ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

পরিচালকদের জন্যই চলচ্চিত্রের এই দুর্গতি

প্রকাশিত: ১০:৩২ এএম, ২৬ আগস্ট ২০১৫

চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা যে ক’জন মানুষের হাত ধরে পেশাদারীত্ব পেয়েছে, মূল্যায়িত হয়েছে তিনি তাদের অন্যতম একজন। দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিক ঘুরে নিজেকে তিনি চলচ্চিত্রেই স্থায়ী করেছেন, পরিচিত করে তুলেছেন। ঢাকাই ছবির সোনালী দিনের সাক্ষী তিনি। দেখেছেন সেই রঙিন আলোর সূর্য্যটার অস্ত যাওয়া। এখন দেখছেন নতুন করে ইন্ড্রাষ্ট্রির ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাটাও। অভিজ্ঞতার ভারী থলে নিয়ে এ প্রজন্মের চলচ্চিত্র তথা বিনোদন সাংবাদিকদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন আদর্শ এবং তথ্য ব্যাংক। তিনি মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন।

দেশের প্রবীন এই সাংবাদিক সম্প্রতি মুখোমুখী হয়েছেন জাগো নিউজের। একান্ত আলাপচারিতায় জানালেন সাংবাদিকতায় আসার গল্প, দীর্ঘ ক্যারিয়ারের নানা অভিজ্ঞতার কথা। সেইসাথে চলচ্চিত্রের বর্তমান বেহাল দশায় দিয়েছেন দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ। লিখেছেন লিমন আহমেদ

জাগো নিউজ : শুরুতেই আপনার সাংবাদিকতায় আসার গল্পটা বলুন...
আওলাদ হোসেন : অনেক কিছুই হতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু সাংবাদিক হবো এমনটি ভাবিনি। একসময় ভেবেছি ফুটবলার হবো। সেসময় প্রচুর খেলতাম এবং ভালো খেলতাম। কিছুদিন পর অন্য নেশা ছাপলো। তখন টেলিভিশনের কল্যানে বিদেশি সংস্কৃতির হওায়া বাংলাদেশেও লেগেছে। খুব ভালো লাগত ব্যান্ডের গান। ইচ্ছে হলো গিটারিস্ট হবো। এ বিষয়ে বুলবুল ললিতকলা একাডেমি (বাফা) থেকে চার বছরের একটি কোর্সও করেছিলাম আমি। কিন্তু আমার জন্ম পুরান ঢাকায়। বাপ-দাদারা ব্যবসাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। তারা আমাকেও সেখানে প্রতিষ্টিত করতে চেয়েছিলেন। আমিও চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সবসময় ক্যাশবাক্স আগলে বসে থাকতে ভালো লাগত না আমার। ভাবতাম এই গৎবাধা জীবন থেকে বের হতে হবে। বৈচিত্রময় ইচ্ছেগুলোর সাথে ছাত্র জীবন থেকেই লেখালেখির প্রতিও একটা মোহ ছিলো। ভাবলাম পত্রিকায় লিখব। তখন এত শত পত্রিকা ছিলো না। ভালো লেখা হলে পত্রিকাগুলো ছাপত। আমিও লিখতে শুরু করলাম বিভিন্ন পত্রিকায়। সেসব লেখা ছিলো বিচিত্র সব বিষয়ের উপর। এভাবে চার বছর অনেক পত্রিকায় লিখেছি। অবশেষে আমার পুরান ঢাকারই এক বন্ধু তালেব হোসেন ঢাকাইয়া নিয়ে গেল ‘দৈনিক খবর’র সিনে পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক ছায়াছন্দ’তে। সেখানে কাজ নিলাম। তখন বিনোদন বলতে চলচ্চিত্রটাই প্রাধান্য পেত। ছোট পর্দার অতো জনপ্রিয়তা ছিলো না। বিখ্যাত সাংবাদিক হারুনুর রশিদ খান ছিলেন আমার গুরু। তিনি আমাকে হাতে ধরে বিনোদন সাংবাদিকতার দীক্ষা দিয়েছেন। ১৯৮৭ সাল থেকে শুরু হলো আমার পেশাগত সাংবাদিকতা। সেখানে ১৫ বছর কাজ করেছি। পরে ২০০৪ সাল থেকে বর্তমান অবধি ‘দৈনিক মানবজমিন’ পত্রিকায় সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছি।



