বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকসহ তিন সিনেমার ঘোষণা দিলেন তথ্যমন্ত্রী
‘ঢাকা অ্যাটাক’র সফল নির্মাতা দীপংকর দীপনের নতুন ছবির নাম ‘ডু অর ডাই’। আজ বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে ছবিটির নাম ঘোষণা হয়ে গেল। সেখানে নির্মাতা জানান, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা ‘অপারেশন কিলো ফ্লাইট’ শিরোনামের বিমান হামলা চালান। তারই ছায়া অবলম্বনে এর বীর নায়কদের অন্যতম DHC3- OTTER বিমানের কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলমের (বীর উত্তম) মুক্তিযুদ্ধের সময়ের এক অসম্ভব সাহসী ও অবিশ্বাস্য গল্প নিয়ে নির্মিত হবে চলচ্চিত্রটি।
ছবির নাম ঘোষণায় উপস্থিত ছিলেন কিলো ফ্লাইট অপারেশনের অংশগ্রহণকারী ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ (বীর উত্তম), ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম (বীর উত্তম), ক্যাপ্টেন আব্দুল খালেক (বীর প্রতীক), নূরুল হক (বীর প্রতীক), কর্পোরাল মো. রুস্তম (বীর প্রতীক)।
প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি নিজের বক্তব্য দিতে গিয়ে এ ছবির নির্মাতা ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানদের ধন্যবাদ জানান মুক্তিযুদ্ধে দারুণভাবে অবদান রাখা ‘অপারেশন কিলো ফ্লাইট’ ও তার সঙ্গে জড়িত বীরদের গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায়।
পাশাপাশি তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তিনটি সিনেমা নির্মাণেরও ঘোষণা দেন এ সময়। তিনি বলেন, ‘তথ্য মন্ত্রণালয় অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নৌ-সেক্টর পরিচালিত সফলতম গেরিলা ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নিয়ে সিনেমা নির্মাণের কথা ভাবছিল। কিছু কাজও হাতে নেয়া হয়েছিল। তারপর বিমান বাহিনীর এ অপারেশন নিয়েও সিনেমা নির্মাণের ইচ্ছে ছিল। যেহেতু দীপংকর দীপন আমাদের হয়ে একটি কাজ করে ফেলছেন তাই তার প্রতি ধন্যবাদ রইলো, সেইসঙ্গে অভিনন্দনও।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ ৪৭ বছরে অনেক সিনেমাই নির্মাণ হয়েছে যা আমাদের মুগ্ধ করেছে। তবে এখনও বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস নিয়ে কোনো সিনেমা হয়নি। আমরা সেই চেষ্টাও করছি। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হবে। এ দুটি মাইলফলকে সময়টাতেই আমরা দুটি সিনেমা নির্মাণ করতে চাই।’
দুটি সিনেমার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আজ আপনা যারা দীপংকর দীপনের প্রামাণ্যচিত্রটি দেখেছেন আশা করছি সবাই আমারই মতো লজ্জা পেয়েছেন। এখানে প্রায় ৩০-৪০ জনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে ‘অপারেশন কিলো ফ্লাইট’ কী? কেউই উত্তর তো দিতে পারেইনি বরং হাস্যকর কথা বলেছে। কেউ বলেছে এটা কোনো কাটা ছেড়ার অপারেশনের নাম, কেউ বলেছে এটা কোনো ভিডিও গেমসের নাম। আমাদের প্রজন্ম জানে না মুক্তিযুদ্ধের কী অসীম সাহসী এক অপারেশনের নাম ‘অপারেশন কিলো ফ্লাইট’। এটার ব্যর্থতা আমাদেরই। আমরা জানাতে পারিনি আমাদের ইতিহাস। আমি বিশ্বাস করি দীপনের ‘ডু অর ডাই’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেশের মানুষ চিরদিনের জন্য এ অপারেশনের নাম ও গল্প জানবেন এবং এর সঙ্গে জড়িত বীরদের সম্মান করবেন।
তেমনি করে বঙ্গবন্ধু কে, কী তার পরিচয়, অপারেশন জ্যাকপট কী, কেন হয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন করলে কেউ যেন আমতা আমতা না করে, হাস্যকর উত্তর না দেয় সেজন্য এ তিনটি বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা নির্মাণ করতে চাই। আমি এখনই সব চূড়ান্ত করছি না। তবে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। সরকারের সিনেমা নির্মাণে দক্ষতার অভাব রয়েছে। দেশের চলচ্চিত্রে গুণী মানুষদের নিয়ে কাজগুলো করা হবে। প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাহায্যও নেয়া হবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেকেই সিনেমা বানাতে চেয়েছেন। কিন্তু তথ্য ও কারিগরির দক্ষতার অভাবে সেগুলো আর এগুয়নি। তবে সরকার চেষ্টা করবে সব সীমাবদ্ধা কাটিয়ে ছবিটি নির্মাণ করতে। প্রামাণ্যচিত্র অনেক সহজ বিষয়। এখানে কেবল একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর তথ্য দিলেই চলে। কিন্তু চলচ্চিত্রের জায়গাটি ব্যাপ্তির। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সিনেমা বানাতে গেলে তার জীবনকে তুলে আনতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে। সময়সাপেক্ষ, কিন্তু আমরা ২০২০ সালের মধ্যেই এটি করতে চাই। সেজন্য আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।’
তিনি ‘ডু অর ডাই’ ছবির সাফল্য কামনা করে বলেন, ‘দীপন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ মতো ব্যবসায়িকভাবে সফল ছবি নির্মাণ করে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে আশার আলো দেখিয়েছেন। এ ছবিটির জন্য যে বিশাল প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা তিনি করেছেন প্রশংসার দাবিদার। আমার বিশ্বাস, তার এ ছবিটিও ব্যবসা সফল হবে। এবং তার ছবির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সত্য-অদম্য এক ঘটনা পৌঁছে যাবে সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে।
এলএ/এমএস