‘ব্লাউজের বোতাম খুললে আর ব্রা দেখালেই সাহসী হওয়া যায় না’
বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ভারতীয় বাঙালি মডেল এবং অভিনেত্রী স্বস্তিকা। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের শাহজাহান রিজেন্সি' নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রেম, প্রাক্তন প্রেমিক আর নিজের উত্তরণের কথা বললেন তিনি। ভারতীয় জনপ্রিয় দৈনিক আনন্দবাজারের হয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার আনন্দবাজারের অনলাইনে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছে।
ভোলাপচুয়াস চরিত্র মানেই স্বস্তিকা?
আসলে ছবিটা দেখলে বিষয়টা বোঝা যাবে। আমি কোনো দিন নিজেকে রিপিট করব না। এটা আগেও বলেছি। ‘শাহজাহান রিজেন্সি’-র চিত্রনাট্যটা যখন সৃজিত (পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়) পড়ে শোনায়, খুব ভালো লেগেছিল। কমলিনীর চরিত্র শুনে মনে হয়েছিল সারা জীবনে একজন অভিনেত্রী এমন চরিত্র আর নাও পেতে পারে! অদ্ভুত একটা জৌলুস আছে। আর আছে বেদনা। অভিনয়ের দিক থেকে খুব শক্ত চরিত্র।
কমলিনী কি ‘শাহজাহান রিজেন্সি’-তে শুধুই একজন হস্টেস?
আমরা ভাবি একজন হস্টেস কেবল দেহ বিক্রিই করে। একজন হস্টেস তার ক্লায়েন্টকে সেক্সুয়ালি এন্টারটেন করা ছাড়া আর কী করবে? এটা ভুল। ছবিতে কমলিনীর কাছে লোকে মগজের জন্য আসে। কমলিনীর ক্ষেত্রে সেক্সুয়াল অর্গাজমের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টেলেকচুয়াল অর্গাজম খুব গুরুত্বপূর্ণ। লোকে সে জন্যও আসে ওর কাছে। ওর অসম্ভব পড়াশোনা আছে। নেরুদা থেকে স্টকমার্কেটের বিষয়, খেলোয়াড়দের নাম...যে কোনোও আলোচনায় কমলিনী মেধার উজ্জ্বল মুখ। ওর ইমোশনাল গ্রাফটা পুরো পয়েন্টেড। কখনও পাঁচ তো কখনোও নব্বই। ভীষণ ডিগনিফায়েড চরিত্র।
মানে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মনের মাধুরী মিশেছে এই চরিত্রে...
আমি তো আগেই বললাম। চিত্রনাট্য খুব জোরালো। এত লেয়ারড চরিত্র। কিছু রেখে দিলাম। কিছু ঢেকে রাখলাম এমন চরিত্র নয়। সৃজিত মুখোপাধ্যায় না হয়ে অন্য কোনোও পরিচালক এই চরিত্রটা দিলেও আমি কাজটা করতাম। কাজটা করার পর নিজেরই এত ভালো লেগেছে! টেকনিশিয়ানদের মধ্যে অনেকে এই ছবিটা দেখে বেশ কয়েক জন বলেছে, কমলিনীর জন্য তাদের কষ্ট হয়েছে। এমন সব দৃশ্য আছে... পারফরমার হিসেবে আমি তৃপ্ত!
একটা কথা বলুন, এ রকম একজন বিদুষী সুন্দরী নারীর এত করুণ পরিণতি...
এটা দেখার জন্য ছবিটা দেখতে হবে। আমি সৃজিত, ওর ইউনিটের লোক সকলেই ভাবতাম, এ রকম একজন নারীর পরিণতি এত মর্মান্তিক কেন হবে? আসলে এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই। আমরা সবসময় বলি যারা আত্মহত্যা করে তারা কাপুরুষ। ভীতু। এসব বড় বড় ডায়লগ বলে কোনো লাভ নেই। মানুষ এমন এক মানসিক পরিস্থিতিতে পৌঁছায়, এমন যন্ত্রণা পায় যে, সেই মুহূর্তে সুইসাইড করে। কেউ এক মাস ধরে প্ল্যান করে মরে না। আর যারা প্ল্যান করে তারা কোনো দিন মরে না। আমি এই বিষয়টা নিয়ে পড়াশুনা করেছি বলেই বলছি, যারা গায়ে আগুন দিয়ে মৃত্যু চায় তারা আগুন লাগার পর মুহূর্তেই কিন্তু দরজা খুলে বেরোতে চায়। আবার বাঁচতে চায়। কে বলবে? এই মুহূর্তের বদলে সব শেষ হয়ে যায়! রিগ্রেট করার সময় ও পায় না। কমলিনীও জীবনে লড়াই করতে করতে একদিন তো ক্লান্ত হবে?
