নাগরিক টিভিতে দুই বাংলার তারকাদের লড়াই
নাচ শুরু হয়েছে। হঠাৎ করেই ঢাকার টিভি নাটকের জনপ্রিয় মুখ সাফা কবির নাচ বন্ধ করে দিলেন। বললেন, ‘প্রপসটা আজই পেয়েছি, তাই বিট মিস হয়ে গেছে। আবার শুরু করতে চাই।’ বিচারকরা অনুমতি দিলেন না। সাফা একসময় আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। দুচোখ বেয়ে পানি ঝরেছে তার। লড়াইয়ে এমনি করেই তিনি অংশ নিয়েছেন। বিচারকরা কি তাকে আবার সুযোগ দিয়েছিলেন?
অন্যদিকে অনুষ্ঠানের থিম ছিল মা। মাকে নিয়ে নৃত্য পরিবেশন করতে গিয়ে ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘অগ্নিজল’ এর কলাবতি চরিত্রের নায়িকা সোহিনী স্যানাল আবেগকে ধরে রাখতে পারলেন না। অঝোরে কাঁদলেন এবং কাঁদালেন। বললেন, ‘আমার মা খুবই অসুস্থ। তাকে বাড়ি রেখে এসেছি। জানি না, বাড়ি ফেরার পর কলিং বেলটা বাজালে মা দরজাটা খুলবে কি না? মা ছাড়া আমার কেউ নেই।’ সোহিনী কেঁদেই চলেছেন। সান্ত্বনা দেবে কে? সোহিনীর মা কি বেঁচে ছিলেন?
ওপরের ঘটনাগুলো কোনো গল্প নয়। নাচের লড়াইয়ের রিয়েলিটি শো ‘বাজলো ঝুমুর তারা নূপুর’- এর শুটিং স্পটে ঘটে যাওয়া অনেকগুলোর ঘটনার দুটি ঘটনা মাত্র। এমনি আরো চমকানো গল্প দেখা যাবে দুই বাংলার তারকাদের নাচের লড়াইয়ের এ অনুষ্ঠানে।
অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল এই অনুষ্ঠানটির কথা। ঘটা করে তৈরি হয়েছে অনুষ্ঠানটি। দুই বাংলার দর্শক তো বটেই, তারকারাও ছিলেন এর প্রচারের অপেক্ষায়। অবশেষে সেই অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে! আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে নাগরিক টিভিতে শুরু হচ্ছে দুই বাংলার তারকাদের নাচের লড়াই ‘বাজলো ঝুমুর তারার নূপুর’।
নাচের এই প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানটি সপ্তাহের প্রতি সোম, মঙ্গল, বুধ এবং বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় প্রচার হবে।
বাংলাদেশ এবং কলকাতার টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র শিল্পীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে ও উভয় বাংলার সংস্কৃতির ঐতিহ্যের ধারা দুই বাংলার টেলিভিশন দর্শকদের মাঝে তুলে ধরার জন্যই ‘বাজলো ঝুমুর তারার নূপুর’। দুই দেশের শিল্পীদের অংশগ্রহণে নাচের এমন ধরনের অনুষ্ঠান এর আগে হয়নি। নাগরিক টিভিই প্রথম দুই দেশের শিল্পীদের নিয়ে কোনো নাচের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান করার উদ্যোগ নিল। যার পৃষ্ঠপোষকতায় যুক্ত ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। পাওয়ার্ড বাই সোহানা ইলেকট্রনিক্স। এই আয়োজনে সহযোগিতায় আছে মমতাজ হারবাল লিমিটেড।
‘বাজলো ঝুমুর তারার নূপুর’-এর মূল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে অংশগ্রহণ করেছেন ছয়জন করে মোট ১২ জন তারকা।
বাংলাদেশ থেকে যোগ দিয়েছেন টিভি অভিনেত্রী ইশানা, ভাবনা, জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া, স্পর্শিয়া, অমৃতা এবং সাফা কবির। আর কলকাতা থেকে রিমঝিম, সোহিনী, এনা সাহা, লাভলী, তিথি ও প্রীতি।
এই রিয়েলিটি শোয়ে আরও প্রতিযোগিতা করেছেন বাংলাদেশ থেকে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি, টিভি অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভা এবং জাকিয়া বারী মম। আর কলকাতা থেকে অংশ নিয়েছেন জি বাংলার রাশি সিরিয়ালের রাশি চরিত্রের অভিনেত্রী গীতশ্রী, চিত্রনায়কা পায়েল এবং ছোট ঋতুপর্ণা।
প্রতিটি পর্বে প্রধান বিচারক হিসেবে আছেন বাংলাদেশের ইলিয়াস কাঞ্চন এবং কলকাতার এক সময়ের সাড়া জাগানো নায়িকা ও বর্তমান ভারতীয় লোকসভার সংসদ সদস্য শতাব্দী রায়।
বিভিন্ন পর্বে বাংলাদেশ থেকে অতিথি বিচারক হিসেবে যুক্ত থাকবেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী, চিত্রনায়ক ফেরদৗস, সংগীতশিল্পী আঁখি আলমগীর, অভিনেতা তৌকীর আহমেদ এবং সজল। অপরদিকে কলকাতা থেকে সংগীতশিল্পী জোজো, অনিন্ধ, শ্রীলেখা মিত্র এবং নৃত্যবিশারদ তনুশ্রী শংকর।
অতিথিরা বিচারকার্যের পাশাপাশি তারকাদের সঙ্গে পারফরমেন্সেও অংশ নিয়েছেন। ‘বাজলো ঝুমুর তারার নূপুর’-এর প্রতিটি পর্ব যৌথভাবে উপস্থাপনা করেছেন কলকাতার সৌরভ এবং বাংলাদেশের মাসুমা রহমান নাবিলা। মোট ৭২টি এপিসোডে এই অনুষ্ঠান ধারণ করা হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে নাগরিক টিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান বলেন, ‘প্রায় তিন বছর ধরে অনুষ্ঠানটি নিয়ে নানা রকম গবেষণা ও যোগাযোগের কাজ করা হয়েছে। তারকা শিল্পীদের প্রতিযোগি হিসেবে পাওয়াটা ছিল খুবই চ্যালেঞ্জের একটি কাজ। আর দুই বাংলার তারকাদের লড়াইতে অংশ নেয়ার মাধ্যম ছিল নাচ। যা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ ছিল। কেননা, প্রত্যেক শিল্পীকেই এই নাচের জন্য দীর্ঘসময় ধরে নাচের মহড়ায় অংশ নিতে হয়েছে। কোনো কোনো দিন শিল্পীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা কাজ করেছেন। কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমেই শিল্পীরা তাদের নৈপুণ্য বিচারকদের কাছে তুলে ধরেছেন। কখনো কখনো এমনও হয়েছে যে, কেউ কেউ নাচ ভুলে গেছেন, তারা আবার সুযোগ চেয়েছেন, কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান হওয়ার কারণে দ্বিতীয়বার আর কাউকে এই সুযোগ দেয়া হয়নি।'
তিনি জানান, এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রকমের নাচের প্রদর্শন রয়েছে। ভরতনাট্যম, মনিপুর, ছৌ, কথ্থক থেকে শুরু করে হিপহপ, মর্ডান সব ধরনের নাচ প্রদর্শন করা হবে।
এলএ/বিএ