জাগো নিউজ : আপনি যখন কাজ শুরু করলেন সেই সময়ের চলচ্চিত্র কেমন ছিলো?
আওলাদ হোসেন : আমি খুব সৌভাগ্যবান। চলচ্চিত্রের সোনালী দিনে ক্যারিয়ার শুরু করতে পেরেছিলাম। তখন ঢাকাই ছবির জয়জয়কার। নামী নামী সব চিত্রপরিচালকরা ছবি বানাতেন। তারা চলচ্চিত্রকে ভালোবাসতেন সন্তানের মতো। এ বিষয়ে তারা অনেক কিছু জানতেন। দর্শকদের চাহিদাকে শ্রদ্ধা করতেন। তারা শিল্পীদের কাছ থেকে অভিনয় বের করে নিতে পারতেন। একজন শিল্পী যতোই বড় মাপের হোক না কেন, পরিচালক যদি তাকে সঠিকভাবে ব্যবহার না করতে পারেন তবে তার যোগ্যতার শতভাগ বিকাশ হবে না। আর সেসময়ে অভিনয় শিল্পীরাও ছিলেন মেধাবী। একদিকে অভিজ্ঞতায় ভরপুর নায়ক রাজ রাজ্জাক, ফারুক, উজ্জল, সোহেল রানা, আলমগীর, জসীমরা হল কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের নায়িকারা ছিলেন কবরী, শাবানা, ববিতা, সুচরিতা, সুচন্দা, রোজী আফসারী, শবনমের মতো মিষ্টি মেয়েরা। অন্যদিকে ওয়াসিম, জাফর ইকবাল, ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল, বাপ্পারাজরাও সুপারহিট ছবি উপহার দিচ্ছিলেন। এদের নায়িকা হিসেবে আলোচনায় ছিলেন সুনেত্রা, রানী, দিতি, অঞ্জু ঘোষ, চম্পা, কবিতারা। একই সময়ে নায়ক মান্নার আগমন ঘটলেও তার জনপ্রিয়তা বেড়েছিলো অনেক পরে। তখন মান্নাকে দেখা যেত ছবির দ্বিতীয় নায়ক কিংবা বিশেষ কিছু চরিত্রে। এদের মধ্যে বুলবুল আহমেদ ছিলেন ভিন্নধর্মী নায়ক। সেসময় চলচ্চিত্রটা ছিলো নিম্নবিত্ত মানুষদের বিনোদন। মাঝেমধ্যে মধ্যবিত্তরা কিছু ছবি হলে গিয়ে দেখতেন। কিন্তু বুলবুল আহমেদ মধ্যবিত্তদের নিয়মিত হলে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। উচ্চবিত্ত শ্রেণির দর্শকরাও তার ছবি দেখতো। তাই বুলবুল আহমেদকে বলা হতো এলিট শ্রেণির নায়ক। আর ছবির নায়ক বা প্রধান চরিত্রে খুব বেশি কাজ না করলেও আনোয়ার হোসেন ছিলেন অসাধারণ এক অভিনেতা। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার চরিত্রে অভিনয় করে তিনি সারাজীবন নবাব উপাধি নিয়ে বেঁচেছিলেন। তার মতো শক্তিমান অভিনেতা এ দেশের চলচ্চিত্রের বিরল।

জাগো নিউজ : চলচ্চিত্রের সোনালী দিনের পতনের শুরুটা কোথায়?
আওলাদ হোসেন : নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়টাতেই মূলত ঢাকাই ছবির জৌলুস হারাতে শুরু করে। তখন বেশ কজন স্বনামধন্য নির্মাতা চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নেন। কেউ মারা যান, কেউ আবার বাধক্যজনিত কারণেই সরে যান। স্বাভাবিকভাবেই চলচ্চিত্র নির্মাণে অভিজ্ঞতার ঘাটতি দেখা দিল। পাশাপাশি ছবির গল্প বাছাইয়েও শুরু হলো দুর্বলতা। এসময় চলচ্চিত্রে রাজত্ব করছিলো নাঈম-শাবনাজ, সালমান শাহ-শাবনূর, ওমর সানী-মৌসুমী জুটিগুলো। এদের পাশাপাশি অবশ্য ইলিয়াস কাঞ্জন ও রুবেলও তখন জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিলেন। তবে তখনও মানুষ হলে গিয়ে ছবি দেখত। ছবির বেহাল দশাটা চোখে পড়তে শুরু করে আসলে সালমান-ওমর সানীদের পরবর্তী নায়কদের আমলে। যখন রিয়াজ-ফেরদৌসরা আসতে শুরু করেন। এই দুই চমৎকার অভিনেতা অবশ্য বেশ কিছু ভালো ছবি উপহার দিয়েছেন শাবনূর, মৌসুমী, পপি, পূর্ণিমাকে নিয়ে। কিন্তু ছবির ব্যবসা আগের দিনগুলোর মতো ছিলো না। এদের সমসাময়িক শাকিব ও মান্না নতুন করে হাল ধরেছিলেন। কিন্তু গল্প ও চরিত্রের একঘেয়েমিতে বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দর্শকরা। বন্ধ হতে লাগলো সিনেমা হল। সেটা এখনও চলমান; আরো খারাপভাবে। যদিও বর্তমানে অনেক নতুন মেধাবী মুখ এসেছে, বেশ কিছু ভালো ছবিও নির্মাণ হচ্ছে; কিন্তু ব্যবসা হচ্ছে না। আওয়াজ হচ্ছে বেশি। পরিচালক, নায়ক-নায়িকাদের ভাব দেখে মনে হয় ছবি সুপারহিট, কিন্তু ছবির দৈন্যতা টের পাওয়া যায় প্রযোজকদের মুখ দেখলে। এখন ছবি চলে ফেসবুকে, পত্রিকার পাতায়- হলে না।



জাগো নিউজ : তার মানে প্রায় দেড় দশক ধরেই মৃত প্রায় অবস্থার মধ্য দিয়ে আজকের এই অবস্থানে আমাদের চলচ্চিত্র। এই খারাপ সময় থেকে বের হয়ে আসার কোনো পথ কি নেই?
আওলাদ হোসেন : অবশ্যই আছে। সব সমস্যারই সমাধান থাকে। এর কেন থাকবে না। কিন্তু আগে তো সমস্যাটা ধরতে হবে। তারপর না সমাধান। অনেকেই অনেক কথা বলেন, স্লোগান নিয়ে চলচ্চিত্র বদলে দিতে আসেন। কিন্তু তারা কেউই চলচ্চিত্রের মূল সমস্যাটাই বুঝতে পারেন না। অযথা হৈ চৈ, টাকা লগ্নি, সময় লগ্নি, পরিশ্রম। দিন শেষে ফলাফল কিছুই হাতে আসছে না।

