জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে স্বপ্ন পূরণ হলো : মেকাপম্যান মানিক
অনেকটা পথ তিনি পাড়ি দিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতে। সিনেমার মেকাপম্যান হিসেবে তার নামটি জনপ্রিয়। বিশেষ করে শিল্পীদের কাছে তিনি প্রিয় মানুষ। মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়েছেন নায়ক-নায়িকা, অভিনয়শিল্পীদের। তার হাতের সুনিপুণ সাজে অভিনয় করে অনেকেই মাতিয়েছেন দর্শক। ঘরে তুলেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও।
তবে নিজে এই পুরস্কারটির অপেক্ষায় ছিলেন বহুদিন। অনেকবারই মনে হয়েছে হয়তো এই বছরে তিনি পেয়ে যাবেন চলচ্চিত্রের রুপসজ্জা শিল্পের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিটি। কিন্তু হয়নি। স্বপ্নের খুব কাছাকাছি গিয়েও সেটা পূরণ হয়নি। ততদিনে তার বহু শিষ্যরাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে ইন্ডাস্ট্রিতে। হয়েছে জনপ্রিয় ও প্রশংসিত। এই তৃপ্তিটুকু নিয়ে তিনি আশায় বুক বেঁধেছিলেন একদিন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারটিও হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পাবেন।
অপেক্ষা করে ছিলেন। ধৈর্য, শ্রম আর কাজের প্রতি ভালোবাসা কখনো বৃথা যায় না। অবশেষে সেই প্রমাণ পেলেন মাহাবুব রহমান মানিক। ২০১৬ সালের শ্রেষ্ঠ রুপসজ্জাশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিয়েছেন তিনি। রুবাইয়াত হোসেনের ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ চলচ্চিত্রে রুপসজ্জা করে স্বপ্নের দেখা পেলেন মানিক।
সেই অনুভূতি জানাতে গিয়ে মানিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই আনন্দের প্রকাশ আমি কোনো ভাষায় করতে পারবো না। কাজের স্বীকৃতি চায় প্রতিটা মানুষ। সেটা পেলে মন আনন্দে ভরে উঠে। আরও ভালো কাজের অনুপ্রেরণা আসে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকের এই অবস্থানে আমি পৌঁছেছি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় আমাকে আরও সাহসী করেছে ভালো কাজের প্রতি। আমি নিজেকে আরও নিবেদিত করে চলচ্চিত্রে আমৃত্যু কাজ করে যেতে চাই।’
মাহাবুব রহমান মানিকের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার আশুতিয়াপাড়া গ্রামে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মানিক চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন ভাগ্যের পরিবর্তন করবেন বলে। ঘটনাক্রমে হাতে তুলে নিয়েছিলেন শিল্পীদের সাজানোর রংতুলি। তারপর কেবল কেটে গেছে সময়, মানিক পরিণত হয়েছেন ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় মেকাপম্যান হিসেবে। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি খুব ঝোঁক ছিলো। সমবয়সী বন্ধদের নানাভাবে সাজিয়ে দিতাম। আর সিনেমার পোকা ছিলাম বলে হুট করেই মাথায় মেকাপম্যান হবার ইচ্ছেটা ঝেঁকে বসলো। সেই ইচ্ছে নিয়েই চলচ্চিত্রে কাজ করা।’
শুরুটা ১৯৯২ সালে মেকাপ সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে আফজাল হোসেনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পূর্ণ মেকাপশিল্পী হিসেবে পথচলা শুরু হয়। এরপর তিনি কাজ করেছেন অনেক স্বনামধন্য পরিচালকের সাথে। এরমধ্যে কাজী হায়াত, মালেক আফসারী, মতিন রহমান, মুশফিকুর রহমান গুলজার, স্বপন আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, মোস্তফা কামাল রাজ, অনিমেষ আইচ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
যার হাতে শিল্পী রঙিন হয়, তার স্বপ্নগুলো বাঁচুক ভালোবাসা আর সম্মানে। পর্দার পেছনের সফল মানুষ মাহাবুব রহমান মানিককে অভিনন্দন।
এলএ/এমএস