হৈ চৈ উৎসবে বাচসাস দিলো একমুঠো অবসর ও সবুজের ছোঁয়া
অনলাইনের এই আপডেট থাকার প্রতিযোগিতার যুগে চলচ্চিত্র সাংবাদিকদের কাছে নিউজ করতে করতে রাত নামে, নিউজ ভাবনা নিয়ে হয় দিনের শুরু। নিত্য ঘটনাবহুল শোবিজে ছুটির দিনগুলোতেও চোখ রাখতে হয় কোথায় কী ঘটছে সেইদিকে। অবসর যেন সোনার হরিণ।
একটা দিনের হৈ চৈ আর ফুর্তির নিশ্চয়তা নিয়ে সেই অবসরের স্বাদ দিলো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)। গতকাল শনিবার, ৩ মার্চ ছিলো দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির বনভোজন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। বাচসাস পরিবার দিবসে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও তাদের পরিবার।
আয়োজনকে রঙিন করতে উপস্থিত হয়েছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা ফারুক, আলমগীর, আলীরাজ, সুব্রত, অভিনেত্রী নূতন, চিত্রনায়ক জায়েদ খান, সাইমন সাদিক, বাপ্পী চৌধুরী, অধরা খান, দীঘিসহ আরও অনেকে। আয়োজন প্রাণবন্ত করেছিলেন কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর, সোহেল মেহেদী, তরুণ মুন্সী, ক্লোজআপ ওয়ান তারকা মুহিন। ছিলেন কলকাতার শিল্পী প্রীতম ও জেমিস।
ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, পরিচালক শাহ আলম কিরন, জনপ্রিয় নির্মাতা শাহীন সুমন, তরুণ নির্মাতা অপূর্ব রানা, প্রযোজক ফরমান আলী, জাজ মাল্টিমিডিয়ার সিইও আলীমুল্লাহ খোকনসহ চলচ্চিত্রের অনেক মানুষেরা।
শনিবার সকাল ১০টায় সাভারের গেণ্ডায় অবস্থিত স্পন্দন পার্কে পা রেখেই মুগ্ধতায় মন ভরে গেল সবুজের সতেজ স্পর্শে। খোলামেলা, শীতল-শুদ্ধ বাতাসের মুক্ত আনাগোনায় যান্ত্রিক জীবনের মানুষগুলো খুঁজে পেল যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। ফুলে ফুলে সাজানো পার্কের চারপাশ ছিলো মোহনীয়।
চারধারে পুকুর ও খালের শান্ত নিথর জল ফিরিয়ে দিয়েছিলো শৈশবের দস্যিপনা। বোঝা যাচ্ছিলো জামা কাপড়ে প্রস্তুতির অভাবে অনেকেই জলে নেমে সাঁতরানোর আক্ষেপটা মনে লুকিয়ে রেখেছেন। সময় কেটে গেল গল্প, ছুটোছুটি, হৈ চৈ, গান, কবিতা আর খেলাধুলায়।
নারীরা দারুণ উপভোগ করেছেন বালিশ খেলা। বয়স্করা ঘুরেফিরে হালকা হওয়ার চেষ্টাই করেছেন। যুবকের দল ব্যাট-বল হাতে হয়ে উঠেছিলেন মাশরাফি, তামিম, সাকিব-মুস্তাফিজ। সাংবাদিকদের সঙ্গে খেলাতে যোগ দিয়েছিলেন নায়ক বাপ্পীও। সবুজ অবসর যেন ভুলিয়ে দিলো বয়স ও পদবীর অবস্থান-পার্থক্য। মিলেমিশে সবাই এক হয়ে উপভোগ করে নিতে চাইলেন হঠাৎ পাওয়া এই অবসর।
তবে আনন্দ উপভোগে এগিয়ে ছিলো শিশুরা। দোলনা, নাগরদোলাসনহ স্পন্দন পার্কে রয়েছে শিুশুদের খেলাধুলার হরেক রকম আয়োজন। সেইসব আয়োজনে মেতে ওঠা বাচ্চাদের হাঁকডাক কানে বাজছিলো বন্দী খাঁচা ভেঙে মুক্ত আকাশে উড়াল দেয়া পাখিদের কলতানের সুরে। আহা জীবন......