জাগো নিউজ : কিন্তু কেন?
আওলাদ হোসেন : ওই যে বললাম, রোগ না জেনেই ওষুধের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

জাগো নিউজ : তবে রোগটা কী?
আওলাদ হোসেন : আমাদের চলচ্চিত্রের মূল সমস্যা ছবির পরিচালকেরা। পরিচালকদের জন্যই চলচ্চিত্রেরই এই দুর্গতি। চলচ্চিত্রের সোনালী দিনের উদয় হয়েছিলো জহির রায়হান, খান আতা, সুভাষ দত্ত, দিলীপ বিশ্বাস, আলমগীর কুমকুম, চাষী নজরুল ইসলামের মতো পরিচালকদের হাত ধরেই। আবার একটা সময়ে এসে পরিচালকদের হাত ধরেই এই ইন্ড্রাষ্ট্রির পতন শুরু। পরিচালকদের হাত ধরেই সেটি আরো খারাপের দিকে এগিয়েছে। তাই এর উন্নয়ন হলে সেটাও পরিচালকদের হাত ধরেই হতে হবে।



জাগো নিউজ : একটু বিস্তারিত বলুন....
আওলাদ হোসেন : পরিচালকরা আজ আর স্রষ্টা সত্তার মধ্যে নেই। তারা এখন দালালির ব্যবসা খুলে বসেছে। বলা হচ্ছে, ছবি নির্মাণে যথেষ্ট উপাদান নেই। সরকার এ বিষয়ে নির্বাক। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো সরকারের কাছে এসব আবদার নিয়ে কেউ যায় নি। বলা হয়, হলে গিয়ে ছবির পরিবেশ পাওয়া যায় না। পাবে কী করে? লস দিয়ে হলমালিকরা যে হল চালাচ্ছেন এই তো বেশি। সেখানে আবার পরিবেশ! এসবগুলোই হচ্ছে অযোগ্য, শিল্পী মনের অভাব, দালাল পরিচালকদের জন্যই। একসময় জহির রায়হানের মতো মেধাবী পরিচালক ছবি নির্মাণ করেছেন। নায়ক রাজ্জাক ও ববিতার মতো কিংবদন্তিদের আবিষ্কারক তিনি। খান আতা, সুভাষ দত্ত, আলমগীর কুমকুম, দিলীপ বিশ্বাস, হুমায়ূন আহমেদ, মতিন রহমান, বাদল সরকার, মালেক আফসারীর মতো নির্মাতারা ছবি বানিয়েছেন। আর আজ কোথায় তেমন নির্মাতারা? এলাকা ভরে গেছে দালালে। কয়েকজন সিনিয়র আছেন ভালো ছবি নির্মাণের চেষ্টা করেন। চলচ্চিত্রটাকে ভালোবেসে এখনও অনেক কিছুই ভাবেন। কিন্তু তারা গুটিকয়েক; কি আর করতে পারেন। এদের পর গেল দশ বছরে যসেব নির্মাতারা এসছেন তাদের বেশিরভাগই অযোগ্য। তাদের ভিড়ে যোগ্যরাও নিজেেদের মেলে ধরতে পারছেন না। যতদিন আমাদের ছবির পরিচালকরা দালালি না ছাড়বেন ততদিন এই শিল্পের উন্নয়ন হবে না। বর্তমানে পরিচালকদের দালালিতেই জিম্মি চলচ্চিত্র। অন্যান্য দেশে একটি ছবির বিভিন্ন বিষয়ের জন্য আলাদা টিম থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে পরিচালকই সব। একজন পরিচালক গল্প ঠিক করে দেন, নায়ক-নায়িকা ঠিক করে দেন, গান ঠিক করে দেন। এবং সবকিছুতেই তিনি প্রযোজককে টাকা বাঁচানোর প্রলোভন দেখান। স্বাভাবিকভাবেই ভালো গল্প নিয়ে ছবি হয় না। একসময় সৈয়দ শামসুল হকদের মতো সাহিত্যিক ও বিজ্ঞজনরা ছবির স্ক্রিপ্ট লিখতেন। আর আজ পরিচালক প্রযোজককে বলছেন স্ক্রিপ্টই লাগবে না। ভারতের ছবি হুবহু কপি করে তারা ছবি বানাচ্ছেন। অন্যেরটা নকল করছেন সেটাও হচ্ছে অখাদ্য। এইসব পরিচালকেরা নকলটাও ঠিকমতো করতে জানেন না। তামিলের ছবি কলকাতায় বানিয়ে কোটি টাকার ব্যবসা করে। আর একই ছবি ঢাকাতে লগ্নির অর্ধেক টাকাও উঠাতে পারে না। কপি করে ছবি নির্মাণ নতুন কিছু নয়। বলিউডের শোলের মতো ছবিও এদেশে কপি হয়েছে এবং সুপার ডুপার হিট হয়েছে। কেয়ামত থেকে কেয়ামত, বিয়ের ফুল, নারীর মন কপি করা ব্যবসা সফল ছবি। পরিচালক এ জে মিন্টু তার জীবনের প্রায় সবগুলো ছবিই নকল করে বানিয়েছেন। সবগুলো ছবিই হিট ছিলো এবং ব্যবসা সফল। যাক, শুধু