‘স্থিতিশীল’ এটিএম শামসুজ্জামান, প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় পরিবার
এ দেশের শোবিজের শোক যেন কাটছেই না। একের পর এক গুণী মানুষগুলো চলে যাচ্ছেন সমৃদ্ধ আঙিনাকে অসহায় করে দিয়ে। চলতি বছর সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ, অভিনেতা টেলি সামাদের পর মঙ্গলবার (৭ মে) চলে গেলেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম রোজার ইফতারের পরপরই ছড়িয়ে পড়ে বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যু গুজব। এই খবরে সাংবাদিকদের মধ্যে সাড়া পড়ে যায়। অনেকেই ফোন দিয়ে এ প্রতিবেদকের কাছেও গুণী এই অভিনেতার মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চান।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে কোনো সত্যতা পাওয়া গেল না। এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ভাই সালেহ জামান সেলিম জানালেন, 'এসব গুজবে বিরক্ত আমরা। ভাইকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সবাই দোয়া করবেন।'
অভিনেতার চিকিৎসা তত্ত্বাবধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক রাকিব উদ্দিনের বরাতে সেলিম জানালেন, এটিএম শামসুজ্জামানের ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে। তবে শ্বাস-প্রশ্বাসের পাশাপাশি অ্যাজমার সমস্যাটা নিয়ন্ত্রণে আছে। তার শ্বাস ৭০ ভাগ কাজ করছে। বাকি ৩০ ভাগের জন্য তাকে এখনও লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তবে তার অবস্থা আগের চেয়ে স্থিতিশীল।
এটিএম শামসুজ্জামানের চিকিৎসা এখানে যেভাবে চলছে তা নিয়েও সন্তুষ্ট তার পরিবার। সেলিম বলেন, 'আমাদের দেশে যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তা দেশের বাহিরে নিয়ে গেলেও একই হবে। তাই এখানকার চিকিৎসকরা দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন না।
বর্তমানে আমার ভাই অনেকটা ভালো আছেন। তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পুরো বিষয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তিনি দেশে ফিরলে আমি এটিএম ভাইয়ের বর্তমান অবস্থা জানাব। তারপরই তার চিকিৎসার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত তিনি দেন সেটাই গ্রহণ করা হবে।'
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। হঠাৎ অসুস্থবোধ করায় গত ২৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এই অভিনেতাকে। ওইদিন এটিএম শামসুজ্জামানকে স্যালাইন দেয়া হয়। তখন হঠাৎ করে তার মলত্যাগে জটিলতা দেখা দেয়।
এ জন্য গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে জরুরি ভিত্তিতে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার সফলভাবে শেষ হয় তার। ২৮ এপ্রিল সকালে তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ৩০ এপ্রিল তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এদিন বেলা ৩টার দিকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এরপর অবস্থা কিছুটা উন্নতি হওয়ায় গত ৩ মে শুক্রবার সকালে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়া হয়। রাখা হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণে। শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে এটিএম শামসুজ্জামানের চিকিৎসা তত্ত্বাবধানকারী ডা. রবিউল আলীম এই তথ্যই নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু আবারও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বর্তমানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
এটিএম শামসুজ্জামান অভিনয়ে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি একজন প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার এবং নির্মাতাও।
এলএ/বিএ