পুরস্কারের দুই ছবির নায়কই রিয়াজ, স্মৃতিচারণে চোখ ভেজালেন
সেই ১৯৭৮ সালে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ ছবিতে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন সদ্য প্রয়াত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে তিনি শত শত চলচ্চিত্রে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান।
কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি পেয়েছেন দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। মজার ব্যাপার হলো
‘প্রেমের তাজমহল’ ও ‘হাজার বছর ধরে’ দুটি ছবিরই নায়ক রিয়াজ। তাই আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের প্রয়াণে সারাদেশের সংগীত পিপাসু মানুষ যখন শোকে কাতর, এই চিত্রনায়ক যেন একটু বেশিই শোকাহত।
গুণী এই মানুষটিকে নিয়ে বলতে গিয়ে রিয়াজ বলেন, ‘এটা আমার সত্যি দারুণ এক সৌভাগ্য যে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মতো কিংবদন্তি যে দুটি ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন দুটি ছবিরই নায়ক আমি। এটা কাকতালীয়, এটা গর্ব করে বলার মতো একটি প্রাপ্তি।
কারণ, এই দেশের সংগীতাঙ্গনে একজন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের বিকল্প হয় না। গান লিখতে, সুর করতে ও সংগীত পরিচালনায় দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। আপাদমস্তক একজন শিল্পী ছিলেন বুলবুল ভাই।’
এই চিত্রনায়ক স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘যখনই দেখা হতো চমৎকার একটা হাসি দিয়ে মুগ্ধ করে ফেলতেন। তার সঙ্গে মিশেছি ঘনিষ্ঠভাবে। আমি তাকে সবসময় শ্রদ্ধা করেছি। তিনিও আমাকে খুব পছন্দ করতেন। আমি জানি না কেন এমন হতো, যখনই তিনি আমার অভিনীত সিনেমার গান করতেন সেগুলো একটি বেশিই দরদ মেশানো থাকতো যেন! প্রকাশ হলেই দর্শক-শ্রোতা লুফে নিতেন।
তিনিও বলতেন, রিয়াজ তোমার জন্য গান লিখলেই ভালো হয়ে যায় কেন বলো তো? আমি হাসতাম শুনে। চলচ্চিত্র পরিচালক মোহাম্মাদ হান্নান, মতিন রহমান ভাইদের সঙ্গে উনার খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। আমিও তাদের সিনেমায় অনেক কাজ করেছি। সেই সূত্রে বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে দারুণ একটা রসায়ন তৈরি হয়েছিলো।
তাছাড়া আমার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সিনেমার গানই বুলবুল ভাইয়ের করা। এবং সেইসব সিনেমার অধিকাংশ গান সুপারহিট, আজও সবাই শুনেন। দুঃখ লাগে এইসব গানের খুব বাজে রিমেক হতে দেখে। বুলবুল ভাইয়ের গান রিমেক করতে হলে তার সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে পারিশ্রমিক দিয়েই করা উচিত ছিলো বলে মনে করি আমি। কিন্তু সেটা হয়নি। ভবিষ্যতে যারা যে গানই রিমেক করুক না কেন সেটা যেন সঠিকভাবে হয়।’
ব্যক্তি বুলবুলেরও ভক্ত রিয়াজ। তিনি বলেন, ‘শিল্পের বাইরেও যদি বুলবুল ভাইকে নিয়ে ভাবতে যান দেখবেন বিশাল এক বটগাছের মতো দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। বুক ভরা ছিলো তার সাহস। তার ব্যক্তি জীবনের অনেক গল্পই জানে না। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তিনি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
যুদ্ধ চলাকালীন বারবার তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়েও বারবার ফিরে এসেছেন ভাগ্য, সাহস আর কৌশলের বিনিময়ে। যুদ্ধের পরও তিনি চিরকাল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য প্রেমিক ছিলেন। গানে গানে দেশপ্রেম ছড়িয়েছেন তিনি। তার জীবনের গল্পের শেষ নেই। এইসবই নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার।’
এই চিত্রনায়ক আরও বলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি বুলবুল ভাই যেন জান্নাতবাসী হন। তার ছেলের জন্য সমবেদনা থাকলো। ও যেন বাবার আদর্শে সুন্দর মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’
প্রসঙ্গত, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল প্রথমবার পুরস্কার পান ২০০১ সালে ‘প্রেমের তাজমহল’ সিনেমায় টাইটেল গানের সংগীত পরিচালক হিসেবে। গাজী মাহবুব পরিচালিত সিনেমাটিতে ‘প্রেমের তাজমহল’ গানটির কথা ও সুরও করেছেন তিনি।
এই গান গেয়ে প্রথমবারের মতো গায়ক হিসেবে পুরস্কার পান মনির খান। দ্বৈতকণ্ঠ দিয়ে কনক চাঁপাও এই গানের জন্য পুরস্কার পান। ছবিটির নায়ক-নায়িকা ছিলেন তৎকালীন সময়ের শ্রেষ্ঠ সফল জুটি রিয়াজ-শাবনূর।
এরপর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের হাতে সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার উঠে ২০০৫ সালে ‘হাজার বছর ধরে’ সিনেমায় ‘আশা ছিলো মনে মনে’ গানটির জন্য। জহির রায়হানের উপন্যাস অবলম্বনে সুচন্দার পরিচালনায় এই ছবির নায়কও ছিলেন রিয়াজ। পর্দায় তার ঠোঁটে দেখতে পাওয়া গানটি কণ্ঠে ধারণ করেছেন নন্দিত গায়ক সুবীর নন্দী।
চলচ্চিত্রের গানে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিটা রিয়াজের ছবির গান দিয়েই শুরু হয়েছিলো আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের। আর শেষও হলো এই নায়কের অভিনীত সিনেমা দিয়েই।
এলএ/আরআইপি