গল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নয়, চরিত্র বাছাইয়েও নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ কিংবা নায়ক-নায়িকার জনপ্রিয়তাকে প্রাধান্য দেন নির্মাতারা। যাকে যে চরিত্রে প্রয়োজন তাকে সে চরিত্রে না নিয়ে কম টাকায় নেয়া হচ্ছে পরিচালকের কাছের কাউকে। আবার অনেক সময় শাকিবকে নিয়ে প্রযোজককে দেখানো হচ্ছে বিগ বাজেটের ছবি। কিছুদিন পর সে ছবির আর খবর মিলেনা। কিছু পরিচালক ছবি করতে এসে শাকিবকে নায়ক হিসেব চুক্তিবদ্ধ করেন। তাকে সাইন করিয়ে নিজেও কিছু টাকা নেন। সপ্তাহ খানেক শুটিংও করেন। তারপর আর কোনো খবর নেই ছবির। কিছুদিন পর প্রযোজক খবর পান পরিচালক বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। কেউ কেউ অবশ্য প্রথম ছবির নাম ভাঙিয়ে আরো নতুন প্রজেক্ট হাতে নেন। তাদের সব ছবিই আলোচনা পায়, কিন্ত হলে নামে না। আসলে এদের উদ্দেশ্য হলো টাকা উপার্জন, ছবি নির্মাণ নয়। আরেকটি বিষয় হলো এখনকার নির্মাতা এতো কম জানেন যে সিনিয়র শিল্পীদের কাছ থেকে অভিনয় বের করার সাহস দেখাতে পারেন না। তারা শাকিবের মতো নায়ককে নিয়ন্ত্রণই করতে পারেন না। একটি ছবির ক্যাপ্টেন হচ্ছেন নির্মাতা। কিন্তু শাকিবকে নিয়ে ছবি নির্মাণ করলে দেখা যায়, ওখানে শাকিবই সর্বসেবা। নায়ক যতো বিখ্যাত আর দামিই হোক, নির্মাতার কাছে তিনি ছাত্রের মতো। এখানে আসলে শাকিবের দোষ নেই। এটা হলো আমাদের পরিচালকদের ব্যর্থতা। পার ফলে প্রায় ছবিতেই দেখা যায় শাকিবের দৃশ্যগুলো কন্টিনিউইটি থাকে না। সে একটি দৃশ্যের জন্য গাড়িতে ঢুকছে লাল শার্ট পড়ে, আবার বের হচ্ছে সবুজ গেঞ্জি পড়ে। এটি কিভাবে সম্ভব! এর একমাত্র কারণ পরিচালকরা শাকিবকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। শাকিবের ইচ্ছেটাই এখানে প্রাধান্য পাচ্ছে। তার কথা হলো শুটিং করা, সে করছে। কিন্তু ছবি কেমন হচ্ছে সেটা নিয়ে তার ভাবনা নেই। প্রয়োজনে শাকিব বা একজন তারকাকে ধমক দিবে সেই মাপের পরিচালক এখন আমাদের নেই। আর বলিউডে দেখো, অমিতাভকেও ধমক দিচ্ছে পরিচালক। সেই ধমকের ভিডিও আবার ইউটিউবেও প্রচার হচ্ছে। ভাবা যায় ওখানে ইন্ড্রাষ্ট্রিটা কতো মজবুত! এমন অসংখ্য অসঙ্গতি আছে নির্মাতাদের। আজকাল ছবিতে গান হচ্ছে আগের মতোই ছয়-আটটি করে, কিন্তু মানুষ শুনছে না একটাও। কারণ, এখানেও পরিচালকের দালালি। সেই ঠিক করছে সংগীত পরিচালক ও শিল্পী। অচল শিল্পীদের নিয়ে তৈরি গান কেন শুনবে মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই ছবি ফ্লপ হচ্ছে। প্রযোজক মার খাচ্ছেন। হল মালিকরা মার খাচ্ছেন। আরেকটি বিষয় আছে। সেটি হলো নতুন মুখের নাম করে নতুন নতুন মেয়েদের ইন্ড্রাষ্ট্রিতে নিয়ে আসে। এরা আসলে নায়িকা নয়, ‘নাইকা’। পুরান ঢাকার ভাষায় নাইকা বলতে বুঝায় কিছুই নাই। শূণ্য। আজকালকার বেশিরভাগ নায়িকারাই অভিনয় ও গুণে শুণ্য। এরা মূলত পরিচালকদের হয়ে প্রযোজক ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই পরিচালকরা যতোদিন শিক্ষিত না হবেন, মার্জিত না হবেন, চলচ্চিত্র শিল্পকে মন থেকে ভালো না বাসবেন ততদিন এমন অবস্থার পরিবর্তন কেউ করতে পারবে না। এটা সম্ভবও নয়। প্রযাজকদের ভালো পরিচালক খুঁজে বের করতে হবে। প্রলোভনে পড়ে টাকা লগ্নি করলে ব্যবসা কোনদিনই ভালো হবে না।



