শোবিজের অনুষ্ঠানগুলোতে বাড়ছে ইউটিউবার বিড়ম্বনা
এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ডিজিটাল স্লোগান তুলে বদলে যাচ্ছে জীবনযাত্রা, আবেগ আর অনুভূতি। তথ্য প্রযুক্তির চরম উন্নতির এই যুগে আমূল পরিবর্তন এসেছে মানুষের বিনোদনের মাধ্যমেও। সেই পরিবর্তনে নতুন সংযুক্তি ইউটিউব, ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।
দিন দিন বেড়েই চলেছে এইসব মাধ্যমের জনপ্রিয়তা। চোখের পলকেই মিলছে বিনোদনের বর্ণিল আয়োজন। গান, নাটক, সিনেমার বিশাল এক ভান্ডার ইউটিউবে। আর নানা রকমের মজাদার ভিডিও তো রয়েইছে। পাশাপাশি আজকাল ফেসবুকে দিনের অর্ধেকেরও বেশি সময় কেটে যাচ্ছে ফেসবুকে বুঁদ হয়ে থেকে। ফেসবুকের লাইভ দিয়েছে বিনোদনের নতুন মাত্র।
সবকিছুরই যেমন ভালোর পাশাপাশি মন্দ থাকে, তেমনি এইসব মাধ্যমগুলোও সমাজে নানারকমভাবেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এখানে অর্থ উপার্জনের উপায়টি বেশ সহজ, ফলে বানের পানির মতো এখানে বাড়ছে পেশাদারীত্ব। ইউটিউবের মতো ফেসবুকে লাইভে টাকা আয় করার সুযোগ এখনো যুক্ত না হলেও এটা অনেকের কাছেই নেশার মতো। তাই ঘরে-বাইরে-ক্যাম্পাসে-অফিসে সর্বত্রই দেখা যায় হাতে হাতে মোবাইল ক্যামেরা ওপেন করে ভিডিও করার ব্যস্ততা। উদ্দেশ্য ইউটিউবে আপলোড করে ভিউ বাড়িয়ে টাকা কামানো। ফেসবুক লাইভে গিয়ে নিজের ফ্যান-ফলোয়ার বাড়ানোর চেষ্টা। অপচেষ্টা বললেও ভুল হবে না।
কারণ এইসব মাধ্যমে পেশাদারীত্ব বা জনপ্রিয়তার সুযোগ থাকলেও এই দেশে নেই উপযুক্ত ট্রেনিং, নির্দেশনা। যার ফলে যার যেমন ইচ্ছে, যেখানে ইচ্ছে, যা ইচ্ছে তাই ভিডিও করে বেড়াচ্ছেন। যেখানে খুশি সেখানে বসেই লাইভে চলে যাচ্ছেন। আশপাশের মানুষগুলো তাতে কেমন বোধ করছেন সেই ভাবনা নেই কারো। ইউটিউবে যা আপলোড হচ্ছে সেটাই বা সমাজ বা বিনোদনের জন্য কতোটা সিদ্ধ তাও ভাবছেন না অনেকে।
কিন্তু সাম্প্রতিকালে ইউটিউবাররা বিড়ম্বনার তৈরি করে বেড়াচ্ছেন শোবিজে। নাটক-সিনেমা বা যে কোনো বিষয়ের অনুষ্ঠানে তারকা উপস্থিতি থাকলেই দেখা যাচ্ছে হাতে হাতে মোবাইল ক্যামেরা চালু করে ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকেই। তার এই কর্ম পাশের মানুষটিকে বিরক্ত করলেও সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ দেখা যায় না। এই ঘটনাগুলো সবচেয়ে বেশি বিরক্তি তৈরি করছে সাংবাদিকদের সম্মেলনে। নামপরিচয়হীন ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওগ্রাফাররা অদ্ভূত সব উপায়ে এইসব অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাচ্ছেন। কেউ কেউ সাংবাদিক পরিচয় নিয়ে আসছেন। এসে নিজের ব্যবসার উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাংবাদিকতার পরিচয় জানতে গেলে সঠিকভাবে কিছুই বলতে পারেন না। আর বললেও দেখা যায় অখ্যাত সব নিউজ পোর্টাল বা অনলাইন রেডিও-টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত তারা। যারা মূলত সংবাদ প্রকাশের চেয়ে ভিডিও প্রকাশ করাতেই বেশি আগ্রহী। উদ্দেশ্য কেবলই অর্থ উপার্জন; সাংবাদিকতা সেখানে হাতিয়ার মাত্র।
আজকাল প্রায় সব অনুষ্ঠানেই দলবেঁধে এই ভিডিওগ্রাফাররা ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এতে করে সংবাদ সংগ্রহ করতে সমস্যার মুখে পড়ছেন সাংবাদিকরা। অনুষ্ঠানের ছবি তুলতে গিয়ে ফটোগ্রাফাররা হচ্ছেন ভোগান্তির শিকার।
তারাকারাও বিষয়টিকে বিব্রতকর ও বিরক্তি হিসেবে নিচ্ছেন। বেশ কিছু অনুষ্ঠানে তারকাদের সঙ্গে তর্কও করতে দেখা গেছে ইউটিউবারদের। তারকাদের সরাসরি প্রস্তাব করা হচ্ছে অমুক ইউটিউব চ্যানেলের জন্য সাক্ষাতকার দিতে। অনেকে রাজি হন, অনেকে হন না। অনেকে আবার ইউটিউব চ্যানেলটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গিয়ে পরিচয় পেয়ে বিরক্তি প্রকাশ করছেন। সে নিয়ে অনুষ্ঠানগুলোতে তৈরি বিব্রতকর পরিবেশ। কেউ কেউ এইসব ভিডিওগ্রাফারদের যন্ত্রণায় সাংবাদিকদেরও এড়িয়ে চলেন। কারণ, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সেটাও ভিডিও করতে থাকেন তারা।
পাশাপাশি ফেসবুক লাইভে যাওয়া মানুষগুলোও এইসব অনুষ্ঠানে বিরক্তির কারণ হচ্ছেন। তারকা এলেই মোবাইল বা ক্যামেরা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে সৃষ্টি করছেন বিশৃঙ্খলা। ফেসবুক লাইভে যাওয়া বেশিরভাগ মানুষই মিডিয়ার বাইরে। হয় তারা আয়োজকদের কারো পরিচিত অথবা অতিথিদের সঙ্গী হিসেবে আসেন। মিডিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত না থাকা এইসব মানুষ লাইভে গিয়ে প্রকাশ করে দিচ্ছেন মিডিয়ার মানুষদের একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত ও কথাগুলো। এতে করে নানা রকম ঝামেলাই তৈরি হচ্ছে। সর্বশেষ এফডিসিতে চলচ্চিত্র দিবসে এ নিয়ে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বাক বিতণ্ডা হয়েছে ক'জন তারকা ও সাংবাদিকদের।
তাই এইসব অপেশাদার, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে অজ্ঞ মানুষদের ব্যাপারে সচেতন হওয়াটা জরুরি মনে করছেন শোবিজের সবাই। যে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজকরা এই বিষয়টির প্রতি কড়া নজর রাখলেই এতে সমাধান আসবে বলে মনে করেন তারা। পাশাপাশি তারকারাও কারো ভিডিওতে বা লাইভে মুখ দেখানোর আগে তাদের পেশাদারীত্ব, পরিচয় জেনে নেবেন বলে অনুরোধ করেছেন।
এলএ/এমএস