ঢাকাই চলচ্চিত্রে ঘর ভেঙেছে যেসব তারকার
নভেম্বর থেকেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল যে শাকিব খান এবং অপু বিশ্বাসের সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে। অবশেষে গুঞ্জনই সত্য হয়েছে। চিত্রনায়ক শাকিব খান তার স্ত্রী চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠিয়েছেন। শাকিব খানের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং জানিয়েছেন যে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে যদি তাদের মত পরিবর্তন না হয় তাহলে ডিভোর্স কার্যকর হয়ে যাবে।
গত মাসে যখন ডিভোর্সের খবরটি মিডিয়ায় ছড়িয়ে পরে তখন শাকিব এবং অপু দুজনেই এড়িয়ে গিয়েছিলেন বিষয়টি। মিডিয়ার সামনে কোনো বক্তব্য দেননি শাকিব। আর অপু বিশ্বাস সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, ডিভোর্সের বিষয়টি পুরাপুরি গুজব। কিন্তু গুজবকে সত্যি প্রমাণ করে শাকিব খান অপুকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছেন এবং বেশ কিছু অভিযোগও তুলেছেন। শাকিবের অভিযোগ, আব্রাম খান জয়কে বাসার কাজের লোকের কাছে তালাবন্ধ করে রেখে অপু তার কথিত বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে ভারতে বেড়াতে গেছেন। এছাড়াও শাকিবের নির্দেশ অপু অমান্য করেন বলে তার অভিযোগ। তাই অপুর সঙ্গে সংসার করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন শাকিব খান।
শাকিব খান ও অপুকে নিয়ে আলোচনা শুরু অবশ্য বছরের শুরুর দিকে। ১০ এপ্রিল হঠাৎ করেই দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়ে হাটে হাড়ি ভাঙেন অপু। এই খবর প্রকাশের পর থেকেই শাকিব-অপুর নয় বছর আগে হওয়া বিয়ে, সন্তানের জন্ম, বুবলির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন এবং বিবাহ বিচ্ছেদ– সব কিছুই আলোচিত বিষয়। চায়ের দোকানের আড্ডাতেও শাকিব-অপু। বাংলা চলচ্চিত্রে এখন সবচাইতে আলোচিত বিষয়: শাকিব-অপুর ডিভোর্স।
কিন্তু বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে শাকিব-অপুর ডিভোর্সই কি সবচেয়ে আলোচিত? নাকি তাদের চেয়েও কেউ কেউ বেশি প্রভাবিত করেছিলেন ইন্ডাস্ট্রি ও দর্শককে। সেই জবাব পাওয়া হয়তো মুশকিল। তবে ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রথমদিক থেকেই তারকাদের ঘর ভাঙার পালা শুরু। আজকের মতো মিডিয়ার বাড়াবাড়ি ছিলো না বলে তারকাদের অনেক বিচ্ছেদের খবরই অনেকের অজানা। জেনে নেয়া যাক বিভিন্ন সময়ে ঢাকাই ছবির তারকাদের বিয়ে ভাঙনের ছোট গল্পগুলো-
বিচ্ছেদের তালিকায় সবার আগে উঠে আসে কিংবদন্তি নির্মাতা জহির রায়হান ও অভিনেত্রী সুমিতা দেবীর নাম। ১৯৬১ সালে চিত্রনায়িকা সুমিতা দেবীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন কিংবদন্তি নির্মাতা ও সাহিত্যিক জহির রায়হান। সেই সংসার টেকেনি। সেই সময়ের আলোচিত ডিভোর্সের ঘটনা ছিল সেটি। অনেকে এই ভাঙনে মন খারাপও করেছিলেন। এরপর জহির রায়হান নতুন করে ঘর বাঁধেন অভিনেত্রী সুচন্দার সঙ্গে।
জনপ্রিয় নায়ক আলমগীর ও গীতিকার খোশনুর ঘর বেঁধেছিলেন। তাদের সংসারও ভেঙে যায়। পরে রুনা লায়লার সঙ্গে বিয়ে হয় আলমগীরের। খোশনুরের ঘরেই জন্ম নেন আলমগীরের কন্যা আঁখি আলমগীর।
বাংলাদেশের আরেক কিংবদন্তী অভিনেত্রী ববিতারও সংসার ভাঙার খবর পাওয়া যায়। তিনি বিয়ে করেছিলেন ব্যবসায়ী ইফতেখারকে। সেই বিয়ে টিকেছিল মাত্র দুই বছর। এই দম্পতির একমাত্র ছেলে অনিককে নিয়ে ববিতা এখন একাই আছেন। ছেলে থাকেন কানাডাতে।
চিত্রনায়ক জসিম প্রেম করে বিয়ে করেন চিত্রনায়িকা সুচরিতাকে। পরবর্তীতে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর তিনি বিয়ে করেন অভিনেত্রী নাসরিনকে। আর সুচরিতা বিয়ে করেন প্রযোজক কে এম আর মঞ্জুরকে। পরবর্তী জীবনে অবশ্য দুজনই সুখের মুখ দেখেছেন।
অঞ্জু ঘোষক চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন ১৯৮২ সালে। তাকে অভিষিক্ত করেন নির্মাতা এফ কবির চৌধুরী। একাধিক ব্যবসা সফল ছবি উপহার দেন এই নির্মাতা-নায়িকা জুটি। সেই সূত্রে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও প্রেম। একপর্যায়ে এফ কবির চৌধুরীকে বিয়েও করেন অঞ্জু। তবে, সেই বিয়ে টিকেনি।
