরকার। যতক্ষণ না এটি সার্বজনীন হবে ততদিন এই সমস্যা থেকেই যাবে। আর অনুদান হিসেবে সরকারি যে বাজেট রয়েছে সেটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে চলচ্চিত্র নির্মাণে হাস্যকর বিষয়। ২০ লাখ টাকায় ছবির চার ভাগের একভাগও হয় না। বাধ্য হয়ে যারা সরকারি অনুদানে ছবি বানাচ্ছেন তারা ওই বাজেটের মধ্যেই গল্প ও চরিত্র নিয়ে কাজ করেন। ফলে নির্মাণের সীমাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের ভাবনা-চিন্তা করার সময় এসেছে।

জাগো নিউজ : দেশে বিনোদন সংশ্লিষ্ট বহু সংগঠন আছে। শোবিজের এই দুর্দিনে তারা কী ভূমিকা রাখতে পারে?
রিমন : অনেক ভূমিকাই রাখা যেত যদি আমরা এক হতে পারতাম। আমাদের এখানে যতগুলো সংগঠন ততগুলো মতাদর্শ। কোনো একতা নেই, টান নেই, সম্পর্ক নেই। তাই চলচ্চিত্রের দুর্দিনে তাদের ভূমিকা নিয়ে আমি সন্ধিহান। বছর বছর অ্যাওয়ার্ড দেওয়া আর মাঝে মাঝে পিকনিক ছাড়াতো আর কিছু করতে আমরা পারছি না। এটা আসলে একা একজনের পক্ষে বদলে দেওয়া যাবে না। এর জন্য একতা চাই।
Rimonজাগো নিউজ : আপনি নিজেও তো বাচসাসের সাথে জড়িত। সংগঠনটির বর্তমান অবস্থা ও কার্যক্রম নিয়ে বলুন....
রিমন : আমি বাচসাস’র সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক। আপাতদৃষ্টিতে সংগঠনের কার্যক্রম ধীরগতির মনে হবে। কিন্তু ব্যাপারটা সে রকম নয়। আমরা যখন নির্বাচিত হলাম তখন আমাদের ঘাড়ে এসে পড়ে আগের কমিটির ৫ বছরের ৪ বাচসাস পুরস্কার। বাকী থাকা বাচসাস পুরস্কার দিতে গিয়ে আমাদের বেশ ব্যাগ পেতে হয়েছে। যে গ্যাপ তৈরি হয়েছিলো সেটি এখনো মিটিয়ে নিতে পারছি না। তবে চেষ্টা করছি সব কিছু নিয়ন্ত্রণে আসার। খুব শিগগির আমরা প্রতি বছরের পুরস্কার ওই বছরেই দেয়ার ব্যবস্থা নিতে পারবো। সেইসাথে শতভাগ গতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টাটাও করতে পাবো। আবার ফিরে আসবে বাচসাসের সোনালী সময়।

জাগো নিউজ : বিনোদন সাংবাদিকতায় আপনি যেসব প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখী হয়েছেন? সেগুলো কীভাবে ফেস করেছেন?
রিমন : আসলে বিনোদন সাংবাদিকতায় মূল সাংবাদিকতায় এসেছে বেশি দিন হয়নি। আমাদের সময় মোইলযোগ ছিল না। এখন যত তাড়াতাড়ি একজন আর্স্টিটকে কন্টাক করা যায়, আমাদের সময় তা ছিল না। সেট এবং সরাসরি বাসা যাওয়া ছাড়া শিল্পীদের দেখা পাওয়া যেত না। এটা একটা সমস্যা ছিলো। তবে পেশা এবং নেশার কারণে তখন আমাদের পক্ষে এটা সম্ভব হয়েছে। অবশ্য এটার একটা ভালো দিক ছিলো। শিল্পীদের সাথে সাংবাদিকদের ভালো সম্পর্ক তৈরি হতো। এখন যোগাযোগ যেমন সহজ তেমনি সম্পর্কগুলোও সহজ। হুট করে হচ্ছে হুট করেই ভেঙ্গে যাচ্ছে।

