কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে যা বললেন অভিনেতা ফারুক
চলচ্চিত্রের নায়ক তিনি। তার সময়টাতে অভিনয় দিয়ে কাঁপিয়েছেন সারা দেশের সিনেমা পাগলদের হৃদয়। পাশাপাশি একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠের মানুষ হিসেবেও তিনি চলচ্চিত্রপাড়ায় সম্মানিত। ইন্ডাস্ট্রির ক্রান্তিলগ্ন যখনই থাবা মারতে চেয়েছে তিনি বজ্রকণ্ঠে তাকে প্রতিহত করতে রুখে দাঁড়িয়েছেন।
কই পান এত সাহস? এমন প্রশ্ন কোনো সাংবাদিকের করতে হয়নি অভিনেতা ফারুককে। আলাপে আলাপে নিজেই বহুবার বলেছেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আদর পাওয়া লোক, আমি অস্ত্র হাতে দেশ স্বাধীন করা লোক। আমার ভয়ের কিছু, ভয় পাওয়ার মতো কেউ নেই।’
সেই নায়ক ফারুক এবার মুখ খুললেন চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে। বুধবার বিকেলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাচ্চারা যে আন্দোলন করছে তা যৌক্তিক। প্রথম কথা হলো সারা দেশের এত এত ছাত্র একটা অযেক্তিক আন্দোলনে এক হতে পারতো না। আর কৌশলে এক করা গেলেও সেটি টিকতো না। কিন্তু কোনো ভাংচুর, জ্বালাও পোড়াও ছাড়াই আন্দোলন চালিয়ে যেতে পেরেছে তারা। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি সরকারের উচিত তাদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলা। আমরা চিরদিন থাকবো না। এরাই আগামীর নেতৃত্ব দেবে।’
অভিনেতা ফারুক বলেন, ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধায় ভরে গেছে দেশটা। এখন যারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে কোটার সহযোগিতা নিচ্ছেন, তাদের কতজন সঠিক মুক্তিযোদ্ধা? সরকার সেগুলো খতিয়ে দেখে বা খতিয়ে দেখতে পারে? আমার মনে হয় সঠিক মুক্তিযোদ্ধার ৩৫ শতাংশও কোনো ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন না। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা যদি কোটা ব্যবহার করে সব চাকরি সুবিধা নিয়ে নেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কী করবে? আন্দোলন তো হবেই। আমাদের এদেরকে যৌক্তিকভাবেই থামাতে হবে। সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল তালিকা করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কষ্ট হয় যে আন্দোলনের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম জড়ানো। এই দিন মনে হয় না কোনো মুক্তিযোদ্ধা দেখতে চেয়েছিলেন। এটা মুক্তিযোদ্ধা কোটার অপব্যবহারের ফলেই হয়েছে বলে আমি মনে করি। সত্যটা হলো আমরা শান্তিতে দেশের মানুষ মিলেমিশে বাস করবো বলেই মরনকে বন্ধুর মতো বুকে নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম। হিন্দু-মুসলিম বলে কিছু ছিলো না। আমরা সবাই ছিলাম বাংলাদেশি, জয় বাংলার লোক। সেই দেশে কেন মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কথা উঠবে? তার মানে আমরা সঠিকভাবে এগুতে পারিনি।’
আন্দোলনকারীদের প্রতি ফারুক বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের মনে রাখতে হবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যেন মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান না হয়। আজকের যা কিছু সব কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করেই পওয়া। যৌক্তিক দাবি নিয়ে দেশ ও দেশের সূর্য সন্তানদের প্রতি সম্মান রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আন্দোলনকারীদের কাছে অনুরোধ করবো যেভাবে রাস্তাঘাট বন্ধ করে রাজধানী ও দেশের মানুষদের ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে এটা না করতে। সবাই যে কোনো একটা জায়গায় জড়ো হয়ে মানববন্ধন করতে পারে। অন্যকে ভোগান্তিতে ফেলে নিজের জন্য ভালো কিছু অর্জন করা যায় না।’
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফারুক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুদৃষ্টি দিলেই এই আন্দোলন ছেড়ে ছেলেমেয়েরা পড়তে বসে যাবে। এইসব ছেলেমেয়েরা সহজ সরল। নিজেদের ভবিষ্যত জীবনের নিরাপত্তার জন্য রাস্তায় নেমেছে। আমি শুনেছি তিনি এরই মধ্যে আশ্বাস দিয়েছেন সব কোটা বাতিলের। হয়তো আজকেই সুষ্পষ্ট ঘোষণা আসবে।’
এলএ/পিআর