জাগো নিউজ : কিন্তু আমাদের এফডিসির পরিবেশও তো ভালো নয়। যন্ত্রপাতির অভাব আছে। সেগুলো কি চলচ্চিত্রের মন্দায় প্রভাব ফেলছে না?
আওলাদ হোসেন : অবশ্যই ফেলছে। আমি বলেছি চলচ্চিত্রের মূল সমস্যাটা হলো ভালো এবং যোগ্য পরিচালকের অভাব। এর বাইরেও কিছু সমস্যা আছে আমাদের। এফডিসিতে বলা চলে কিচ্ছু নেই। যন্ত্রপাতির অভাব। বিল্ডিংগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন দরকার। সুইমিং পুলে এখন মশা-মাছির আবাস। এসবে কারো মন নেই। সবাই নিজের স্বার্থটা হাসিল করে টিকে থাকছেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এফডিসি সংশ্লিষ্ট মানুষেরা বলেন সরকার অমনযোগী। আর সরকারের কাছে গেলে তারা বলেন, এফডিসি থেকে কিছু বলা হয় নি। মাঝেমধ্যে কিছু অনুদানের কথা শোনা যায়। সেসব এফডিসির প্রয়োজনের একেবারেই নগন্য। এ মুহূর্তে এফডিসিরি প্রয়োজন ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা। সেখানে সরকার দেয় ৫০ কোটি। সেটিরও ভাগ বাটোয়ারা হওয়ার পর কাজের কাজ কিছুই হয় না।

জাগো নিউজ : এ বিষয়ে সরকারকে মনযোগী করতে কি করা যেতে পারে?
আওলাদ হোসেন : সরকার একটি দেশের চালক। তার অনেক সেক্টর আছে। তাকে একটি বিষয় নিয়ে ভাবলে চলে না। আর সব সরকার সবকিছুর প্রতি যত্নশীলও হয় না। এদেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছাড়া আর কোনে সরকারের অবদান দেখা যায় না। বঙ্গবন্ধু এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি পাক-ভারতের ছবি এদেশে বন্ধ করে বাংলাদেশি ছবির ভিত্তি মজবুক করেছিলেন। আর মেজর জিয়াও চলচ্চিত্রের উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এরপর আর কোনো সরকারই চলচ্চিত্রের প্রতি যত্নশীল হননি। তাই সরকার সব সমাধান আপনা থেকেই করে দিবে এটা ভাবা হাস্যকর। চলচ্চিত্রের সমস্যা এ অঙ্গনের মানুষদেরকেই করতে হবে। সরকারকে অনুধাবণ করাতে হবে ফাকা মুখের বুলি নয়, চাই সহায়তা। চলচ্চিত্র বিষয়ক যেসব সংগঠন আছে তাদেরকে ভূমিকা রাখতে হবে। শিল্পীদের এসব বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আর সরকারকেও আন্তরিক হতে হবে। চলচ্চিত্র একটি বিরাট শিল্প মাধ্যম। এখানে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এর উন্নতি হলে সরকার আর্থিকভাবেও লাভবান হবে। পাশের দেশে বলিউড থেকে সরকারের প্রতি বছরের আয় চোখে পড়ে মতো। তো আমাদের সরকার কেন সেভাবে ভাবতে পারেন না! তারা যেটুকু পদক্ষেপ নেন সেটুকু যাতে সঠিকভাবে সম্পাদিত হয় সেদিকে নজর দেয়া উচিত। বিশেষ করে সরকারি অনুদানে চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে তাদের আরো সিরিয়াস হওয়া উচিত। অনুদানের জন্য সরকার থেকে যে পরিমাণ টাকা দেয়া হয় তাতে ছবির চার ভাগের এক ভাগও নির্মাণ হয় না। আর অনুদানের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রিতী দিনে দিনে বিষয়টিকে হাসির খোরাকে পরিণত করে তুলেছে। চলচ্চিত্র নির্মাণে কোনো অভিজ্ঞতা নেই এমন লোকদেরকে অনুদান দেয়া হচ্ছে। তারাও যেসব ছবি বানাচ্ছেন সেগুলো হলে যায় না, কেউ দেখে না। অথচ অদ্ভুত ব্যপার জাতীয় পুরস্কার পায়।