জাগো নিউজ : আজকাল অভিযোগ শোনা যায়, সাংবাদিকদের মধ্যে একতা নেই। আপনি এ বিষয়ে কী বলবেন?
রিমন : ঐক্যের জন্য একটা প্রচেষ্টার দরকার। সে চেষ্টাটাই আমাদের অভাব। তারপরও যতটুকু আছে সেটাইকে এগিয়ে নিতে হবে। সিনিয়র-জুনিয়র; যার যতটুকু দায়িত্ব ও ক্ষমতা ততটুকু নিয়েই সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। একতার কোনে বিকল্প নেই। আসলে শুধু সাংবাদিক নয়, আমাদের শোবিজের কোথাও একতা নেই। আমি প্রায় বলি- একতার অভাবেই আমাদের শোবিজের এই দুরবস্থা। নির্মাতার সাথে প্রযোজকের একতা নেই, শিল্পীর সাথে শিল্পীর মিল নেই। সংবাদপত্রের সাথে শোবিজের মিল নেই। সব চলছে উদ্দেশ্যহীন, গন্তব্যহীন।

জাগো নিউজ : নতুন যারা সংস্কৃতিতে সাংবাদিকতা করতে এসেছে তাদের জন্য দিক নির্দেশনাস্বরুপ কিছু বলবেন?
রিমন : বিনোদন সাংবাদিতকতায় আগে কোনো ক্যারিয়ার ছিল না। এখন সময় বদলেছে। পেশা হিসেবে তো বটেই, বিনোদন সাংবাদিকতার জৌলুস বেড়েছে অনেক। বর্তমানে এটি একটি পত্রিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিট হয়ে দাড়িয়ে গেছে। তাই যারা নতুন এসেছেন তাদের জন্য এই বিটটা অবশ্যই সম্ভাময় বিট। ধৈয্য এবং নিষ্ঠা এই পেশার মূল চাবিকাঠি। এখানে মিডিয়ার সঙ্গে যে যত বেশি সম্পর্ক বাড়াতে পারবে তার জন্য সামনে ভাল কিছু অপেক্ষা করছে।

জাগো নিউজ : এবারে আপনার ব্যক্তি জীবন নিয়ে বলুন........
রিমন : আমার জন্ম ১৯৬৮ সালের ৬ সেপটম্ববর ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলায়। পৈত্রিক নিবাস সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের বাহিরগোলা শহরে। বাবা অধ্যাপক হাবিবুর রহমান ও মা রোকেয়া বেগম। সাত ভাই-বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। ১৯৮৫ সালে গফরগাঁও ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি, ১৯৮৭ সালে গফরগাঁও সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি, ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইতিহাস বিভাগে ১৯৯১ সালে অনার্স ও ১৯৯২ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। ১৯৯২ সালে বিয়ে করেছি। স্ত্রীর নাম স্বপ্না মাহফুজ। রোচনা ও রোয়ান নামে আমাদের জমজ ছেলে-মেয়ে রয়েছে। মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে এবং ছেলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। তাদের বয়স ১২ বছর।

জাগো নিউজ : আপনার কাছে জীবন ও সাফল্যের সংজ্ঞা কী?
রিমন : এটা আসলে খুব জটিল বলাটা। কেননা, দুটি বিষয়ই একেক সময়ই একেক রকম। তবে জীবনটাকে আপাত দৃষ্টিতে সহজ করেই দেখতে চাই। এটাকে যত সহজ ভাবা যায় ততই শান্তি। আর সাফল্য বলতে বলবো, একটা পরিকল্পনা নিয়ে সে লক্ষ্যের চেষ্টা চালানোর পর সেখানে পৌঁছানো। এর জন্য পরিশ্রম, ধৈর্য্য, অধ্যাবসায় থাকতে হবে।

জাগো নিউজ : আপনাকে ধন্যবাদ
রিমন : তোমাকেও ধন্যবাদ। সেইসাথে জাগো নিউজের পাঠকদের জানাই অভিনন্দন। সবাই সবসময় ভালো থাকুন। দোয়া করবেন আমার জন্য।

এলএ/আরআইপি