দেশের নায়িকা আমদানি করে শুরু হচ্ছে বছর
শুরু হচ্ছে নতুন বছর। মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঢাকাই সিনেমার একটি বছর। সাফল্যের চেয়ে যেখানে ব্যর্থতার পাল্লাটা অনেক বেশিই ভারী। ৫৬টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়া ছবি একেবারেই হাতে গোনা।
তাই নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছেন সিনেমার মানুষেরা। ২০১৯ সালে মুক্তিরও অপেক্ষায় আছে বেশ কিছু জমজমাট সিনেমা।
তবে বছরের শুরুটা কিন্তু বেশ মন খারাপেরই। দেশীয় কোনো সিনেমা নেই। তাই সাফটা চুক্তিতে মুক্তি দেয়া হচ্ছে বিদেশি ছবি। আগামী শুক্রবার, ৪ জানুয়ারি ২০১৯ সালের প্রথম সপ্তাহ। নিশ্চিত হওয়া গেল, সেদিন মুক্তি পাবে কলকাতার ‘বিসর্জন’ সিনেমাটি।
ছবিটির মুক্তি নিশ্চিত করেছেন এর আমদানিকার ‘মধুমিতা মুভিজ’র কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি সোমবার দুপুরে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদেরও ভালো লাগতো দেশি সিনেমা দিয়ে বছরটা শুরু করতে পারলে। কিন্তু ৪ তারিখ মুক্তি দেয়ার মতো কোনো ছবি তৈরি নেই। তাই ‘বিসর্জন’ ছবিটি আমদানি করে মুক্তি দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশি ছবি হলেও এই ছবিটির ক্ষেত্রে একটা দেশি ফ্লেভার রয়েছে। সেটি হলো ছবিটির নায়িকা আমাদের সবার প্রিয় জয়া আহসান। কলকাতার এই ছবিটিতে অভিনয় করে তুমুল প্রশংসিত হয়েছিলেন জয়া। তার অভিনয়ের সুনাম পৌঁছে গিয়েছিলো বলিউডেও। আশা করছি ছবিটি মুক্তি পেলে দর্শক বেশ উপভোগ করবেন।’
নওশাদ আরও বলেন, ‘বিসর্জন ছবিটির সিক্যুয়েল ‘বিজয়া’। আমরা সেই ছবিটিও মুক্তি দিতে যাচ্ছি। জানুয়ারির শেষদিকে ছবিটি মুক্তি পাবে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন কলকাতার এত পুরনো ছবি এখানে হলে চলবে কী না। আমার মতে ভালো ছবি সবসময়ই হলে দর্শক টানে। এই ছবিটি আমাদের দেশেও ভালো সাড়া ফেলেছে। কিন্তু এখানকার দর্শক ছবিটি হলে গিয়ে দেখতে পারেননি। আমার বিশ্বাস হলে দেখার সুযোগ পেলে তারা ঠিকই দেখতে যাবেন।’
বছরের প্রথম ছবিটি বিদেশি। ইন্ডাস্ট্রির জন্য বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে নওশাদ বলেন, ‘একজন হলের মালিকের কাছে আবেগের চেয়ে ব্যবসাটা মুখ্য। যখন চাহিদা অনুযায়ী যোগানের ঘাটতি দেখা দেয় তখনই বিকল্প পথ ভাবতে হয়। সিনেমাতেও তাই হচ্ছে। আমাদের দেশের ছবি নেই। সেটা তো আর হল মালিকদের দায় নয়। তারা তো হল টিকিয়ে রাখতে নতুন ছবি চালানোর চেষ্টা করবেই।
যেহেতু নিজের দেশের ছবি নেই তাই বাধ্য হয়েই বিদেশি ছবি মুক্তি দেয়া হচ্ছে। দেখুন আমরা সবাই বলি দেশি ছবির কথা। কিন্তু দেখি ক’জনে। আসছে শুক্রবারে শোনা যাচ্ছে ‘আমি রাজা হবো’ নামে একটি দেশীয় ছবি মুক্তি পাবে। নাম শুনেছেন?
এই ছবির নাম আসলে কয়জনে শুনেছে? সেখানে শিল্পী কারা? ওই ছবিটা যদি হল মালিকরা নেয় তবে তার ফলটা কী হবে? হল বাঁচবে এভাবে লস গুনতে গুনতে? বাধ্য হয়েই কিন্তু ভালো ছবির জন্য আমদানিমুখো হতে হয়।
যখন আমরা দেশের ভালো ছবি পাই সেটাও কিন্তু বড় আয়োজন করে মুক্তি দেই। আমদানি করি ভালো ছবির ঘাটতি পূরণ করতে। এটাকে নেতিবাচকভাবে দেখার কিছু নেই বলেই মনে করি।’
‘বিসর্জন’ মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশে এই খবরে জয়া আহসানও খুব খুশি হয়েছেন। এমনটাই জানালেন নওশাদ। তিনি বলেন, এরইমধ্যে ছবিটি সেন্সরের অনুমতি পেয়েছে।
ছবিটি পরিবেশনার দায়িত্বে থাকছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। প্রতিষ্ঠানটির হয়ে মোহাম্মাদ শহীদুল্লাহ মিয়া (মাস্টার) বলেন, মধুমিতা, বলাকা, শ্যামলী, বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স, চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে মুক্তি পাবে ‘বিসর্জন’। হল সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
ভারতীয় নির্মাতা কৌশিক গাঙ্গুলি পরিচালিত সিনেমা ‘বিসর্জন’। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করে ইতিমধ্যে প্রথম বাংলাদেশি অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডও জিতেছেন জয়া আহসান। ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা আবির চ্যাটার্জি।
প্রসঙ্গত, সাফটা চুক্তির আওতায় ‘বিসর্জন’র পরিবর্তে বাংলাদেশ থেকে ওয়াকিল আহমেদ পরিচালিত ‘কতো স্বপ্ন কতো আশা’ চলচ্চিত্রটি কলকাতায় প্রদর্শিত হতে হবে বলে জানা গেছে।
এলএ/এমএস