জয়শ্রী রায় একজন বাঙ্গালী অভিনেত্রী যিনি বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিত রায়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন। ১৯৬৮ সালে তিনি মিস ক্যালকাটা উপাধি লাভ করেন। আলমগীর কবির তার ‘সূর্য কন্যা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য জয়শ্রী রায়কে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। সেই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়েন তারা। জয়শ্রী নামের শেষে কবির যোগ করে থেকে যান বাংলাদেশে। কিন্তু আলমগীর কবিরের সাথে তার সংসার টিকেনি। বিবাহ বিচ্ছেদের পর জয়শ্রী কলকাতাতে পাড়ি জমান। আলমগীর কবির ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তারপর একমাত্র সন্তান লেনিন সৌরভ কবিরকে নিয়ে জয়শ্রী কবির চলে যান লন্ডনে। সেখানেই রয়েছেন তিনি।
আশির দশকে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’র মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন সোহেল চৌধুরী ও দিতি। আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘হীরামতি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই প্রেম গড়ায় বিয়েতে। তাদের ঘরে দুই সন্তানও জন্ম নেয়। কিন্তু নানা কারণে আশির দশকের শেষে তাদের ঘর ভেঙে যায়। এরপর নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন চিত্র নায়িকা দিতিকে। কিন্তু বেশি দিন টিকেনি এই সংসারও। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর সংসার পাতেননি ঢাকাই ছবির তিলোত্তমা দিতি।
ঢাকাই ছবির জনপ্রিয় নায়িকা রোজি প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন চিত্রগ্রাহক, কাহিনীকার, চলচ্চিত্রকার আবদুস সামাদকে। সেই বিয়ে টিকেনি। পরে পরিচালক মালেক আফসারিকে বিয়ে করেন রোজি। বয়সে ছোট হলেও মালেক আফসারীর সংসারে সুখী ছিলেন এই নন্দিত অভিনেত্রী।
চলচ্চিত্র জগতের বিচ্ছেদের আরেকটি আলোচিত ঘটনা ছিলো অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী ও সুবর্না মুস্তাফার ডিভোর্স। এই দুই তারকাকে সুখী দাম্পত্যের আইডল ভাবা হতো। কিন্তু ভেঙে যায় তাদের সংসার। পরবর্তীতে হুমায়ূন ফরিদী আর বিয়ে না করলেও সুবর্ণা ঘর বাঁধেন নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদের সঙ্গে।
মডেলিং ও ছোট পর্দা দিয়ে জনপ্রিয়তা পেলেও চিত্রনায়িকা হিসেবে দর্শকপ্রিয় ছিলেন রোমানা। রিয়াজ ও শাকিব খানের সঙ্গে বেশ কিছু ছবিতে তিনি মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। এই নায়িকা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন জনপ্রিয় উপস্থাপক ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা আনজাম মাসুদকে। সেই সংসার টিকেনি তাদের।
‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ খ্যাত নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাস ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা তানিয়া হোসেনকে। খুব বেশিদিন টিকেনি এই সংসারও।
সালমান শাহ ও রিয়াজের প্রেমিকা হিসেবে আলোচনার তুঙ্গে ছিলেন ঢাকাই ছবির দুর্দান্ত জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর। চলে গেলেন সালমান, বিয়ে করলেন শাবনূর। একটা সময় শোনা গিয়েছিলো চিত্রনায়ক ফেরদৌসের সঙ্গেও এই নায়িকা প্রেমের সম্পর্ক। তবে এই গুঞ্জনকে থামিয়ে দেয় হঠাৎ শাবনূরের বিয়ের খবর। জানা যায় অনিক নামের এক প্রবাসীকে বিয়ে করেছেন তিনি। তারপর নিজেই একদিন স্বামী ও পুত্রসহ প্রকাশ্যে এসে চমকে দেন সবাইকে। তবে দুঃখের ব্যাপার হলো, সম্প্রতি গুঞ্জন শোনা যায় ভেঙে গেছে শাবনূরের সংসার। বর্তমানে স্বামী থেকে আলাদাই থাকছেন এই অভিনেত্রী।
প্রেম ও বিয়ের মতোই বছর জুড়েই তারকা জুটির বিচ্ছেদের খবর আসতে থাকে। ভালোবেসে বিয়ে করেও ব্যক্তিত্বের সংঘাত, মতের অমিল এবং আরও নানা কারণে টিকছে না তারকাদের সংসার। তবে ব্যতিক্রমও আছেন। রিয়াজ-তিনা, মৌসুমী-ওমর সানী, নাঈম-শাবনাজের মতো তারকা দম্পতিরা সুখে আছেন দাম্পত্য জীবনে। এমন আরও অনেক তারকাই আছেন যারা সফলভাবে সারাটি জীবনে একে অপরের হাত ধরে কাটিয়ে দিয়েছেন, দিচ্ছেন।
পর্দার মতো ব্যক্তি জীবনেও তারকারা রঙিন থাকুক, প্রাণবন্ত থাকুক সেটাই দর্শক ও ভক্তদের প্রত্যাশা।
এলএ/আইআই