জাফর ইকবালের উপর হামলায় তারকাদের প্রতিবাদ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার এক অনুষ্ঠান চলাকালে ছুরিকাঘাতে আহত হন প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সিলেটে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে। তার উপর হামলা হওয়ায় ক্ষোভ, সঙ্কা প্রকাশ করেছেন ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারকারা।
যোগাযোগ মাধ্যমে এই হামলার পেছনে যারা আছে তাদেরও খুঁজে বের করে বিচারের দাবি তুলেছেন অনেকেই। আয়নাবাজি খ্যাত নির্মাতা অমিতাভ রেজা এই ঘটনার পরে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘শেষ পর্যন্ত জাফর ইকবাল স্যার। এরা কারা ভাই কই থাকে। এটা কি অবিশ্বাস্য নয় যে একের পর এক ঘটনা ঘটে যায় আর আমাদের পুলিশ এদের ধরতে পারে না।’
অন্যদিকে নাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, ‘যাকে ধরেছেন তাকে ক্রসফায়ারের চক্করে ফেলেন না। আমরা মানবো না।’
কণ্ঠশিল্পী মাকসুদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জাফর স্যারের ওপর হামলার তিব্র নিন্দা, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
চলচ্চিত্র গবেষক বিধান বিবেরু বলেন, ‘মুহম্মদ জাফর ইকবাল আজ হামলার শিকার হতেন না যদি আগের হামলার বিচার হত। ধিক্কার জানাই। প্রতিবাদ জানাই।’
ডুব খ্যাত নির্মতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী একটি নিউজ শেয়ার দিয়ে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘সো ম্যানি থট কামিং টু মাই মাইন্ড! সো ম্যানি থিংস টু সে!’
অভিনেত্রী উর্মিলা শ্রাবন্তী কর লিখেছেন, ‘ড. জাফর ইকবাল স্যার আহত। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই.....’
পরবাসিনী সিনেমার পরিচালক স্বপন আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ড. জাফর ইকবাল স্যার এর উপর আঘাত হলো, পরেরবার তাদের টার্গেট আপনি অথবা আমি। দেশ- বিদেশে এমন প্রচুর তরুণ, যুবক এবং বৃদ্ধ দেখেছি, যারা আপনার-আমার ঠিক উল্টো ভাবছে। তারা নিজে নামাজ পড়ুক বা না পড়ুক, মিথ্যা বলা, অন্যকে ঠকানো, ধান্দাবাজি করা, সব রকমের অপকর্মের পরও কথায় কথায় ধর্মের দোহাই দিতে পারে, আল্লাহর নামে কসম কাটতে পারে। মুহূর্তে তারা আপনাকে আমাকে ইসলামের শত্রু ঘোষণা দিতে পারে। তারা কেউ একা অথবা একত্রিতভাবে আপনাকে আমাকে আঘাত করতে পারে। প্রবাসেও অনেকের কথাবার্তা- চিন্তা ভাবনা আমাদের ভয় পাইয়ে দেয়। তারা এখানে এসে খাটি মুসলমান হয়ে গেছে। যে দেশে থাকে সেই দেশের মানুষকে বিধর্মী হিসেবে গালাগালি করে। তারা যখন অপকর্ম করে ও ধরা পরে তখন কিন্তু বিশ্ববাসী আমাদেরকে ছিঃ ছিঃ করে। এমন লোকের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। এই জারজ সন্তানরা বাঙ্গালী সত্তা, স্বাধীনতা, ভাষা ও রাজনীতি সবকিছুর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। আধুনিক সময়ে এই বিশ্ব ধ্বংসে তারা যথেষ্ট। আসুন আবার আওয়াজ উঠাই এসব ধর্মীয় জঙ্গিবাদের বিপক্ষে। ধর্ম নয়, মানবতা দিয়ে সকল সৃষ্টিকে ভালবাসি।’
৩ মার্চ, শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে হামলার শিকার হন জাফর ইকবাল। সেখানে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দুদিনব্যাপী ‘ইইই ফেস্টিভ্যাল-২০১৮’-এর সমাপনী অনুষ্ঠান চলছিল। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
হামলার পর জাফর ইকবালকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার খোঁজ নেন ও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সিএমএইচে নেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে হামলাকারীদের ধরার নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান। রাতেই জাফর ইকবালকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সিএমএইচে আনা হয়। বর্তমানে তার অবস্থা অনেকটা উন্নতির দিকে।
এমএবি/এলএ/আরআইপি