‘কেউ তেল চায়, কেউ সেক্স করতে চায়’
কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। সাহসী চরিত্র ও দৃশ্যে সাবলীল অভিনয় দিয়ে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ব্যক্তিত্ববান। গ্ল্যামার আছে, সেটাকে স্বস্তা করে তুলেননি। ঠোঁটকাটা স্বভাবে দুর্নাম আছে তার। কিন্তু সম্মানেরও খামতি নেই।
ওপারের মতো বাংলাদেশেও জনপ্রিয় শ্রীলেখা। এপারের দর্শকের সঙ্গে তার পরিচয়টা ঘটে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ সিনেমায় ফেরদৌসের দ্বিতীয় নায়িকা হিসেবে। সেখানে গ্ল্যামার ও প্রেমের হিংসা দুইটাই ছড়িয়েছিলেন তিনি সফলভাবে।
সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেছেন সাম্প্রতিক কিছু ইস্যু নিয়ে। সেখানে উঠে এসেছে হ্যাশট্যাগ মিটু আন্দোলনের বিষয়টিও।
শ্রীলেখা লিখেছেন, ‘হ্যাশ ট্যাগ মিটু দেশ জুড়ে প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। সৃষ্টি করেছিলই শুধু বলব না। আংশিক ভাবে সেটা কার্যকরীও হয়েছিল। প্রভাব ফেলেছিল বা ফেলেছে বৈকি। তবে এখন এই লেখাটা বিতর্কের খাতিরে লেখা নয় বলে আমি মনে করছি। হ্যাঁ লেখা শুরু করার আগেই। ওই খানিক স্ট্যাটুটরি ওয়ার্নিংয়ের মতো বিষয়টা। পিএস: দায় এড়াবার ভয়ে ভাববেন না যেন। আর ভাবলেই কোটিং অনীক দত্ত, ‘আমার কিছু যায় আসে না।’
শ্রীলেখা আরও লেখেন, ‘প্রথম সন্তান মেয়ে হলে অনেককেই বলতে শুনেছি, ঘরে লক্ষ্মী এল। সেই কারণেই কিনা জানি না, বাড়িতে সবারই আদরে বেড়ে ওঠা আমি বরাবরই গোঁয়ার এবং জেদি। পেট্রিয়ার্কির ফলআউটের শিকার খুব বেশি হতে হয়নি সেকালে। আর তখন পেট্রিয়ার্কি কী, খায় না মাথায় দেয় সেই বিষয়ে ভাববার মতো বা বোঝার মতো বোধবুদ্ধিও তৈরি হয়নি।
তবে হ্যাঁ, মাকে দেখেছি চিরকাল বাবাকে এবং পরবর্তীকালে আমাদের সবাইকে খানিকটা
ভয় করে চলতেন। সরি মা। ভেরি সরি। বাবা আসছে টিভি বন্ধ কর। কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরো। আড্ডা মারতে যেও না। বাবা ফিরে এসে কিন্তু খুব অশান্তি করবে।
বাড়িতে ছেলে বন্ধু আবার কেন? বিশেষ দ্রষ্টব্য, তারা কিন্তু কেউ বয়ফ্রেন্ড নয়। এরকম টুকটাক চলতেই থাকত। বাবাকে ভয় পেতাম। মাকে নয় কেন?
টিনএজ হরমোন যখন ধিতাং ধিতাং বলে শরীরে নাচতে শুরু করল, তখন থেকেই লাগল বিরোধ। সব কিছুর সঙ্গে জড়িত হল একটি বিশেষ শব্দ। কেন? ভাগ্যিস। ইয়েস আই ডু হ্যাভ আ মাইন্ড অফ মাই ওন। অ্যান্ড ইটস ইন ওয়ার্কিং কন্ডিশন। ট্রাস্ট মি। এই অ্যাটিটিউড আর প্যাশন ফর দ্য আর্ট নিয়ে আমি যুদ্ধে নামলাম অনাত্মীয় এই ইন্ডাস্ট্রিতে। গড ফাদার নয়, শুধু নিজের ফাদারকে সঙ্গে নিয়ে আউটডোর শুটে গিয়ে অভিনয় যাত্রা শুরু।’
ইন্ডাস্ট্রিতে এসে তাকেও মিটু আন্দোলনের শিকার হতে হয়েছিলো কী না সেই প্রসঙ্গে শ্রীলেখা বলেন, ‘না! কোনো তিমি মাছ, হাঙর গিলতে আসেনি আমায়। শুধু কিছু চারাপোনা একটু আধটু জ্বালিয়েছিল বইকি। কিন্তু আমি চারাপোনা খাই না বলে, আমায় তারা জ্বালায়নি। হ্যাঁ, খুব বেশি হলে তাদের ছবিতে আমায় নেয়নি। কিন্তু তাতে আমার আবার অনীকদার ভাষায়, কিস্যু যায় আসে না।’
নিজের ছবির সংখ্যা কেন কম সেই প্রসঙ্গে শ্রীলেখা লিখেছেন, ‘জনৈক প্রোডিউসার বাবাকে ডেকে এক পার্টিতে বলেছিলেন, মিত্র সাহেব আপনার মেয়েকে হয়ত বিশেষ কারণে আমার ছবিতে কখনওই নেব না। তবে ওকে আমি খুব রেসপেক্ট করি। উত্তরে বাবা স্মিত হেসে তাঁর হাত ধরে বলেছিলেন, “বাবা হয়ে এটা আমার দারুণ প্রাপ্তি। থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।” বিশেষ কারণটা সবিস্তারে বলতে হবে? জানি, আপনারা বুদ্ধিমান।
ফলপ্রসূ আমার বরাবরই ছবি কম। প্রচার কম। কাগজে বড় বড় ছবি ছাপা হয় কম। তাতে আবারও, কিস্যু যায় আসে না। আসলে গোটা বিষয়টা আমার কাছে পাওয়ার ইকুয়েশন। যার যত ক্ষমতা, ক্ষমতা টাকার হোক বা কাজ দেওয়ার হোক, তার তত গর্জন।
তোষামোদপ্রিয় মানুষ সর্বক্ষেত্রেই বিরাজমান। তাদের কেউ তেল চায়, কেউ সেক্স করতে চায়। কেউ বা দুটোই। যারা দেন, তাঁরা দেন। ভাল করেই দেন। যাঁরা দেন না, তাঁদের আমার মতো, কিস্যু যায় আসে না।’
এলএ/পিআর