ওয়াইল্ডলাইফ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রথমবার বাংলাদেশি চলচ্চিত্র
পাখি নিয়ে গান কবিতার অভাব নেই এদেশে। তবে প্রথমবারের মতো পাখি নিয়ে তৈরি হলো চলচ্চিত্র। নাম ‘প্যারাডাইজ নেস্ট’। আর এখানে চরিত্র কেবল পাখিই। সেই পাখির নাম দুধরাজ।
এক সময় হাতের কাছে দেখা মিললেও বাংলাদেশে এখন প্রায় বিরলপ্রজ পাখিই বলা হয় দুধরাজকে। এটার ইংরেজি নাম প্যারাডাইজ ফ্লাইকেচার। তবে অঞ্চলভেদে দুধরাজ, সাহেব বুলবুলি, শাহ-বুলবুল নামেও পরিচিত। দেখতে বুলবুলির মতো হলেও এ পাখি বুলবুলের সমগোত্রীয় নয়।
সেই পাখির জীবন বৈচিত্র নিয়েই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেন দেশের জনপ্রিয় আলোকচিত্রী আরিফ আহমেদ। এটি বেশ পুরনো খবর। নতুন খবর হলো তার চলচ্চিত্রটি ঘুরে বেড়াচ্ছে দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র উৎসবে। পৃথিবীজুড়ে বন আর বন্যপ্রাণিদের প্রতি উদাসীনতার এই দুঃসময়ে আরিফ আহমেদের চলচ্চিত্রটি দুনিয়া মাতাচ্ছে।
সম্প্রতি এটি প্রদর্শিত হয়েছে ইতালির একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। এবার ‘প্যারাডাইজ নেস্ট’র মুকুটে যোগ হতে যাচ্ছে আরও একটি অনন্য সাফল্য। সেটি হলো বন্যপ্রাণীদের উপর নির্মিত চলচ্চিত্র নিয়ে বিশ্বের একমাত্র চলচ্চিত্র উৎসবের আমন্ত্রণ পেয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিটি।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, বাংলাদেশ থেকে এই উৎসবে অংশ নেওয়া প্রথম ছবি হতে যাচ্ছে ‘প্যারাডাইজ নেস্ট’।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ছবিটির নির্মাতা আরিফ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত মন্টানার মিসৌলা-তে অনুষ্ঠিত হবে ৪১তম ইন্টারন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। সেখানে আমার ছবিটি প্রদর্শনের আমন্ত্রণ পেয়েছি। বন্যপ্রাণিভিত্তিক পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র উৎসব এটি। বিশ্বের নামী দামি সব নির্মাতারা এখানে ছবি নিয়ে হাজির হবেন। তাদের ভিড়ে আমার ছবিটি প্রদর্শিত হবে ভেবে খুবই ভালো লাগছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাখিদের ছবি তোলা আমার নেশা। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ‘প্যারাডাইজ নেস্ট’ নির্মাণ করেছি। এখন অনেকেই এটি নিয়ে আগ্রহ দেখালেও শুরুর দিকে কোনো পৃষ্ঠপোষক পাইনি। নিজেই প্রযোজনা করেছি। ছবিটির প্রতিটি ফ্রেমে অনেক শ্রম ও দীর্ঘশ্বাস মিশে আছে আমার। অবশেষে এটি সবার কাছে প্রশংসিত হচ্ছে দেখে আমি স্বার্থক। শিগগিরই ছবিটি ইউটিউবে প্রকাশ পাবে।’
একটা নীড়কে কেন্দ্র করে পাখির যাপিত জীবন, বোধ, বেড়ে ওঠা, প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম, প্রেম-ভালোবাসা এমনকি ইকো সিস্টেমের শিকার হওয়ার মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে ‘প্যারাডাইজ নেস্ট’ শর্টফিল্মে। পাখির রং পরিবর্তনের বিষয়টিও দেখা যাবে এখানে। পুরুষ সাহেব বুলবুলের দু পর্ব। খয়রা ও সাদা পর্ব। দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত পুরুষ পাখি খয়রা পর্বে জীবন কাটায়। তারপর এদের গায়ের খয়রা রংটা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ সাদা হয়ে যায়। সাধারনত পুরুষ পাখির লেজ মেয়ে পাখির তিন গুণ হয়।কিন্তু একই রূপে স্ত্রী পাখির কাটে পুরোটা জীবন।
ছবিটির নামকরণ প্রসঙ্গে আরিফ আহমেদ বলেন, ‘আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, একটা পাখির কাছে নিরাপদ বা ভরসার জায়গা হলো তার নীড়। মানে একটা পাখির কাছে ‘নীড়’ হলো তার স্বর্গ। আর সে কারণেই আমি আমার চলচ্চিত্রটির নামও রেখেছি ‘প্যারাডাইজ নেস্ট’। মাত্র সাড়ে আট মিনিটের ভিডিও হলেও এখানে আমার প্রায় পাঁচ মাসের পরিশ্রম মিশে আছে।’
এত কিছু থাকতে কেন পাখিদের নিয়ে চলচ্চিত্র? এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফ বললেন, ‘দিনকে দিন অসংখ্য সুন্দর আর প্রিয় পাখিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, বিলীন হচ্ছে। যেভাবেই হোক এই পাখিগুলোকে আমাদের রক্ষা করা উচিত। পাখি বাঁচলে প্রকৃতি বাঁচবে, বাঁচবে মানুষ। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই এটি নির্মাণ করা। এরইমধ্যে ছবিটি নিয়ে অনেক বন্যপ্রাণি সংশ্লিষ্টরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’
এলএ/আইআই