যে কারণে বাংলাদেশের সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ালো এসকে মুভিজ
যৌথ প্রযোজনা ও সাফটা চুক্তির নিয়ম নীতিতে অনেক ভিন্নতা এসেছে এরই মধ্যে। যৌথ প্রযোজনায় বেড়েছে নিয়মের শাসন। আবার সাফটায় বিদেশি কোনো সিনেমা বাংলাদেশের হলে মুক্তি দিতে চাইলে বেশ কিছু ধাপ পার হতে হয়। যা অনেক সময়সাপেক্ষ ও ব্যায়বহুল। সিনেমা নির্মাণে ‘অনিয়মের রাজা’ বলে পরিচিত কলকাতার সিনেমা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে মুভিজ এইসব ঝক্কি ঝামেলায় খাপ খাওয়াতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ থেকে ব্যাবসা গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় আর কোনো সিনেমা নির্মাণ করবে না প্রতিষ্ঠানটি। পাশপাশি সাফটা চুক্তিতেও আগ্রহ নেই আর। আগ্রহ নেই বাংলাদেশি তারকাদের নিয়ে সিনেমা নির্মাণেও। অনেকটা বিরক্ত হয়েই এসকে মুভিজের কার্যক্রম বাংলাদেশ থেকে বন্ধ করে দিতে যাচ্ছেন এসকে মুভিজের মালিক অশোক ধানুকা।
তবে ঢাকায় সিনেমা ব্যবসা বন্ধ করার আগে প্রতিষ্ঠানটি দায় দিয়ে গেল কেবল ঢালিউডের সেরা নায়ক শাকিব খানকে। পারিশ্রমিক বাড়িয়ে নেয়ার জন্য শাকিবের উপর বিরক্ত হয়েই প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে বলে প্রচার হয়েছে। শোনা যাচ্ছে এসকে মুভিজের প্রযোজনায় আগামীতে কলকাতার লোকাল প্রোডাকশনের ছবিতেও থাকবেন না বাংলাদেশের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান।
এসকে মুভিজের দাবি, শাকিব খানকে নিয়ে নতুন একটি ছবি নির্মাণ করতে চাইছিলো তারা। কিন্তু শাকিব খান পারিশ্রমিক হাঁকিয়ে বসেন ৬০ লাখ। যা রাীতিমত ভড়কে দিয়েছে এসকে মুভিজকে। এই পারিশ্রমিক শুনেই নাকি তারা শাকিব খানকে নিয়ে ছবি করার আগ্রহ হারিয়েছে। আর শাকিব খানকে এড়িয়ে অন্য কোনো নায়কের উপর ভরসাও নেই তাদের। তাই বাধ্য হয়ে এপারে লগ্নি বন্ধ করতে যাচ্ছে।
তবে চলচ্চিত্রপাড়ায় এই অজুহাত বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। চলচ্চিত্রের মানুষেরা বলছেন, শাকিব খান এসকে’র কাছে সোনার ডিম পাড়া মুরগি। প্রতিষ্ঠানটি নিজের ঘর কলকাতাতেও সিনেমা হিট করাতে পারছে না। ডাকসাইটে সব নায়ক-নায়িকার ছবি একের পর এক ফ্লপ। সেখানে শাকিব খান গেল কয়েক বছরে এসকে মুভিজের ঘরে কিছু মুনাফা তুলে দিতে পেরেছেন। এমন লক্ষী নায়ককে কে পায়ে ঠেলবে কেবলমাত্র পারিশ্রমিকের অজুহাতে!
মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে যৌথ প্রযোজনা ও সাফটা চুক্তিতে অবাধ স্বাধীনতা না পাওয়ার হতাশা। এসকে মুভিজের কর্ণধার অশোক ধানুকার বক্তব্যেও সেই আভাসই মিললো। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ছবি মুক্তি দিতে অনেক বাধা আসে। যৌথ প্রযোজনায় নতুন নীতিমালা হয়েছে। ওই নীতিমালা মেনে ছবি নির্মাণ সম্ভব না। যৌথ প্রযোজনায় বাংলাদেশে যত ছবি হিট করেছে সবগুলোতে আমার লস হয়েছে। মানুষের মুখে মুখে শুধু ছবি হিট হয়েছে। সব ছবির মধ্যে ‘ভাইজান এলো রে’ এক্সট্রা-অর্ডিনারি ছিল। কিন্তু আমি উল্লেখ করার মতো মুনাফা পাইনি। তো এভাবে উলুবনে মুক্তা আর কত ছড়াবো। আমি এখানকার মানুষদের নানা আশ্বাস শুনে শুনে ক্লান্ত।’
বাংলাদেশে সিনেমা ব্যবসায়ের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকাতে অফিসও নিয়েছিলেন অশোক ধানুকা। এদেশে জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’, ‘অগ্নি’, ‘শিকারি’, ‘নবাব’, ‘চালবাজ’, ‘ভাইজান এলো রে’র মতো ছবি নির্মাণ করেছে এসকে মুভিজ।
তবে ব্যাবসা গুটিয়ে নিলেও এসকে মুভিজ ইন্টারন্যাশনাল এর ইস্কাটনের অফিস থাকছে। অশোক ধানুকার ভাষ্যে, ‘অনেক প্রত্যাশা নিয়েই তো অফিসটি করেছিলাম। আপাতত থাকুক। পাঁচটা বছর যাক। দেখা যাক এখানকার সিনেমার কী অবস্থা দাঁড়ায়। তারপর ভেবে দেখবো কি করা যায়!’
তবে অনেকে মনে করছেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার নাম সাম্প্রতিক অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত হওয়ার পর থেকেই হতাশ হয়েছে এসকে মুভিজ। যার উপর ভরসা করে এই দেশে ব্যবসা করতে এসেছিলো প্রতিষ্ঠানটি সেই জাজের মালিক আব্দুল আজিজ এখন জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি কাণ্ডে জড়িত থাকার জন্য সমালোচিত। এরই মধ্যে আব্দুল আজিজের সম্পত্তি নিলামে তোলারও ঘোষণা দিয়েছে জনতা ব্যাংক। এমতাবস্থায় সিনেমা ব্যবসায়ে জাজের বন্ধু বা সহকারী সব প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টরাই বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন।
জাজ মাল্টিমিডিয়া দীর্ঘদিন ধরে সফল ও আলোচিত প্রযোজনা দিয়ে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে একটি মজবুত বলয় তৈরি করে নিয়েছিলো। সেই বলয় থেকেই সরাসরি ঘোষণা দিয়ে সরে দাঁড়ালো এসকে মুভিজ। তবে শুরু থেকেই নানা অনিয়মে যৌথ প্রযোজনা ও সফাটায় সিনেমা বিনিময়ের সঙ্গে জড়িত থাকা বিদেশি প্রতিষ্ঠানটির এদেশ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই।
এমএবি/এলএ/পিআর