সবাই গাইলেন আইয়ুব বাচ্চুর গান, স্টেজে কান্নার রোল
প্রয়াত রক কিংবদন্তী আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন (বামবা) আয়োজন করেছিল ‘ফেয়ারওয়েল ট্রিবিউট টু আইয়ুব বাচ্চু’। রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে হয়ে গেল এ আয়োজন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
‘ফেয়ারওয়েল ট্রিবিউট টু আইয়ুব বাচ্চু’ কনসার্টে আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয় গানগুলো গেয়েছন বামবার সদস্যরা। রোববার সন্ধ্যার আগে শুরু হয়েছিল কনসার্ট চলেছে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। অন্যরকম এক আবহাওয়া তৈরি হয় এই কনসার্টে। বাচ্চুর যে কোনো গানই অন্যরকম অর্থবহ হয়ে উঠছিল।
অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন মাকসুদ ঢাকা ব্যান্ডের মাকসুদুল হক। একে একে বিভিন্ন ব্যান্ডকে স্টেজে আমন্ত্রণ জানাচ্ছিলেন তিনি। নিজেও গেয়েছেন আইয়ুব বাচ্চুর ‘ময়না’ গানটি। ‘ময়না এখন আমার জন্য রাত্রি জাগে না, কবিতার লাইন চুরি করে চিঠি লেখে না, সেই ময়না এখন অন্য কারো, আমার কেউ না। বাচ্চুর দ্বিতীয় একক অ্যালবামের সেই জনপ্রিয় গানটি অনেক দিন পরেই সামনে আসে নতুন করে।
মাকসুদ জানালেন, এটি তার প্রিয় গানের একটি। এছাড়া শাফিন আহমেদ গেয়ে শোনান ‘আসলে কেউ সুখি নয়’ গানটি। সুমন ও মানাম আহমেদ গেয়েছেন ‘একদিন ঘুম ভাঙা শহরে’। বাপ্পা মজুমদারের কণ্ঠে শ্রোতারা শুনেছে ‘রূপালী গিটার’, আর্বোভাইরাস ব্যান্ড গেয়েছে ‘হাসতে দেখ গাইতে দেখ’, শূন্য ব্যান্ড শুনিয়েছে ‘বাংলাদেশ’ গানটি। রাসেল নাগরিক এর কণ্ঠে উঠে এসেছে ‘দিশেহারা এ হৃদয়’।
সব শেষে স্টেজে আসে এলআরবি। আইয়ুব বাচ্চুর স্বপ্নের ব্যান্ড এলআরবির সঙ্গে স্টেজে হাজির হয় বামবার সকল সদ্যস্যরা। সবাই একসঙ্গে গায়, সেই তুমি কেনো এতো অচেনা হলে। ‘চল বদলে যায়’ গানটি গাইতে গাইতে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। অনুষ্ঠানের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়ে যায়। প্রিয় মানুষকে হারানোর আকুতি বুকে নিয়েই শেষ হয় কনসার্ট।
প্রসঙ্গত ‘১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন এলআরবি ব্যান্ডের জনপ্রিয় ভোকাল আইয়ুব বাচ্চু। ৫৬ বছর তিনি বেঁচে ছিলেন। সংগীত জীবনের দীর্ঘ চার দশকে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান তিনি উপহার দিয়েছেন। ১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে সংগীতজগতে প্রবেশ করেন আইয়ুব বাচ্চু। তার কণ্ঠ দেওয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’। গানটির কথা লিখেছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী।
এরপর ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে তিনি সোলস ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ‘রক্তগোলাপ’ আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। এ অ্যালবামটি তেমন একটা সাফল্য পায়নি। আইয়ুব বাচ্চুর সফলতা পান তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ (১৯৮৮) দিয়ে।
১৯৯১ সালে বাচ্চু এলআরবি ব্যান্ড গঠন করেন। এ ব্যান্ডের সাথে তার প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম ‘এলআরবি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরে ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ এবং ‘তবুও’ প্রকাশিত হয়।
এমএবি/আরএস