ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

মৃত মানুষ দেখতে কী ভয় পান চলচ্চিত্রের তারকারা?

লিমন আহমেদ | প্রকাশিত: ০৩:৩৭ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

সর্বশেষ নায়ক রাজ রাজ্জাকের জানাজাতে দেখা গিয়েছিলো চলচ্চিত্রের মানুষদের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি। অনেকে নানা ব্যস্ততায় ও দেশের বাইরে থাকায় আসতে না পারলেও নানাভাবে পৌঁছে দিয়েছিলেন তাদের শোক বার্তা।

তবে সেই উপস্থিতির সংখ্যাটাও ছিলো চলচ্চিত্রের বিশালতার তুলনায় নগন্যই। তবুও এত এত তারকারা সেদিন এসেছিলেন নায়ক রাজকে বিদায় জানাতে। বিষয়টি প্রশংসিত হয়েছিলো।

কিন্তু প্রায় সময়ই দেখা যায় খুবই বাজে ও করুণ এক চিত্র। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কেউ মারা গেলে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মরদেহ নিয়ে আসা হয় তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ও প্রিয় আঙিনা এফডিসিতে।

বেশ ঘোষণা দিয়েই মরদেহ নিয়ে আসা হয়। গণমাধ্যমে তার খবরও প্রকাশ হয়। কিন্তু যেদিন মরদেহ আসে সেদিন ফুল দেয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। সাধারণ মানুষ উৎসাহ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও দেখা যায় না ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের।

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতির নেতৃত্বেই বেশিরভাগ সময় মৃত ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদন ও জানাজার আয়োজন করা হয়।সেখানে উপস্থিত থাকেন নামে মাত্র কয়েকজন পদস্থরা। কিন্তু আসেন না তারকারা। ফেসবুক ও গণমাধ্যম ভর্তি নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা।  চোখ মেললেই নানামুখী প্রচারণা তাদের। এত এত নায়িকা নিয়ে সমালোচনাও কম নয়। কিন্তু সহকর্মীদের মৃত্যু হলেই তারা যেন কোথায় হারিয়ে যান!

কেন? তারা কী মৃত মানুষ দেখতে ভয় পান? সেই প্রশ্নই বারবার ঘুরে ফিরে আসে যখন চলচ্চিত্রের কেউ মারা যান। নাকি তারা মনে করেন, ফেসবুকে ‘রিপ’ বা দুই এক লাইন লিখে শোক প্রকাশ করলেই দায় সাড়া হয়ে গেল?

চিত্রনায়িকা দিতির মৃত্যুর পর ফেসবুকে রীতিমত শোকের বান ডেকেছিল। কিন্তু তার সিঁকিভাগও দেখা যায়নি জানাজাতে। অনেকেই এফডিসিতে থেকেও হাজির হননি দিতির মরদেহের পাশে।

তারও আগে চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত সাংবাদিক আওলাদ হোসেনের মৃত্যুর পর শোকের চাদরে ঢাকা পড়েছিলো এফডিসি। অনেকেই মুখ ভরা বুলিতে শোকের মিছিল নামিয়েছিলেন। কিন্তু তার জানাজায় আসেননি তাদের চার ভাগের একভাগও। দেশের শীর্ষ ক’জন তারকা এফডিসিতে শুটিং করছিলেন। এক মিনিটের জন্যও তারা দেখতে আসেনি আওলাদ হোসেনের মুখ। অথচ একজন মৃত মানুষের কোনো শত্রু থাকে না বলেই ধরা হয়।

এ কেবল দুজনের উদাহরণ। এটি নিয়মিত চিত্র। সর্বশেষ যার পুনরাবৃত্তি ঘটলো নন্দিত গানের মানুষ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের জানাজায়। গতকাল তার মৃত্যুর পর থেকেই শোকে মুহ্যমান সংস্কৃতি জগত।

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী তাদের ব্যস্ত রুটিনের ফাঁক গলে বুলবুলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। শোক জানিয়েছেন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নানা ব্যক্তিত্বরা। তাদের চেয়েও কী এমন ব্যস্ততা আমাদের তারকাদের, চলচ্চিত্রের মানুষদের যার শিডিউল থামিয়ে তারা একজন কিংবদন্তিকে শেষ বিদায় জানাতে আসতে পারেন না?

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের জানাজায় আজ অংশ নিতে অসুস্থতা নিয়েও এফডিসিতে উপস্থিত হয়েছেন বরেণ্য গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। যিনি কয়েকদিন আগেও হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর খেলায় লড়েছিলেন।

আজ উপস্থিত ছিলেন শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে চিত্রনায়ক আলমগীর, রিয়াজ, জায়েদ খান, পরিচালক সমিতির পক্ষ থেকে মুশফিকুর রহমান গুলজার, নৃত্য পরিচালকাদের পক্ষ থেকে মাসুম বাবুল, প্রযোজকদের পক্ষ থেকে খোরশেদ আলম খসরুসহ আরও কয়েকজন।

কিন্তু যে মানুষটা ত্রিশ বছর ধরে চলচ্চিত্রের একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন, যার হাত ধরে এত এত নায়ক-নায়িকার প্লাটফর্ম এই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি শত শত হিট-ুসপারহিট গান পেয়েছে, যার গান এত এত সিনেমা ও তারকাদের সফল হওয়ার নৈপথ্য কারিগর হিসেবে কাজ করেছে সেই কিংবদন্তির শেষ যাত্রায় চলচ্চিত্রের মানুষদের উপস্থিতি খুবই বেদনার। লজ্জার।

আমাদের তারকারা কী সেই বেদনা বা লজ্জা টের পান? বিশেষ করে এই প্রজন্মের ডজন ডজন নায়ক-নায়িকারা? বিশেষ করে যারা চলচ্চিত্রের জন্য নিজেদের খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করেন তারা?

কেউ কী নেই আমাদের চলচ্চিত্রের মনুষদের এটুকু বোঝাবে যে শুধু সিনেমা করে সিনেমা হিট করাই চলচ্চিত্র শিল্প নয়, শিল্পীদের আচরণ-ব্যবহারও এর অংশ। কারো মৃতদেহ শ্রদ্ধার জন্য আনা হলে সেখানে আসতে হয়, হৃদয়টা ওই মৃত মানুষটির জন্য দোয়ায় রাখতে হয়।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘এটা খুবই খারাপ একটি চর্চা। এমন কোনো ব্যস্ততা বা কারণ না থাকলে একজন সহকর্মীকে অবশ্যই শেষ বিদায় জানাতে আসা উচিত। কারণ এফডিসিতে মরদেহ নিয়ে আসা হয় এখানকার সবাই তাকে শ্রদ্ধা জানাবে সেই প্রত্যাশা থেকেই।

যদি শ্রদ্ধা জানানোর মানুষই না থাকে তাহলে অযথাই অপমান করা হয় ওই মৃত ব্যক্তিটিকে, তার কর্ম ও জীবনকে। আমাদের এগুলো শিখতে হবে। একজন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল রোজ রোজ জন্মায় না। কয়েক দশকে একজন আসেন। তাছাড়া একদিন আমিও মারা যাবো। আমি আজ কারো সম্মানে না গেলে আমাকেও কেউ দেখতে যাবে না।’

এলএ/জেআইএম

আরও পড়ুন