সবাইকে জাগিয়ে ঘুমিয়ে গেলেন সুরের পাখি বুলবুল
বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুনাম আছে শান্ত, নিরীহ, নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ হিসেবে। ঘরে বসে আমৃত্যু করেছেন গানের সাধনা। নিজের মতো থাকতে ভালোবাসতেন নীরবে-নিভৃতে।
কারোর কোনো কিছুতেই গা বাড়িয়ে কথা বলতেন না। অন্যকে বিরক্ত করা তো দূরের কথা! তার সঙ্গে কথা বললেই মনে শান্তির প্রলেপ লাগতো। দার্শনিকের মতো ঝাঁকড়া চুল ঝুলিয়ে গভীর শীতল চাহনীতে নিচু স্বরে বলে যেতেন কথা। এমন মানুষটা চলেও গেলেন নীরবে, শান্ত এক যাত্রায়। একেবারে তার স্বভাবের মতোই এ চলে যাওয়া।
অকালে ছোট ভাই হারানোর শোক, দুষ্কৃতকারীদের হামলার হুমকি, নানা অসুখের কারণে অনেকদিন ধরে শান্তিতে ঘুমাতে পারতেন না তিনি। এ কারণেও তার শরীর খারাপ হয়েছিল শেষ দিকে। অবশেষে সব দুশ্চিন্তা-ঝামেলা কাটিয়ে চির শান্তির নিদ্রায় গেলেন বুলবুল। আর তার ঘুম, ঘুম ভাঙিয়ে গেল এ শহরের, সমগ্র দেশের, তার ভক্ত-অনুরাগীদের।
মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কিংবদন্তি এই গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। তার মৃত্যুর খবরটি ছড়াতে ১০ মিনিট সময়ও লাগেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভোররাত থেকেই শুরু হয় বুলবুলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ।
গানের, সিনেমার, নাটকসহ সংস্কৃতির মানুষেরা গুণী এই মানুষটিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। অনেকেই ছবি পোস্ট করছেন, লিখছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সঙ্গে কাটানো সময়ের স্মৃতিচারণ।
সকালের সূর্য জাগার আগেই সারাদেশে সুরের পাখি বুলবুলকে হারানোর শোক। এ ওকে, ও তাকে ডেকে ডেকে জানাচ্ছেন বুলবুলের না থাকার খবর!
জীবদ্দশায় ভীষণ নিভৃতচারী মানুষটা মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শোরগোল বাঁধিয়ে দিলেন। সবসময় প্রচারের বাইরে থাকতে চাওয়া মানুষটাই এখন প্রচারের কেন্দ্র বিন্দুতে।
সেই প্রচার লিখতে গিয়ে চোখে জল আসে, পড়তে গিয়েও আসে। সে প্রচার জানাতে গিয়ে কান্নায় বুক ভাঙ্গে, জানতে চেয়েও কান্না আসে। আহা! সময়ের কী নির্মম রসিকতা।
নতুন গন্তব্যে যাত্রা শুভ হোক গুণী। অদেখা ভুবনে শান্তিতে থাকুন সবার প্রিয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গানের মানুষ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।
এলএ/আরএস/জেআইএম