জাগো নিউজ : আপনি চলচ্চিত্রের সোনালী দিন দেখেছেন। সেসময়ের চলচ্চিত্র আর আজকের চলচ্চিত্রের কি কি পার্থক্য চোখে পড়ে?
আওলাদ হোসেন : অনেক পার্থক্য। রাত আর দিনের মতো। সত্যিকারের স্টারডম বলতে যা বুঝায় সেটা ওই সময়েই ছিলো। তখন নায়ক-নায়িকারা রাস্তায় বের হতে পারতেন না। মানুষ তাদের ছবি কোথাও পেলেই সংগ্রহ করে ঘরে টানিয়ে রাখতেন। বাজারে পাওয়া যেত তারকাদের নানা রকম ছবির কার্ড। এখন আর এসব চোখে পড়ে না। নায়ক-নায়িকারা আর দশজনের মতোই বাজার করে বেড়াচ্ছেন, কেনাকাটা করছেন; কিছু জটলা বাঁধলেও সেটা চোখে পড়ার মতো কিছু না। শাকিব ছাড়া এখন আর কোনো নায়কের এমন ক্রেজ নেই যে রাস্তায় দেখা মাত্রই ভিড় জমে যাবে। সেই সময়ে তারকাখ্যাতির পরও তখনকার শিল্পীদের অহংকার ছিলো না। তারা সবার সাথে সুন্দর করে কথা বলতেন, মিশতেন। এখনকার সময়ে এটা চোখে পড়ে না। দুদিন হয় মিডিয়াতে আসলো, একটু জনপ্রিয়তা পেলেই তার ভাব, আচরণ সবকিছুতেই অভদ্রতার ছাপ পড়ে। আগে দেখেছি শুটিং স্পটে নায়িকারা বাসা থেকে নানা রকম রান্না করে নিয়ে আসতেন। কোনোদিন নায়করাও হোটেল থেকে খাবার আনিয়ে সবাইকে নিয়ে একসাথে বসে খেতেন। আর এখন নায়ক খান সোনারগাঁও হোটেলের খাবার, নায়িকার খাবার আসে ওয়েস্টিন থেকে। একজন আরেকজনের চেহারা দেখে না। সাংবাদিকদেরও সেই মূল্যায়ণ আর নেই। আগে ছবির শুটিংয়ে গেলে পরিচালক সম্মানের সাথে বসতে দিতেন, খোঁজ খবর নিতেন। শিল্পীরাও চমৎকার ব্যবহার করতেন। এখন আমি নিজে যাই না, তবে নতুনদের কাছ থেকে অনেক অভিযোগ পাই আন্তরিকতার অভাবের। নায়ক-নায়িকাদের ইন্টারভিউ করাটা তো রীতিমত যুদ্ধ জয়ের মতো ব্যাপার। এখন পরিচালক, নায়ক-নায়িকাদের কোরাম আছে। তাদের নিজস্ব কোরামের সাংবাদিকও আছে। তার বাইরের সাংবাদিকরা পাত্তা পান না। আর সাংবাদিকরাও কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়িতে ব্যস্ত থাকেন। এখন সাংবাদিকরা কোনো গসিপ লিখলে শিল্পীরা তাকে শত্রু মনে করেন। আর সাংবাদিকরাও অনেক সময় ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে শিল্পীদের নিয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট ছাপেন। এটাও ঠিক নয়। গসিপ আমাদের সময়েও ছিলো। আমি নিজেও ছায়াছন্দতে ‘আদার বেপারী জাহাজের খবর’ শিরোনামের একটি বিভাগে গসিপ লিখতাম। কিন্তু সেখানে আক্রমণ ছিলো না। এখন আছে। স্বাভাবিকভাবেই এই অঙ্গনের সম্পর্কগুলো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সবাই প্রয়োজনেই হাসে, কথা বলে। আন্তরিকতার বালাই নেই। তাছাড়া, আরেকটি বিষয় বলতেই হয়। সেসময়ের তারকারা ছবি করতেন চরিত্র দেখে। আর এখন নায়ক-নায়িকারা আগে টাকা দেখেন, পরে পরিচালক দেখেন। রাজ্জাক ও শাবানা যে বয়সে, যে তারকা খ্যাতি নিয়ে ছুটির ঘণ্টা ছবিতে স্কুলের দপ্তরি ও আয়ার চরিত্রে কাজ করেছিলো এখনের শাকিব-অপুরা এটা কখনোই করবে না। তারা ভাববে নিজেদের ইমেজের কথা। ইলিয়াস কাঞ্চন, ওমর সানী, সালমানরা তারকা খ্যাতির আকাশ চুঁড়ায় পৌঁছেছিলেন। কিন্তু তাদের নিয়ে কখনোই কোনো খারাপ আচরণের খবর পাওয়া যায়নি। আর এখন ছবির সেট থেকে পরিচালকের সাথে রাগ করে নায়িকা চলে এসেছেন- এই খবরও শুনতে হয়! একজন তারকার সাথে আরেকজন তারকার সম্পর্ক এখন ভালেঅ থাকে না। কিন্তু সেসময় এমন ছিলো না। এক ছবিতে আমরা শাবানা-রাজ্জাক-আলমগীরকে অভিনয় করতে দেখেছি। কাঞ্চন-ওমর সানী-মৌসুমী একসাথে কাজ করেছে। আর এখন শাকিব-শুভকে এক করা যায় না। পরিচালক ভারত থেকে অভিনেতা এনে ছবি করেন। এ বিষয়ে তখনকার সময়ে শিল্পীদের সম্পর্কের একটি অনন্য উদাহরণ হতে পারে শাবানা ও কবরী। শাবানা তার প্রযোজিত প্রথম ছবি পরিচালক আজিজুর রহমানকে দিয়ে নির্মাণ করেছিলেন। ‘সোনার তরী’ নামের সে ছবিতে চাইলে তিনি নিজেই অভিনয় করতে পারতেন। আজকালকার কোনো অভিনেত্রী হলে সেটাই করতেন। কিন্তু শাবানা চরিত্রের প্রয়োজন বুঝে সে ছবিতে কবরীকে কাজ করিয়েছিলেন। তখন প্রতিযোগীতা ছিলো, কিন্তু বেয়াদবি, অভদ্রতার জায়গা ছিলো না। আমার সৌভাগ্য আমি সেই সময়টা দেখেছি। আবার আমার দুর্ভাগ্যও যে আমি আমূল বদলে যাওয়া একটা ফিল্ম ইন্ড্রাষ্ট্রি দেখছি।

