যাত্রাশিল্পী শংকরীকে প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ লাখ টাকা অনুদান
কখনো রাঁধা, কখনো আনারকলি হয়ে মঞ্চ মাতিয়েছেন তিনি। একসময় তাকে এক পলক দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসতো মানুষ। আজ সেই নায়িকার দিন কাটে অভাব আর অনটনে।
এক প্রতিবন্ধী ভাইয়ের সংসারে বোঝা হয়ে দিন গুনেন জীবন অবসানের। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। চিকিৎসার টাকা যোগার করতে পারেন না। এর ওর দয়া দাক্ষিণ্যে সাময়িক চিকিৎসা চালান। তিনি কিংবদন্তি তুল্য যাত্রাশিল্পী শংকরী হাজারী।
অবশেষে এই শিল্পীর পাশে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার, ২ ডিসেম্বর শংকরীর হাতে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের চেক তুলে দেয়া হয়।
এ সময় অসুস্থ শংকরীর পাশে ছিলেন শিল্পী ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক ও নাট্য নির্মাতা জি এম সৈকত ও শংকরীর ছোট বোন ভগবতী হাজারী।
জি এম সৈকত জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'শংকরী হাজারী দীর্ঘদিন ধরে হার্ট, কিডনি ও কানের সমস্যায় ভুগছিলেন। সাতক্ষীরার এই গুণী শিল্পীর আর্থিক অবস্থা খুবই করুণ। তার সুচিকিৎসা জরুরি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাইছিলেন।
অবশেষে শিল্পী ঐক্যজোটের সভাপতি চিত্রনায়ক ডি.এ তায়েব স্যারের আন্তরিকতায় তার আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পোঁছানোর পর সাড়া পেলেন। রোববার তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুদান থেকে পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দেয়া হয়েছে। চেক হাতে পেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন তিনি। দেশবাসীর কাছে নিজের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন শংকরী হাজারী।'
১৯৬৯ সালে ভারত থেকে পরিবারের সাথে বাংলাদেশে আসেন শংকরী হাজারী। কিশোর বয়সে বাবা হরিপদ হাজারীর হাত ধরে জড়িয়ে পড়েন যাত্রাপালায়। যখন এ বাংলায় যাত্রার বড় বড় আসর জমতো তখন এক নামে চিনতো সবাই এ শংকরী হাজারীকে।
যাত্রাপালার নায়িকা শংকরী হাজারীকে এক পলক দেখার জন্য, তার অভিনয় দেখার জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ছুটতো যাত্রা পালার মঞ্চের দিকে। তার শৈল্পিক চলন-বলন ও পরিবেশনা দেখে অভিভূত হয়ে যেতেন শ্রোতা দর্শকরা।
বিরিঞ্চি চক্রবর্তীর রচনায় প্রথম যাত্রা পালার নাম ‘বর্ষান কুমারী’। নায়ক নায়িকা হলো কিশোর কৃষ্ণ আর কিশোরী রাধা। পরিচালক শংকরী হাজারীকে নায়িকা নির্বাচিত করলেন রাধিকার ভূমিকায়। শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকায় ছিলেন সাতক্ষীরার স্বনামধন্য নাট্য ও সংগীত শিল্পী শহিদুল ইসলাম। শুরু হলো শংকরীর যাত্রাজীবন।
এরপর আসে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। শংকরী হাজারী স্বপরিবারে চলে গেলেন ভারতে। দার্জিলিং, জলপাই গুড়ি, আসাম, ত্রিপুরা, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে একের পর এক যাত্রাপালায় অভিনয় করলেন। প্রশংসা কুড়ালেন। দেশ স্বাধীনের পর ফিরে এলেন স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে।
এরপর বাসন্তী অপেরা, রঞ্জন অপেরা, মিলন অপেরা, ২নং বাবুল অপেরা, জয়দূর্গা অপেরা, সবুজ অপেরা, নবারুন নাট্য সংস্থা,দিপালী অপেরা, বঙ্গশ্রী অপেরা, চলন্তিকা অপেরা, গীতাঞ্জলী অপেরায় নায়িকার অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন, পুরস্কৃত হয়েছেন।
শংকরী হাজারী বাংলাদেশ যাত্রা শিল্প উন্নয়ন পরিষদ এর সদস্য পদ পেয়েছেন ২০১০ সালে।
তার সমসাময়িক অনেকেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বীকৃতি পেলেও যাত্রাশিল্পে অবদানের জন্য শংকরীর ভাগ্যে এতদিন মিলেনি কিছুই।
এলএ/পিআর