মহানায়কের ৮৯ তম জন্মদিন
বাংলা ছবির মহানায়ক উত্তম কুমার। বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে এই কিংবদন্তির ৮৯ তম জন্মদিন। ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উত্তর কলকাতার আহিরিটোলায়, মামাবাড়িতে ভূমিষ্ঠ হন তিনি। তখন অবশ্য তিনি উত্তম কুমার নন। অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। কলকাতার গিরিশ মুখার্জি রোডের বাসিন্দা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায়ের বড় ছেলে।
১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাস করলেন। ১৯৪৫ সালে বিকম স্ট্যান্ডার্ড পাস করে ভর্তি হলেন কলেজে। কিন্তু কলেজে পড়া আর বেশি দূর এগোল না। টানাপোড়েনের সংসার। চলল চাকরির সন্ধান। যে করেই হোক, একটা চাকরি চাই তাঁর। অবশেষে মিলল চাকরি। পোর্ট কমিশনার্স অফিসের খিদিরপুর ডকে। সাধারণ কেরানির পদে। বেতন মাসে মাত্র ২৭৫ টাকা। দুই হাজার টাকা জামানাত দিয়ে চাকরিতে যোগ দিলেন।
মহা নায়কের অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিলো ১৯৪৭ সালে। বাড়ির ভাড়াটে গণেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে ভোলানাথ আঢ্যের ‘মায়াডোর’ নামের একটি হিন্দি ছবিতে ছোট্ট একটা চরিত্র পেলেন অরুণ। দৈনিক পাঁচ সিকি পারিশ্রমিকে পাঁচ দিন অভিনয় করলেন। কিন্তু ‘মায়াডোর’ মুক্তি পায়নি।
দ্বিতীয় সুযোগটি এল ঠিক পরের বছরই। ‘দৃষ্টিদান’ ছবিতে অভিনয় করলেন নায়কের ছোটবেলার ভূমিকায়। কমিশন বাদ দিয়ে এ ছবিতে তার পারিশ্রমিক দাঁড়াল সাড়ে ১৩ টাকা। ওই বছরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি কাজ শুরু করলেন নবেন্দুসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কামনা’ ছবিতে। নায়কের ভূমিকায়। পারিশ্রমিক এক হাজার ৫০০ টাকা।
১৯৪৯ সালে মুক্তি পেল ‘কামনা’। কিন্তু সুপার ফ্লপ। ভীষণ মুষড়ে পড়লেন তিনি। এরপর সরোজ মুখার্জির ‘মর্যাদা’ ছবিতে অভিনয় করলেন নায়ক হিসেবে। তবে পরিচালকের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নাম পাল্টে অরুণ কুমার হয়ে গেলেন অরূপ কুমার। কাজ হলো না। দর্শকপ্রিয়তা পেল না ছবিটি। আবার নাম পরিবর্তন করা হলো। উত্তম কুমার।
‘সহযাত্রী’ ছবিতে উত্তম কুমার নামে অভিনয় করলেন। অসফল হলো ছবিটি। অসফলতার ধারাবাহিকতায় যোগ হলো আরও একটি ছবি ‘নষ্টনীড়’। এরপর ‘সঞ্জীবনী’, ‘কার পাপে’, ‘বসু পরিবার’। সেটা ১৯৫২ সাল। আশাতীত সাফল্য পেল ‘বসু পরিবার’। ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি। এল ১৯৫৩। মুক্তি পেল তার অভিনীত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। ছবির নায়িকা সুচিত্রা সেন। সুপারহিট। এরপর শুধুই সাফল্য। ইতিহাস। নায়ক উত্তম কুমার হয়ে উঠলেন মহানায়ক উত্তম কুমার।
উত্তম কুমার কেবল নায়ক হিসেবেই পরিচিত নন। চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, মঞ্চাভিনেতা, সুরকার ইত্যাদি বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি হিন্দি চলচ্চিত্রেও তার বিচরণ ছিল।
কালজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘নায়ক’ ও ‘চিড়িয়াখানা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে উত্তমের প্রতিভার দ্বার উন্মোচন ঘটে। তবে বাংলা চলচিত্রের অবিসংবাদিত কিংবদন্তি উত্তম-সুচিত্রা জুটির সূত্রপাত হয় ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে এই জুটি ‘হারানো সুর’, ‘পথে হল দেরী’, ‘বিপাশা’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সপ্তপদী’, ‘সাগরিকা’ ইত্যাদি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তায় কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। উত্তম কুমার অভিনীত হিন্দি ছবির মধ্যে ‘ছোটিসি মুলাকাত’, ‘অমানুষ’, ‘আনন্দ আশ্রম’ উল্লেখযোগ্য।
১৯৬৭ সালে ‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ও ‘চিড়িয়াখানা’ ছবির জন্য ভারতের জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন উত্তম কুমার। এর আগে ১৯৫৭ সালে ‘হারানো সুর’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতির সার্টিফিকেট অফ মেরিট পান তিনি।
১৯৮০ সালের জুলাই ২৪ মাত্র ৫৩ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
মহানায়কের জন্মদিনে তার আত্মার প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
এলএ/আরআইপি