জাগো নিউজ : আমাদের এখানে চলচ্চিত্রকে নানা ধারায়, নানা ভাগে ভাগ করা হয়। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কি?
আওলাদ হোসেন : দেখো ভাই, যে চিত্র চলমান তাই চলচ্চিত্র। একমাত্র এই উপমহাদেশেই এত নাম। কিন্তু অন্য দেশে চোখ রেখে দেখ সেখানে নাটক-টেলিফিল্ম-চলচ্চিত্র বলে আলাদা কিছু নেই। ওখানে একটাই নাম সেটি হলো মুভি। আমাদের এখানে অনেকেই চলচ্চিত্রকে বাণিজ্যিক ধারার ছবি আখ্যা দিয়ে নিজেদের সুশীল সমাজের চলচ্চিত্র বোদ্ধা ভাবেন। কিন্তু সব চলচ্চিত্রই ব্যবসার স্বার্থে বানানো হয়। বাণিজ্যিক ধারার বাইরে কেউ নয়। একটু বিষয়ভিত্তিক গল্প নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রকে আমাদের এখানে আর্ট ফিল্ম বলা হয়। কিন্তু সবই ফিল্মই আর্ট। কোনোটা হয়তো সেই মানের জায়গাটি উথরে যেতে পারে না, কোনো টি পারে। কিন্তু শিল্পের বাইরে গিয়ে তো আর চলচ্চিত্র হয় না। কারণ, চলচ্চিত্র নিজেই একটা শিল্প। ধারা-উপধারা এসব সবাই নিজেদের স্বার্থে তৈরি করেছে। আবার হতে পারে নিজস্ব ঘরানাকে পরিচিত করতেও হয়তো এসব নামকরণ। তবে সে যাই হোক, আজকাল যেগুলোকে আর্ট ফিল্ম বলা হচ্ছে সেগুলো মোটেও তা নয়। ওগুলো ছোট পর্দাতেই মানানসই। আমরা আর্ট ফিল্মের কথা বলতে গেলে সূর্য দীঘল বাড়ি, শ্যামল ছায়ার নাম বলবো।

জাগো নিউজ : নতুন সময়ের তারকাদের আপনি কি পরামর্শ দিবেন?
আওলাদ হোসেন : আমি প্রথমেই বলবো খ্যাতির পিছনে ছুটে বেড়ানোর কিছু নেই। ভালো কাজ করলে খ্যাতি এমনিতেই ধরা দিবে। আগে নিজেকে অভিনয়ের জায়গাটিতে প্রস্তুত করতে হবে। কাজের পরিমাণ না বাড়িয়ে মান বাড়াতে হবে। সিনিয়রদের প্রতি বিনয়ী ও শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। তাদের অভিজ্ঞতা নিজের মাঝে ধারণ করতে হবে। এই ইন্ড্রাষ্ট্রিতে অনেক মেধাবী নায়ক-নায়িকা রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের উচিত ক্যারিয়ারটাকে লম্বা করা; আর সেটা করতে হবে অভিনয়কে ভালোবেসে।

জাগো নিউজ : আপনি তো খুব কাছ থেকে সালমান শাহকে দেখেছেন। তার সম্পর্কে কিছু বলুন...
আওলাদ হোসেন : সালমান ছিলো খুব মেধাবী আর পরিশ্রমী একটা ছেলে। মানুষ হিসেবে সালমান ছিলো আধুনিক ও স্টাইলিশ। ও খুব মিশুক ছিলো। ওর ব্যবহার মুগ্ধ করতো সবাইকে। আমাকে খুব সম্মান করতো। একটা সময় অভিনয় করবে বলে বিটিভিতে ঘুরে বেড়িয়েছে। তেমন কোনো সুযোগ কেউ দেয়নি। অবশ্য বেশি কিছু নাটক ও বিজ্ঞাপনের কাজ করেছিলো সে। তারও অনেক পরে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে চলচ্চিত্রে যাত্রা। বাকিটুকু সবারই জানা। রাতারাতি তারকা বনে গেল। তবে সালমানের জনপ্রিয়তা এখন যতোটা দেখা যায় তখন ঠিক ততোটা ছিলো না। সালমানের প্রায় দশটিরও বেশি ছবি আছে যেগুলো ফ্লপ ছিলো। ও জনপ্রিয় বা অমর নায়ক হয়েছে ‘আফটার ডেথ’। ওইটুকু বয়সের রোমান্টিক এক নায়কের মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেনি দর্শক। তাছাড়া ওর মৃত্যুর রহস্যটাও ওকে জনপ্রিয়তা পাইয়ে দিয়েছে। ঢাকাই ছবিতে সত্যিকারের জনপ্রিয়তা নিয়ে মারা গেছেন জসীম, জাফর ইকবাল ও মান্না।



জাগো নিউজ : এবার একটি ভিন্ন প্রশ্ন করি। জাফর ইকবাল ও ববিতার প্রেম নিয়ে অনেক কথা শুনতে পাওয়া যায়। আপনি বলবেন কিছু এই সম্পর্কের বিষয়ে?
আওলাদ হোসেন : আসলে এসব কথা বাতাসে ছড়িয়েছে। ববিতা ম্যাডাম এমন একজন নায়িকা যার প্রেমে পড়াটাই স্বাভাবিক। ববিতার সাথে যারা কাজ করেছেন সব নায়কই তার প্রেমে পড়েছেন। একসময় সোহেল রানার সাথে ববিতার প্রেম ছিলো বলে শোনা যেত। আরো কয়েক নায়কের সাথেই ববিতার প্রেম-বিয়ের গুঞ্জন শোনা যতে। কিন্তু শেষপর্যন্ত কোনোটাই সত্যি হয়নি। সবাই আলাদা আলাদা বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। তাই জাফর ইকবাল ও ববিতার সম্পর্কের যে গল্প সেটিও সত্যি নয়। জাফর ইকবাল চলচ্চিত্রে আসার আগেই বিবাহিত ছিলেন। ববিতাকে তার ভালো লাগতেই পারে। কিন্তু সেটা তিনি কোনোদিন কারো কাছে বলেন নি। আসলে দুজনের স্ক্রিণ কেমস্ট্রিটা ভালো ছিলো। সেজন্যই এত গল্প। অনেকেই বলে ‘সুখে থাকো নন্দিনী’ গানটি জাফর ইকবাল ববিতার জন্য গেয়েছেন। এটি মিথ্যে। গানটি মূলত আলাউদ্দীন আলী নিজের প্রেমিকার বিয়ের সময় তৈরি করেছিলেন। গানটিকে সহজে জনপ্রিয় করতে তিনি সেটি গাইতে দিয়েছিলেন জাফর ইকবালকে। হয়েওছিলো তাই। সেসময় জাফর ইকবাল মানে একটা ক্রেজ। তার ফ্যাশন, স্টাইল সবই ছিলো অনুকরণীয়। তিনি যেসব ফ্যাশন ত্রিশ বছর আগে করে রেখে গেছেন সেসব এখন শাকিব-বাপ্পিরা করছে। তার প্রেমে পড়াটাও স্বাভাবিক। অনেক নায়িকারা জাফর ইকবালের প্রেমে পড়েছেনও। কিন্তু ববিতা ম্যাডামের কাছ থেকে সেরকম কোনো ইঙ্গিত বা সূত্র কেউ কোনোদিন পায়নি।

