পাকিস্তানি মার্কা চেহারার জন্যই তৌকীর আমাকে ছবিতে নিয়েছে : যশপাল
‘তৌকীর আহমেদ, নূসরাত ইমরোজ তিশা, ফজলুর রহমান বাবু এমন অনেককে আমি আগে থেকে চিনি। কারণ বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করার আগেই তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘অজ্ঞাতনামা’ ও ‘হালদা’ এই ছবি দুটি দেখেছি। এমনকি এই নির্মাতার প্রতি মুগ্ধতাও তৈরি হয়েছে আমার।
এর আগে ইরানের নির্মাতা মাজিদ মাজিদির ছবি দেখেছি। আমার কাছে তৌকীর আহমেদকে সেই মানের নির্মাতা মনে হয়েছে।’- কথাগুলো বলছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা যশপাল শর্মা। তৌকীর আহমেদের ‘ফাগুন হাওয়া’ ছবিতে অভিনয় করতে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি।
খুলনায় ছবিটির শুটিং এ অংশ নিচ্ছেন এই অভিনেতা। ঢাকা থেকে খুলনায় তৌকীর আহমেদের শুটিংয়ের নিউজ কাভার করতে এসেই দেখা পাওয়া গেল যশপালের। রোবাবার সন্ধ্যায় খুলনার পাইক গাছার নোনা জল বাংলোতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। কথা বলেছেন প্রাণ খুলে। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো তার আলাপচারিতার চুম্বক অংশ।
জাগো নিউজ : কেমন আছেন? কেমন লাগছে বাংলাদেশে এসে?
যশপাল শর্মা : গুড ফিলিং। খুব ভালো লাগছে। সত্যি কথা বলতে আমার মনে হচ্ছে আমি কলকাতাতে আছি। এখানকার রাস্তা, আবহাওয়া আমার খুব চেনা মনে হয়েছে। কলকাতার গন্ধই যেনো ভাসছে চারপাশে।
জাগো নিউজ : কয়েক দিন হলো শুটিং করছেন এখানে। এখানকার শুটিংয়ের পরিবেশ আপনার চোখে কিভাবে ধরা দিয়েছে?
যশপাল শর্মা : একটা দৃশ্য আমার নজর কেড়েছে। আমরা যখন শুটিং করি তখন প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। অনেক মানুষ শুটিং দেখতে আসে। কিন্তু কোনো ক্রাউড ছাড়াই শুটিং উপভোগ করে তারা। তাদের সমাগম আমার ভালো লাগছে। কাজের কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না আমাদের। অথচ কোনো কোনো শুটিংয়ে গিয়ে রিতীমত হাতাহাতি-হট্টগোল হতেও দেখেছি।
জাগো নিউজ : আপনি ‘ফাগুন হাওয়া’ ছবিতে অভিনয় করছেন। ছবিটি বাংলা ভাষার ছবি। এখানে আপনার সহশিল্পীরা সবাই বাঙালি। এক্ষেত্রে কানেক্ট করতে কোনো সমস্য হচ্ছে কী?
যশপাল শর্মা : এক্ষেত্রে ভাষা আসলে প্রতিবন্ধকতার কোনো বিষয় না। চার্লি চ্যাপলিন কোনো ডায়ালগ ছাড়াই অভিনয় করে সারা পৃথিবী কাঁপিয়ে দিয়েছেন। আমার চরিত্রটি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন নির্মাতা। আমি সেটা বুঝেছি। আমাকে উর্দু ভাষায় কথা বলতে হচ্ছে পুরো ছবিতে। আমার চরিত্রটির নাম জামসেদ। একজন পাকিস্তানি পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছি। অনেক এনজয় করেই অভিনয় করছি।
জাগো নিউজ : বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন এই ছবিটির মূল বিষয়। এই দেশের ইতিহাসের প্রধান একটি অংশ ‘ভাষা আন্দোলন’। আপনি এমন একটি ছবিতে অভিনয় করছেন। কোনো অনুভূতি কী আলাদাভাবে নাড়া দিচ্ছে মনে?
যশপাল শর্মা : আমি একটি বিষয় ভেবেছি। যেই দেশের অধিকাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। জিন্নাহ সেখানে তাদের উপর উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন এটা কীভাবে সম্ভব! যেখানে প্রকৃতি বাংলায় কথা বলে, পাখিও বাংলায় ডেকে ওঠে, ‘বউ কথা কও, বউ কথা কও’ বলে। এমন একটি ছবির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারায় ভীষণ ভালো লাগছে।
জাগো নিউজ : কীভাবে যুক্ত হলেন ছবিটিতে বলবেন? মানে তৌকির আহমেদের সঙ্গে আপনার পরিচয়টি কীভাবে?
যশপাল শর্মা : হা হা হা। তৌকীরের সঙ্গে আমার পরিচয় হলো আসলে আমার পাকিস্তানি চেহারার কারণে। আমাকে দেখতেই নাকি অনেকটা পাকিস্তানিদের মতো লাগে। কলকাতার অমিত দেবনাথ ও অমিথ ব্যানার্জী আমাদের পরিচয়ে কিছুটা ভূমিকা রেখেছেন। তৌকীর মুম্বাই গিয়েছিলেন অনেকের সঙ্গে কথা বলে শেষে আমাকে চূড়ান্ত করেছেন। বাংলাদেশের একটি ছবিতে প্রথমবারের মতো অভিনয় করছি। ছবির প্রধান একটি চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ আসছে। এটাও এই ছবিতে অভিনয়ে সম্মতি দেওয়ার একটা কারণ।
জাগো নিউজ : তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় অভিনয় করার অভিজ্ঞতা কেমন?
যশপাল শর্মা : অনেক ট্যালেন্ট একজন নির্মতা তিনি। আমি জানি দেশে বিদেশে তার চলচ্চিত্র সুনাম অর্জন করেছে। বাংলাদেশের সিনেমার পরিবর্তনে তৌকীরের ভাবনা অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে।
জাগো নিউজ : বলিউডের ছবি ও বাংলাদেশের ছবির মধ্যে কী পার্থক্য চোখে পড়ছে?
যশপাল শর্মা : আমি এভাবে পার্থক্য করি না। কিছু ছবি তৈরি হয় অনেক বড় বাজেট থাকে। আবার কিছু ছবির বাজেট থাকে কম। কম বাজেটেও অনেক ভালো ছবি নির্মাণ হওয়ার নজির আছে। লো বাজেটের ছবিতে একটা স্ট্রাগল থাকে। সেটা করছে বাংলাদেশ ও এখানকার সিনেমার লোকেরা।
জাগো নিউজ : এই কয়দিনে কী কী দেখলেন চারপাশে?
যশপাল শর্মা : আসলে তেমন কিছু দেখা হয়নি। শুটিং করেই ব্যস্ত সময় কাটছে। তারপরে শুটিং করতে গিয়েই বাংলাদেশের এই শহরের কিছু মার্কেট, শপিং মল ঘুরেছি। কলেজে গিয়েছি। এখানকার মানুষগুলোকে অনেক শান্তি পূর্ণ মনে হয়েছে। তবে সময় নিয়ে ঘুরতে বের হবো একদিন।
জাগো নিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
যশপাল শর্মা : ধন্যবাদ আপনাদের, ধন্যবাদ বাংলাদেশ।
এমএবি/এলএ/পিআর