৮০ শিল্পীর গানে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে ৭৭তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘গানে গানে রবীন্দ্র-স্মরণ অনুষ্ঠান’। গতকাল শুক্রবার থেকে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ‘অহংকার চূর্ণ করো/ প্রেমে মন পূর্ণ করো’ স্লোগান ধারণ করে শুরু হয়েছে এই আয়োজন। রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে এই অনুষ্ঠান শেষ হবে আজ শনিবার।
শুক্রবার অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সংস্থার শিল্পীদের কণ্ঠে ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা’ ও ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ পরপর দুটি কোরাসের মধ্য দিয়ে। এরপর শুরু হয় একক সংগীত পরিবেশনের পালা।
দুই দিনের এই অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’ থেকে নির্বাচিত পূজা, প্রেম, প্রকৃতি, স্বদেশ ও বিচিত্র পর্যায়ের শতাধিক গান দিয়ে। সংস্থার ৮০ জন শিল্পীর পাশাপাশি আমন্ত্রিত শিল্পীরাও এই অনুষ্ঠানে একক ও দ্বৈত পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছেন।
স্মরণ অনুষ্ঠানের প্রথম দিন রবীন্দ্রনাথের গান পরিবেশ করেন ৪০ জন শিল্পী। একক পরিবেশনা পর্বের শুরুতেই আসিফুল বারী গেয়ে শোনান ‘চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে’, অনিন্দিতা রায় গাইলেন ‘চির বন্ধু চির নির্ভর, চির শান্তি’, সেমন্তী মঞ্জরি ‘চির সখা, ছেড়ো না মোরে ছেড়ো না’, লিটন চন্দ্র বৈদ্য ‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে’। আজিজুর রহমান পরিবেশন করেন ‘খেলার সাথি বিদায় দ্বার খোলো’, আবদুল ওয়াদুদ গেয়ে শোনান ‘শেষ বেলাকার শেষের গানে’, আবদুর রশিদের শোনা গেলো ‘দেখা না দেখায় মেশা হে’, জয়ন্ত আচার্য ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার’, প্রমোদ দত্ত ‘ভুবনেশ্বর হে’, মামুন জাহিদ খান ‘তোমায় নতুন ক’রে পাবো বলে’, অনুশ্রী ভট্টাচার্য ‘তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে’, বুলা মাহমুদ ‘আজ তোমারে দেখতে এলেম’, ছায়া কর্মকার ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন’, সত্য চক্রবর্তী ‘ওগো শেফালী বনের মনের কামনা’, অনুপম কুমার পাল ‘যদি বারণ কর তবে গাহিব না’, মকবুল হোসেইন ‘আমার যে দিন ভেসে গেছে’, মৃদুল চক্রবর্তী ‘আমার প্রিয়ার ছায়া আকাশে আজ’, কাজল মুখোপাধ্যায় ‘কিছু বলবো ব’লে এসেছিলেম’, তমাল চক্রবর্তী ‘অন্ধকারের উৎস হতে’, দীপা চৌধূরী ‘ভুবন জোড়া আসনখানি’, নুসরাত জাহান সাথী ‘স্বপ্নে আমার মনে হল’, প্রান্তিকা সরকার ‘আমি তখন ছিলেম মগন গহন’, রাবেয়া আক্তার ‘আমার দিন ফুরালো’, রাইয়ান খালিদ স্যান্ড্রা ‘মধুর তোমার শেষ যে না পাই’, রিফাত জামাল মিতু ‘ওই মালতী লতা দোলে’, সর্ব্বানী চক্রবর্তী ‘শ্রাবণের ধারার মত পড়ুক ঝরে’, শর্মিলা চক্রবর্তী পরিবেশন করেন ‘শেষ গানেরই রেশ নিয়ে যাও চলে’, সুস্মিতা মণ্ডল ‘আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে দুয়ার কাঁপে’, সুমাইয়া ফারাহ খান ‘কোথা যে উধাও হোলো’, তনুশ্রী দীপক ‘অশ্রু নদীর সুদূর পারে’, আশিকুর রহমান ‘যেতে যেতে একলা পথে’, তানজিনা তমা ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’, নাসরিন আক্তার পরিবেশন করেন ‘আজি শ্রাবণ ঘন গহন মোহে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পীযূষ বড়ুয়া।
গান শুরুর আগে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বক্তারা। রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদ বলেন, ‘মহাপ্রস্থানের ৭৭ বছর পরও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনির্বাণ শিখার মতোই জ্বলছেন বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে। বাঙালি প্রতিদিনই তাকে স্মরণ করে গভীর শ্রদ্ধায়। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নায় পথ খুঁজতে হয় তারই স্ফুলিঙ্গ ধরে। তাই তার প্রয়াণ দিবসে যতই ব্যথা থাক, জেগে ওঠে পুষ্পধ্বনি।’
আজ শনিবার সমাপনী দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা ছয়টায়। এদিনও একই মঞ্চে গান পরিবেশন করবেন দেশের প্রবীণ-নবীন শিল্পীরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন তপন মাহমুদ, সাজেদ আকবর, অদিতি মহসিন, বিষ্ণু মণ্ডল, গোলাম হায়দার, পীযূষ বড়ুয়া, মহাদেব ঘোষ, শাফিকুর রহমান খান, খোকন চন্দ্র দাস, খন্দকার আবুল কালাম, মাখন হাওলাদার, আহমেদ জিয়াউর রহমান, টিপু চৌধুরী, তপন কুমার সরকার, নির্ঝর চৌধুরী, অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত, খন্দকার খাইরুজ্জামান কাইয়ুম, অভিক দেব, ফেরদৌসী কাকলী, কাকলী গোস্বামী, কনক খান, মিতা দে, রাবিতা সাবাহ, রমা বাড়ৈ, রুমঝুম বিজয়া রিসিল, সীমা সরকার, শিল্পী রায়, শিমু দে, সুমাইয়া ইমাম ইমা, সাঈদা হোসেইন পাপড়ি, আঁখি হালদার, অপর্ণা খান, বনানী দত্ত, ফাহমিদা হোসেইন, অনিকেত আচার্য্য, আশরাফ মাহমুদ প্রমুখ।
এলএ/আরআইপি