জাগো নিউজ : আজকাল কলকাতা থেকে প্রচুর শিল্পী এদেশের ছবিতে কাজ করছে। বিষয়টি কিভাবে মূল্যায়ণ করবেন?
আওলাদ হোসেন : এটি নতুন কিছু নয়। অনেক আগে থেকেই ওপারের শিল্পীরা এপারে এসে কাজ করেছে। এখনও আসছে। সামনেও আসবে। কিন্তু এক ঋতুপর্ণা ছাড়া আর কেউ সফল হতে পারেননি। ঋতুপর্ণাও সফল হয়েছিলেন অশ্লীলতা দিয়ে। যখন এদেশের নায়িকারােই অশ্লীলতা শুরু করলো তখন আর ঋতুপর্ণার চাহিদা থাকেনি। এরপর প্রসেনজিৎ অনেকবার চেষ্টা করে সফল হয়েছেন গৌতম ঘোষের ‘মনের মানুষ’ ছবিতে। আর বর্তমানে যারা এসে কাজ করছেন তাদের মধ্যে সোহম ছাড়া আর কেউই তেমন পরিচিত ও জনপ্রিয় নন। সুতারাং তাদের সাফল্যও আমি আশা করি না। আর তাই আমার মনে হয় এটা কোনো প্রভাবই ফেলবে না আমাদের চলচ্চিত্রে। না ইতিবাচক, না নেতিবাচক। আজকে যদি দেব-জিৎ এসে কাজ করতো তবে ভাবার কিছু ছিলো। পরমব্রত, ইন্দ্রনীলকে এই দেশে কেউ চিনে না। এদের আসা না আসা আমার কাছে কোনো বিষয়ই নয়।

জাগো নিউজ : এবার একজন অগ্রজ হিসেবে অনুজ বিনোদন সাংবাদিকদের জন্য কিছু বলুন....
আওলাদ হোসেন : তারকার পিছনে না ছুটে নিউজের পিছনে ছুটতে হবে। বিশেষ কারো অনুগ্রহ আশা না করে নিজের দায়িত্বটা ঠিকটাক পালন করতে হবে। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার চর্চা রাখতে হবে। এখনকার সাংবাদিকরা পড়াশোনা করতে চায় না। যে যেখানেই কাজ করুক, সেখানকার সবকিছু তার আয়ত্তে থাকা উচিত। আমাদের শোবিজ ও চলচ্চিত্রের ইতিহাস, তারকাদের ক্যারিয়ার, জীবন সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। অভিযোগ পাই, সাংবাদিক সিনিয়র একজন অভিনেতার সাক্ষাতকার নিতে গিয়ে প্রশ্ন করেন- আপনার প্রথম চলচ্চিত্র কোনটি? এটা হতাশাজনক। কারো সাথে কথা বলার আগে তার সম্পর্কে স্টাডি করা উচিত। গ্রুপিংটা এই মুহূর্তে বিনোদন সাংবাদিকতায় একটা সমস্যা। এসব অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। আর সাংবাদিকতা বিক্রি করে আজকাল অনেকেই অনেক কিছু করছে। এতে করে সমাজে ও শোবিজে মূল্য কমছে আমাদেরই। এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

জাগো নিউজ : আপনার জন্ম ও পরিবার সম্পর্কে বলুন....
আওলাদ হোসেন : ১৯৬৬ সালের ১৯ আগস্ট ঢাকার ইসলামপুরের নিজ বাড়িতে আমার জন্ম। বাবা মৃত মোবারক হোসেন ও মা লুৎফুন্নেসার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। হাম্মাদিয়া হাইস্কুলের মানবিক বিভাগ থেকে ১৯৮২ সালে এসএসসি, ১৯৮৪ সালে শেখ বোরহান উদ্দীন কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগ থেকে ১৯৮৭ সালে অনার্স পাশ করি আমি। মাস্টার্স করতে পারিনি। ৮৭’তে সাংবাদিকতায় প্রবশে। ১৯৯২ সালের ৯ জানুয়ারী মৌসুমী হোসেনকে বিয়ে করি। আমাদের মো. শাহবাজ হোসেন মুন ও অপরাজিতা হোসেন মীম নামে দুই সন্তান আছে। ছেলে ও মেয়ে দুজনেই বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ছে।

জাগো নিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সময় দেয়ার জন্য।
আওলাদ হোসেন : জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ। আমি অনলাইন পোর্টালটির সমৃদ্ধি কামনা করছি।

এলএ/পিআর