সব মিলয়ে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ। অদ্ভূত গোছানো ছিলো পুরো আয়োজন। ২০১২ সালের পর দীর্ঘ সময় বনভোজনে যেতে পারেনি বাচসাস। এতদিনের বিরতি কাটিয়ে প্রথম বনভোজনে এমন গোছালো আয়োজনের বাহবা না দিয়ে পারা যায় না। বোঝাই গেল, ত্রুটিহীন বনভোজন আয়োজনে পরিকল্পনা ছিলো অনেকদিনের।
দুপুর গড়ালো, ঠেরই পাওয়া গেল না ঘুরে ফিরে অবসর যাপনের আনন্দে। মজার মানুষ হিসেবে খ্যাত চলচ্চিত্র সাংবাদিক দুলাল খান মাইকে ডেকে দিলেন দুপরের খাবারের নেমন্ত্রণ। প্রথম পর্বে নারী ও শিশুদের নিয়ে খানিকটা এলোমেলো ভাব দেখা গেলেও খাবারের দায়িত্বে থাকা বাচসাসের যোগ্য নেতৃত্বে সেটি নিয়ন্ত্রণে এলো মুহূর্তেই। ভোজ আয়োজনে ছিলো পোলাও, গরু, খাসি ও মুরগী। আহার শেষের ভোজে ছিলো মিষ্টি মুখ ও দই। তৃপ্তি নিয়েই সাড়া গেল খাওয়া দাওয়া।
দুপুরের খাওয়া শেষে সবুজ প্রকৃতির মাতাল হাওয়ায় ক্লান্ত শরীরটা শান্ত করে নিলেও অনেকেই। কেউ কেউ প্রকৃতির নিখাদ-সুশীতল স্পর্শে খানিকটা ভাত ঘুমও দিয়ে দিলেন।
বিকেল এলো, নতুন করে মেতে উঠলো বনভোজনের প্রাঙ্গণ। মঞ্চে তখন ফারুক, সুব্রত, বাপ্পী, জায়েদ খানেরা। বাচসাসকে ধন্যবাদ দিলেন সুন্দর আয়োজনের জন্য। জানালেন বাচসাস তাদেরও প্রিয় সংগঠন। চলচ্চিত্র সাংবাদিকরা চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। সবাই মিলেমিশে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করলেন তারা।
বাচসাসের সভাপতি আবদুর রহমান ও সাধারন সম্পাদক ইকবাল করিম নিশানও তাদের ধন্যবাদ দিলেন। ধন্যবাদ দিলেন এই আয়োজনে পাশা থাকা জাজ মাল্টিমিডিয়া, কিউট, বিডি ফুড, ইউরো কোলা, নোমান গ্রুপ, খন্দকার গ্রুপ, ক্রিসপি, অন্য প্রকাশ, আফসোস করলেন যারা বনভোজনে আসতে পারেননি তাদের জন্য। এমনি সময় গান নিয়ে মঞ্চে এলেন সোহেল মেহেদি। তিনি একে একে গাইলেন ‘নীল দরিয়া’, ‘একটাই কথা আছে বাংলাতে’ গান। এরপর এলেন শিল্পী ও সুর-সংগীত পরিচালক তরুণ মুন্সী। তিনি গাইলেন তার বিখ্যাত গান ‘স্বার্থপর’।
দুলাল খানের ঘোষণার হাত ধরে মঞ্চে এলেন বাংলা গানের যুবরাজ আসিফ আকবর। তিনি এসেই কণ্ঠে নিলেন লাকী আখন্দের গান- ‘চলো না ঘুরে আসি’। গান শেষে করলেন স্মৃতিচারণ। শ্রদ্ধা জানালেন সদ্য প্রয়াত ঝুটন চৌধুরী, আলি আকবরু রুপু, সাবা তানির আত্মার প্রতি।
আবারও ফিরে গেলেন গানে। অনুরোধের আসরে এবার আসিফের কণ্ঠে ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’। এরপর কলকাতার দুই শিল্পী শোনালেন ‘তোকে হেব্বী লাগছে রে’ ও ‘তোমায় হৃদ মাঝারে রাখিবো’ গান দুটি। শেষ বেলায় ‘কলিজায় কলিজায় লাগে রে’ গান দিয়ে মাতিয়ে গেলেন মুহিন।
বিনোদন পর্ব শেষেই অনুষ্ঠিত হলো র্যাফেল ড্র। ততক্ষণে অন্ধকার নেমেছে স্পন্দন পার্কে সবুজের বুকে। যারা পুরস্কার জিতেছেন তাদের হৈ চৈ-য়ে মুখরিত হয়ে উঠলো বনভোজনের আঙিনা।
একটা দিনের অবসর আর সবুজের ছোঁয়া নিয়ে এবার ঘরে ফেরার তাড়া। যান্ত্রিক আর জানযটময় জীবনের সেই ঢাকার কাছে আত্মসমর্পণ। তার আগে প্রাণে প্রাণে রইলো মিলনমেলার রঙিন মুহূর্তদের স্মৃতি। মনে মনে রইলো, আবার দেখা হবার বাসনা, নতুন কোনো জায়গায়।
আয়োজন সফল করতে ব্যস্ত ছিলেন সহসভাপতি সীমান্ত খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হামিদ মোহাম্মদ জসিম, অর্থ সম্পাদক নবীন হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈকত সালাহউদ্দিন, আন্তর্জাতিক ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক রিমন মাহফুজ, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক রেজাউর রহমান রিজভী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুল্লাহ জেয়াদ, দফতর সম্পাদক মইনুল হক রোজ, কার্যনির্বাহী সদস্য রাহাত সাইফুলসহ আরও অনেকেই।
ধন্যবাদ বাচসাসকে, ভালোবাসা মাখা কৃতজ্ঞতা এই বনভোজনের পেছনে এক ফোটাও ঘাম ঝড়িয়েছেন যিনি।
এলএ/জেআইএম