আপনি জীবনে প্রচুর যন্ত্রণা লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন...
হ্যাঁ, তবে আমার পরিবার আমায় রক্ষা করেছে। আর গুটিকয়েক বন্ধু আছে আমার যাদের কাছ থেকে মাঝে মাঝে হোয়াটসঅ্যাপ পাই, ‘তুই ঠিক আছিস? আর কী?’ আজ একটু বাবার কথা বলি। যখন অভিনেত্রী হবো ঠিক করলাম আমার বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায় একটা কথাই বলেছিল ‘নাচতে নেমেছ যদি ঘোমটা টানার থাকে তবে নাচতে নেবই না।’ বুঝতেই পারছেন কতখানি সাপোর্ট এটা।
শুনেছিলাম কোনো এক খবরের কাগজে লঁজারির শুটের ছবি নিয়েও আপনার বাবার উৎসাহ ছিল?
এখন কলকাতা শহরে লঁজারি শুট হচ্ছে। অনেকেই বডি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছেন কিন্ত আমি ২০০৮-এ যখন লঁজারি শুট করেছিলাম, আমার মনে আছে সেটা ছাপার পর মায়ের কাছে সকালে সেদিন প্রচুর ফোন এসেছিল। সবাই বলেছিল, ‘আজকের কাগজ সন্তু যেন না দেখে।’ মা স্বভাবতই বুঝতে পারছিল না কীভাবে রিঅ্যাক্ট করবে। কিন্তু বাবা বলেছিল, ‘ছবির অরিজিনাল নিয়ে ছবি বাঁধিয়ে রাখবে। এই জোর বাবার কাছ থেকেই পাওয়া।’
মা চলে যাওয়ার পর কী স্বস্তিকা পরিণত হলেন?
একদম তাই। বাবার দায়িত্ব। মেয়ের অভিভাবকও তো আমি। আগে সব মায়ের ওপর ফেলে চলে যেতাম। এখন তা সম্ভব নয়। অন্তত দিনের শেষে আমার বাবা আর মেয়ে তো বলবে, তাদের কাছে আমি একজন ‘কমপ্লিট ডটার আর মাদার’।
স্বস্তিকা আসলে অভিনেতা অনির্বাণের পরম ভক্ত
স্বস্তিকা আসলে অভিনেতা অনির্বাণের পরম ভক্ত। আর নিজের সংসার?
সংসারের আগে প্রেম? আমার না বাকি সব ঠিক আছে। ওই প্রেমের জায়গাটা ঘাঁটা। এখন একটা মানসিক জায়গায় চলে এসেছি যে, জানি আমার প্রেম হবে না। আসলে অভিনেত্রীদের জীবনে অনেক জ্বালা!
যেমন?
