বুলবুলের মৃত্যুর বিষয়ে যা বললেন হাদী ও হানিফ
২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে সাক্ষ্য দেন মুক্তিযোদ্ধা ও সঙ্গীতজ্ঞ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। মাত্র ১৫ বছরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া বুলবুলের অভিযোগ ছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার কারণেই তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর নিরাপত্তার জন্য প্রায় পাঁচ বছর ধরে পুলিশি পাহারায় জীবনযাপন করেন তিনি।
গত মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) ভোর ৪টার দিকে আফতাব নগরের নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৬৩ বছর বয়সী বরণ্যে এই সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব।
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানাতে আজ বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হয় আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মরদেহ। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি আসেন রাজনীতি ও সঙ্গীত অঙ্গনের ব্যক্তিরাও। আসেন সঙ্গীত শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। বুলবুল আহমেদের মৃত্যুর বিষয়ে তারা কথা বলেছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।
সৈয়দ আব্দুল হাদী বলেন, ‘তার অকাল মৃত্যু হয়েছে। এই সময় তার চলে যাওয়াটা আমাদের জন্য, সঙ্গীত জগতের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তার অকাল মৃত্যুর পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। যেগুলো হয়তো আরেকটু সচেতন হলে এড়ানো যেত।’
‘যেমন দীর্ঘদিন তিনি তো প্রায় অন্তরীণ অবস্থায় ছিলেন। বন্দিদশায় বলা যেতে পারে। এই বন্দিদশায় থেকেই তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছিল। এছাড়া সঙ্গীত জগত থেকেও প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিলেন মানসিক কারণে’- যোগ করেন সৈয়দ আব্দুল হাদী।
তিনি বলেন, ‘যাই হোক, যা হয়ে গেছে এটা তো আর ফিরবার নয়। তিনি মরে গেলেও তার সৃষ্টি আমাদের মনে, বাঙালির মনে চিরদিন জেগে থাকবে। বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে যে কয়জন তরুণ বাংলাদেশের সঙ্গীতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন বুলবুল তাদেরই অন্যতম একজন। তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে, বাংলা ভাষীদের মাঝে একজন বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক হানিফ বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন বুলবুল। তখন তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল। এ জন্য তার সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ঘাতকরা যাতে তাকে স্পর্শ করতে না পারে। এতে হয়তো তার মনে ক্ষোভ ছিল। কিন্তু জাতি হিসেবে, সরকার হিসেবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের যতটুকু করণীয় ছিল, সর্বোচ্চটা করেছে।’
গত বছরের ১৫ মে ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।
তাতে তিনি লেখেন, ‘সরকার এর নির্দেশেই ২০১২ তে আমাকে যুদ্ধ অপরাধীর ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় সাক্ষী হিসাবে দাঁড়াতে হয়েছিল। সাহসিকতার সাথে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে হয়েছিল ১৯৭১ এ ঘটে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলখানার গণহত্যার সম্পূর্ণ ইতিহাস। আর, ওই গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ৫ জনের মধ্যে আমিও একজন। হত্যা করা হয়েছিল একসঙ্গে ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে।
কিন্তু, এই সাক্ষীর কারণে আমার নিরপরাধ ছোটো ভাই "মিরাজ" হত্যা হয়ে যাবে এ আমি কখনওই বিশ্বাস করতে পারিনি। সরকারের কাছে বিচার চেয়েছি, বিচার পাইনি।
আমি এখন ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারায় গৃহবন্দী থাকি, একমাত্র সন্তানকে নিয়ে। এ এক অভূতপূর্ব করুণ অধ্যায়।
একটি ঘরে ৬ বছর গৃহবন্দি থাকতে থাকতে আমি আজ উল্লেখযোগ্য ভাবে অসুস্থ। আমার হার্টে ৮ টা ব্লক ধরা পড়েছে, এবং Bypass Surgery ছাড়া চিকিৎসা সম্ভব না।…”
বুধবার বেলা পৌনে ১১টায় বুলবুলের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। ১১টার দিকে গার্ড অব অনার শেষে শহীদ মিনারের পাদদেশে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাখা হয়। এরপর দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের উদ্দেশে রওনা দেয়। সেখানে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দ্বিতীয় জানাজা হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে। সেখান থেকে দাফনের জন্য মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রদীপ দাস/জেএইচ/আরআইপি