মা-বাবার দোয়া নিয়ে নির্বাচনে নেমেছি : মনির খান
নানা অনিয়ম-অভিযোগ মাথায় নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অবৈধ প্রার্থী ঘোষিত হয়ে আলোচনায় এখন বিএনপি। তবে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী গায়ক মনির খান।
ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর) আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে লড়তে মনোনয়ন পেয়েছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মনির খান। নির্বাচনের সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। মা-বাবার দোয়া নিয়ে নেমেছেন নির্বাচনের মাঠে। এদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রার্থী হিসেবে বৈধতার সার্টিফিকেট পেয়ে সেই প্রস্তুতিতে এলো নতুন উদ্যম। এমনটাই জানালেন মনির খান।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমার মনোনয়নকে বৈধ ঘোষণা দিয়েছেন। আমি সবসময় সৎ থাকার চেষ্টা করেছি। প্রশ্নবিদ্ধ হয় এমন কোনো কিছু আমাকে প্রভাবিত করেনি কখনো।’
তিনি দলের মনোনয়ন নিয়ে বলেন, ‘গান আমার ধ্যান-জ্ঞান। গান করেই আজকের এই মনির খান হয়েছি। রাজনীতিটা করি নিজের ব্যক্তিগত ভালো লাগা ও আদর্শের জায়গা থেকে। বহুদিন ধরেই আমি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির সঙ্গে জড়িত।
সততা, দেশপ্রেম, বিবেক নিয়ে রাজনীতি করি আমি। দল আমাকে সেই মূল্যায়ণ থেকেই মনোনীত করেছে। আমি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দলের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতির অনেক বিষয় থাকে। যার কারণে আমার আসনে আরও দুজনকে বিএনপি থেকে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে আমার বিশ্বাস, আমিই এখানে চূড়ান্ত প্রার্থী হব। এলাকার মানুষ আমাকে চায়। ক্লিন ইমেজ নিয়ে মানুষের জন্য কিছু করতে এসেছি আমি। দল যার ওপর নির্ভর করতে পারবে তাকেই রাখবে। সে ভাবনায় আমি অনেক আশাবাদী নিজেকে নিয়ে।’
মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহ করার ছল আছে রাজনীতিতে। ঝিনাইদহ-৩ আসনে এমন কিছু ঘটবে কি-না জানতে চাইলে মনির খান জানান, ‘না, এখানে কোনো বিদ্রোহ হবে না। দল যাকেই প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করুক তাকেই মেনে নেয়ার মানসিকতা এখানে নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে। মনে কষ্ট থাকলেও জাতীয় স্বার্থে সেই কষ্টকে মেনে নিতে হবে। সবাই মিলেমিশে চূড়ান্ত প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য কাজ করতে হবে।’
মনির খান বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে নিজের এলাকাবাসীর পাশে রয়েছি আমি। নানা বিপদে আপদে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তাদের সঙ্গে সম্পর্কটাও অনেক গভীর। এলাকার তৃণমূল রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও আমার আপন লোক। সবাই আমাকে খুব ভালো জানেন ও চেনেন। তাই আমাকে তারা প্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চান।
আমিও কথা দিয়েছি নির্বাচিত হলে আমার প্রাণপ্রিয় এলাকাবাসীর উন্নয়নে নিয়োজিত থাকব। প্রস্তুতি নিয়েছি আমি। শিগগিরই শুরু হবে প্রচারণাও।’
প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সাল থেকে কালিগঞ্জ গুঞ্জন শিল্পীগোষ্ঠী একাডেমিতে যোগ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গানের সঙ্গে সম্পর্কের শুরু। ১৯৯৬ সালে বাজারে আসে ‘তোমার কোনো দোষ নেই’ শিরোনামের অ্যালবাম। সেখানে গানে গানে বিষাদ-বিরহের করুণ সুর ছড়িয়ে দিলেন এক অখ্যাত গায়ক। তার কণ্ঠে যেন প্রেমের বৃষ্টি নামলো বেদনার আকাশ কাঁপিয়ে। সেই বৃষ্টি ভাসিয়ে নিয়ে গেল প্রেম হারানো যুবক-যুবতীর অন্তর। বিরহের গানে শ্রোতাদের দারুণ আশ্রয় হয়ে উঠলেন মনির খান। রাতারাতি এলো জনপ্রিয়তা।
সেই তো শুরু। বাকিটুকু কেবলই ইতিহাস। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে ঋদ্ধ করেছেন সংগীতে, ছাড়িয়ে গিয়েছেন নিজেই নিজেকে। ক্যাসেট ব্যবসায়ের ইতিহাসে গায়ক আসিফ আকবরের পাশাপাশি সর্বোচ্চ চূড়ায় উচ্চারিত হয়েছে মনির খানের নাম; দীর্ঘদিন।
মূলত বিরহের গায়ক হিসেবে আলাদা খ্যাতি পেলেও শহর-গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের প্রেম, তারুণ্যের আশা জাগানিয়া আহ্বান, জীবনের নানা সংগ্রাম ও বোধ, প্রার্থনা, মা, বাবা, রাজনীতি নিয়েও গান করে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন মনির খান। চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায় তার বহু শ্রোতা নন্দিত গানের নাম। যেখানে ‘ভাড়া কইরা আনবি মানুষ’, ‘চিঠি লিখেছে বউ আমার’, ‘খ্রিষ্টান হইলে কফিনে’, ‘আমি ন্যাংটা ছিলাম’, ‘হায়াতউদ্দিন কাহার কদ্দিন’, ‘তুমি কার লাগিয়ে গাঁথো রে সখী’, ‘আট আনার জীবন’, ‘আমার সিঁথানে দুঃখ’ নামের গানগুলো উল্লেখ যোগ্য।
তবে মনির খান চমক দেখিয়েছেন ‘অঞ্জনা’কে নিয়ে। শিল্পী সব অ্যালবামেই গাইতেন অঞ্জনাকে নিয়ে গান। কল্পনার এই নায়িকা মনির খানকে দিয়েছে অন্যরকম জনপ্রিয়তা।
একটা সময় চলচ্চিত্রে এলেন। এখানেও গাইলেন সার্থকতা নিয়ে। ‘প্রেমের তাজমহল’ চলচ্চিত্রে গান করে পেলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। তারপর গেয়েছেন আরও অনেক জনপ্রিয় গান। গাইছেন এখনও।
সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন একটি নতুন অ্যালবামের। এর নাম ‘ঘুম নেই দুটি চোখে’। লিটন শিকদারের গীতিকবিতায় গানগুলোর সংগীতায়োজন করেছেন কলকাতার বিনোদ রয়। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো গানের সুর করেছেন তিনি। এই অ্যালবামের দশটি গানেই সুর মনির খানের।
এলএ/আরআইপি