সে যদি খুব নম্র হয় যে যা বলছে সব শুনবে, লোকে ভাববে সে খুব ‘ইজিলি অ্যাভেলেবল’। আবার অভিনেত্রী যদি ভাবে সে নিজের মতো করে জীবন তৈরি করবে। সাফ কথা বলবে। সেটাও সমস্যা। আমি যে ধরনের ছবি করেছি সেগুলো শুধু আমি পিঠ দেখিয়েছি বা ব্লাউজের বোতাম খুলেছি, ব্রা পরে দাঁড়িয়েছি বলেই সাংঘাতিক সাহস দেখিয়েছি তা নয়। চরিত্রগুলো করার মধ্যেও এক ধরনের সাহসিকতা আছে। সেখানে আমি চরিত্র হিসেবে বলছি, আমার স্বামী যদি আমার শরীরের খিদে না মেটাতে পারে আমি অন্য পুরুষের কাছে যাব। একটা চরিত্রর এই কথা সমাজের সঙ্গে মেলে না। আমার সমস্ত ছবি আমি আমার বাবাকে দেখিয়েছি এবং বাবা কোনো দিন বলেনি, এই দৃশ্য কেন করলি? ওকে কেন চুমু খেলি? প্যান্টি কেন দেখা গেল? তার পরে যদি মানুষের মনে হয় ওর প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে ও আবার অভিনয় করছে কেন? সেটা তাদের সমস্যা। আমার বাবার কথা আমার কাছে শেষ কথা।
এই প্রাক্তন প্রেমিকের প্রসঙ্গ এলো যখন একটা প্রশ্ন আসছে। ‘শাহজাহান রিজেন্সি’-তে সৃজিত আর পরম দুই প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গেই আপনি কাজ করলেন?
এত পুরনো দুটো বিষয়। একটা পোস্ট দেখবেন রিটুইট করেছি। প্রথমে অনেক যায় আসে পরে কিছুই যায় আসে না। এভাবেই আমরা বড় হই। তো দশ বছর আগের সম্পর্ক নিয়ে কী হবে? পরম সেটে ঢুকলেই ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ এর শাহরুখ-কাজল হয়ে যাব নাকি আমরা? রেমেনেসিং আওয়ার ওল্ড মেমরিজ। চল্লিশ ছুঁই ছুঁইতে এসে এই প্যানপ্যানানি চলে না।
আর সৃজিত?
সৃজিত খুব রুথলেস ছবির জন্য। ওর সঙ্গে যদি কারও খুনোখুনি হয় চরিত্রের প্রয়োজনে ও তাকে নেবেই। আর আমার প্রাক্তন প্রেমিক ছবি করলে এ রকম চরিত্র পেলেও করব না? এত বোকা নই আমি।
পরমের সঙ্গে ব্রেকআপের পরেও আপনি ভূতের ভবিষ্যত করেছেন...
সদ্য ব্রেকআপ হয়েছে তখন। তো? ভাবুন আমার ক্যারিয়ারে ভূতের ভবিষ্যত নেই! প্রফেশনালিজম দেখালেও মানুষ খুশি নয়। না দেখালেও সমালোচনা করবে। মানুষকে খুশি করা যাবে না। প্রেমিককেও খুশি করা যাবে না। ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে থেকেও সে আমাকে বলবে, ‘তুমি কেন ওর সঙ্গে কাজ করবে? কেন ওকে চুমু খাবে?’ যে বলছে সে খুব ভালো করে জানে সেটে আমায় ক্যামেরাম্যান বলছে, ডান দিকে ঘুরে দু ইঞ্চি ঝুঁকে ব্লাউজটা খোলো সেখানে আরও চল্লিশটা লোক আছে। এগুলো মাথায় রেখেই একজন অভিনেত্রীকে এই কাজ করতে হয়। তাকেই যত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তারচেয়ে এ রকম কাউকে জীবনে রাখলামই না যে এই প্রশ্ন করতে পারে। আমার বাবা তো আর এগুলো করে না।
বেশ। ছবির কথায় আসি। অনির্বাণ আর আপনি ইতিমধ্যেই বেশ আদরে মেখে আছেন এই ছবিতে...
আমি ওর ফ্যান। সব নাটক দেখেছি। যীশু যখন করতে পারল না ডেটের জন্য তখন চরিত্র নির্বাচন হচ্ছে দেখে আমি সৃজিতকে বলেইছিলাম, ‘প্লিজ, আমার এই উপকারটা করো, এই চরিত্রে অনির্বাণকে নাও। আমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করো। ও খুবই ‘ইনহেবিটেড’। প্রথমে দিদি বলছিল। বললাম, এ কদিন ক্যামেরার সামনে দিদি বললে প্রেম করব কী করে? ও পিসি বলতে শুরু করল। যাই হোক কাজ করে খুব ভালো লেগেছে।’
এসআর/পিআর