অভিনন্দনে ভাসছেন সুবর্ণা মুস্তাফা
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয়ের আঙিনায় মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন নন্দিত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। বাংলাদেশের নাট্যজগতে বিশেষ মর্যাদার স্থান অধিকার করে আছেন তিনি। আশির দশকে ছিলেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী।
বিশেষ করে আফজাল হোসেন, হুমায়ুন ফরীদি ও আসাদুজ্জামান নূরের সাথে তার জুটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিলো আশি-নব্বই দশকে। সেইসাথে হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও চলচ্চিত্রে দারুণ সব চরিত্রে কাজ করে সুবর্ণা পৌঁছে গিয়েছেন সব শ্রেণির মানুষের কাছে।
গুণী এই অভিনেত্রী দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পেয়েছেন বহু স্বীকৃতি ও পুরস্কার। সেই সাফল্যের মুকুটে যোগ হতে যাচ্ছে এবার রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। একুশে পদক পাচ্ছেন তিনি। অভিনয়ের জন্য দেশের জাতীয় এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক এ পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন তিনি।
বুধবার সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদকপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে। সে তালিকায় রয়েছে সুবর্ণা মুস্তাফার নাম। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে একুশে পদক তুলে দেবেন।
প্রিয় অভিনেত্রীর একুশে পদক প্রাপ্তির খবরে আনন্দের বান ডেকেছে সংস্কৃতি অঙ্গনে। তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তার কাছের মানুষেরা, সহকর্মী ও ভক্তরা।
অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত ফেসবুকে সুবর্ণা মুস্তাফাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, ‘অনন্ত অভিনন্দন সুবর্ণা মুস্তাফা। বাংলাদেশের নাট্য জগতকে আপনার অসাধারণ অভিনয়শৈলী দিয়ে সমৃদ্ধ করবার স্বীকৃতিস্বরূপ
আপনাকে একুশে পদক প্রদান করায় আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। ভালবাসা অফুরান।’
অভিনেত্রী রুনা খান লিখেছেন, ‘অভিনন্দন..অভিনন্দন..অভিনন্দন...প্রাণঢালা অনন্ত অভিনন্দন...! তোমার একুশে পদক প্রাপ্তিতে আমরা গর্বিত, সম্মানিত। শ্রদ্ধা এবং অফুরান ভালোবাসা তোমার জন্য। খুব..খুব..খুব আনন্দিত তোমার এই অর্জনে সুবর্ণা আপা।’
এবারে সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে সংস্কৃতি অঙ্গনের আরও পাঁচজন একুশে পদক পাচ্ছেন। তারা হলেন কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী, খায়রুল আনাম শাকিল, লাকী ইনাম, লিয়াকত আলী লাকী এবং মরনোত্তর একুশে পদক পাচ্ছেন পপগুরু আজম খান।
প্রসঙ্গত, প্রখ্যাত অভিনেতা গোলাম মুস্তাফার মেয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা ১৯৫৯ সালের ২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন।
শৈশব থেকেই বাবার অনুপ্রেরণাতেই সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়। নিজেকে জড়িয়ে নেন মডেলিং আর অভিনয়ের সাথে। সম্মোহনের চাহনি আর অসাধারণ বাচনভঙিতে সুবর্ণা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন চমৎকার ব্যক্তিত্বের এক অভিনেত্রী হিসেবে।
প্রথমে মঞ্চে কাজ করলেও আশির দশকে টিভিতে অভিষেক ঘটে তার। মঞ্চ ও টিভি- দুই মাধ্যমেই জনপ্রিয়তা পান সুবর্ণা। সেসময় তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবেও কাজ করেন। তবে সুবর্ণা আলোচনায় আসেন ১৯৯০ সালে বিটিভিতে প্রচার হওয়া হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে বরকত উল্লাহর পরিচালনায় ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের হাত ধরে।
সে নাটকে আসাদুজ্জামান নূর অভিনীত কালজয়ী চরিত্র বাকের ভাইয়ের নায়িকা মুনা চরিত্রে দেখা যায় সুবর্ণাকে। তিনি বাজিমাত করে দিয়েছিলেন।
তারপর নিয়মিতভাবেই তাকে হুমায়ূনের নাটকে কাজ করতে দেখা যায়। তারমধ্যে দারুণ জনপ্রিয়তা পায় ‘আজ রবিবার’ নাটকটি।
১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়া হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত মুস্তাফিজুর রহমানের ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ছবি দিয়েও দর্শকদের মনে দোলা দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে আসাদুজ্জামান নূর ও ডলি জহুরের ছোট বোনের চরিত্রে অভিনয় করেন সুবর্ণা।
তবে চলচ্চিত্রে সুবর্ণার অভিষেক ঘটে ১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ‘ঘুড্ডি’র মাধ্যমে। নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে সাফল্য পেলেও তিনি নিয়মিত গড়পড়তা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি। কিছু জীবন ঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্রে তার উপস্থিতি দেখা গেছে। তিনি অভিনয় করেছেন। তবে মূলধারার কিছু সিনেমাতেও তার উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়।
‘নয়নের আলো’ সিনেমাতে তার অভিনয় সব শ্রেণির দর্শককে নাড়া দিয়েছিল। ১৯৮৩ সালে ‘নতুন বউ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
সুবর্ণা মুস্তাফা ব্যক্তিজীবনে ভালোবেসে দাম্পত্য গড়েছিলেন প্রয়াত অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদির সাথে। সেই সংসার ২০০৮ সালে ভেঙে গেলে তিনি পুনরায় বিয়ে করেন নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার বদরুল আলম সৌদকে। সুখেই কাটছে সেই সংসার।
মাঝেমাঝেই দারুণ সব চরিত্র নিয়ে অভিনয়ে দেখা যায় সুবর্ণা মুস্তাফাকে। কাজ করে যাচ্ছেন নিভৃতচারীর মতোই। সর্বশেষ তিনি দর্শক মাতিয়েছে ‘গহীন বালুচর’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে।
নন্দিত সুবর্ণা মুস্তাফাকে অভিনন্দন একুশে পদক প্রাপ্তিতে।
এলএ/এমকেএইচ