সুবীর নন্দীকে শেষ বিদায় জানাতে ভক্তদের ঢল
দুপুর ১টা থেকেই অপেক্ষা করছেন সবাই। আসবে মরদেহ। তার শেষকৃত্য হবে। তারই সাক্ষী হবেন। বিদায় জানাবেন প্রিয় শিল্পী সুবীর নন্দীকে। কিন্তু শিডিউলে ঝামেলা হওয়ায় সেই অপেক্ষা বাড়লো।
তবু এক চুল বিরক্তি নেই। আগ্রহ নিয়ে তারা ঘুরে ফিরে দেখছেন শ্রী- বরদেশ্বরী মহা শ্মশান প্রাঙ্গণ। এখানেই আরেকটু পর জ্বলবে সেই মানুষেরা চিতা যার গান শুনে শুনে কয়েক প্রজন্ম মুগ্ধ হয়েছে এই বাংলাদেশে।
এভাবেই অপেক্ষারত নানা বয়সের ও ধর্মের ভক্তরা। সবাই প্রিয় শিল্পীর শেষকৃত্যের সাক্ষী হতে চান। সুবীর নন্দীকে শেষ বিদায় জানাতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন তারা।
ডেমরা থেকে এসেছেন গোলাপ মিয়া এক মধ্যবয়স্ক ভক্ত। তিনি বলেন, ‘মনটা খুব খারাপ। উনার গান প্রথম শুনি বাবার মুখে ‘দিন যায় কথা থাকে’। এরপর ভালো লাগে। আমি সিএনজি চালাই। প্রায় সময়ই তার গান গুনগুন করে গাই। সুবীর নন্দী আমার প্রিয় শিল্পী। তাকে আজ চিতায় পুড়াবে। সেটাই দেখতে এসেছি।’
ফার্মগেট থেকে দুই বন্ধুকে নিয়ে এসেছেন হাশিম। তিনি বলেন, ‘দেখতে এসেছি। এত বড় একজন গায়ক। তার বিদায়ে সাক্ষী থাকার জন্যই এসেছি। উনার গান তেমন করে শোনা হয় না। তবে গতকাল থেকে শুনছি আর মুগ্ধ হচ্ছি।’
প্রিয়া রায় নামে এক ভক্ত এসেছেন স্বামীকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘কতো ইচ্ছেই না ছিলো প্রিয় শিল্পীকে এক নজর দেখবো। বেঁচে থাকতে সেই সুযোগ তো আর হলো না। দেখি শেষ বিদায়ের আগে একনজর দেখার সুযোগ পাই কী না। সেজন্যই তিন ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। সেই ছোটবেলা থেকেই উনার গান গেয়ে গেয়ে বড় হয়েছি।’
রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভক্তদের ঢল বাড়তেই থাকে। এদিকে জানা গেল, সুবীর নন্দীর মরদেহ বিকেল চারটায় নেওয়া হবে কালীবাড়ি মন্দিরে। এখানেই তার শেষকৃত্যের কাজ শুরু হবে বিকেল পাঁচটার দিকে।
এরআগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দীকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসিত)। সেখানে চলচ্চিত্রের মানুষেরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়। এরপর তাকে নেওয়া হয় চ্যানেল আই প্রঙ্গণে। এখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর তাকে নেওয়া হয় রাম কৃষ্ণ মিশনে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৪টায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীত শিল্পী সুবীর নন্দী।
পারিবারিক সূত্র জানায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর নেয়ার দুদিন পর সুবীর নন্দীর শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও পরে অবনতি হতে থাকে। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা চলাকালীন পরপর তিনবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। এ ছাড়া ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।
এর আগে গত ১৪ এপ্রিল রাতে পরিবারসহ সিলেট থেকে ফিরছিলেন সুবীর নন্দী। উত্তরার কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে তাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিএমএইচে নেয়া হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সিঙ্গাপুর নেয়া হয় সুবীর নন্দীকে।
এলএ/এমকেএইচ