কমেছে সিনেমার হল ও সংখ্যা, নানা সংকটে ইন্ডাস্ট্রি
দিনে দিনে কমছে সিনেমা হল, কমছে সিনেমার সংখ্যাও। এবারেও রইলো সেই ধারাবাহিকতা। কারওয়ানবাজারের পূর্ণিমা হলসহ বেশ কিছু হল সারাদেশে এই বছরের বন্ধ হয়েছে। গেল কয়েক বছরের তুলনায় এবারে কমেছে ছবির সংখ্যাও।
২০১৫ সালে মুক্তি পায় ৬৩টি চলচ্চিত্র। এ সংখ্যা ২০১৪ সালে ছিল ৭৬। ২০১৬ সাল ছিলো ‘আয়নাবাজি’র বছর। সেবারে সবমিলিয়ে ৫৭টি ছবি মুক্তি পায়। আর চলতি বছরে ২৯ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘গহীন বালুচর’ নিয়ে ছবির সংখ্যা ৫৫টি!
ক্যালেন্ডারের পাতা বলছে বছরের শুরুটা হয় ৬ জানুয়ারি রকিবুল আলমের ‘মাস্তান ও পুলিশ’ সিনেমা মুক্তির মধ্য দিয়ে। আর শেষ হতে যাচ্ছে বদরুল আনাম সৌদের ‘গহীন বালুচর’ সিনেমা দিয়ে। মুক্তি পাওয়া অর্ধশতাধিক সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে আলোচনাতেই ছিল অধিকাংশ ছবি। ব্যবসায়িক সাফল্যের খাতায় তিন-চারটি ছবির বেশে খুঁজে পাাওয়া কঠিন। পাশাপাশি নির্বাচন, হামলা-মামলা-ঝামেলা, ডিভোর্স, শাকিব-অপুর রঙ তামাশা নিয়ে বছর জুড়েই আলোচনায় ছিলো ঢাকাই সিনেমার ইন্ডাস্ট্রি। তাই চলচ্চিত্রবোদ্ধারা বলছেন, ২০১৭ সালটি ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচনার বছর হিসেবে দাবি করা যেতে পারে।
ব্যবসা সফল সিনেমা
যতোই আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিন না কেন, এখনো ঢালিউডের রাজা শাকিব খানই। তার হাত ধরেই এসছে চলতি বছরের প্রথম ব্যবসা সফল সিনেমা। ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়া ‘নবাব’ সিনেমাটি অভাবনীয় ব্যবসা করতে সমর্থ হয়। কলকাতার সঙ্গে ঢাকার যৌথ প্রযোজনার ছবিটিতে শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করে নতুন করে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা পান ওপারের মেয়ে শুভশ্রী। তবে ‘নবাব’ সিনেমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি শাকিব খানের গ্যাটআপ, লুক আর উপস্থাপনে ভিন্নতা। তবে গল্পের গরু আকাশে উড়ানোর অতি মাত্রার রঙ ছড়ানো গল্পে সব শ্রেণির দর্শকের মন জয় করতে পারেনি ‘নবাব’।
সেই আক্ষেপ পূরণ করেছ ‘ঢাকা অ্যাটাক’। এই ছবি দিয়ে চিত্রনির্মাতা হিসেবে অভিষিক্ত হয়েই হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন দীপঙ্কর দীপন। পুলিশ অ্যাকশানের গল্পে নির্মিত এই ছবিটি দারুণ ব্যবসা করে চলতি বছরে। এটিই বছরের সেরা ছবি হিসেবে তালিকার শীর্ষে রয়েছে, আলোচনা এবং ব্যবসায়। ছবিটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট কোনো বিশেষ একজনের উপর নির্ভর করে ছবিটি সফল হয়নি। চমৎকার গল্প, নির্মাণের মুন্সিয়ানা, কলাকুশলীদের আদর্শ টিম হয়ে কাজ করার চেষ্টা, নান্দনিক সিনেমাটোগ্রাফি দিয়ে বাজিমাত করেছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ, মাহিয়া মাহি, এবিএম সুমন, নওশাবা, শতাব্দী ওয়াদুদ, আলমগীর, আফজাল হোসেন, সৈয়দ হাসান ইমাম, সাঞ্জু জন, মিমোসহ আরও অনেকেই।
এরপর ব্যবসায়িকভাবে সফল ছবির নাম নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা ও সন্দেহ। তবে একটি তালিকা করা যেতে পারে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ও ‘নবাব’র পর। সে তালিকায় এগিয়ে থাকবে ‘রাজনীতি’, ‘রংবাজ’, ‘সুলতানা বিবিয়ানা’, ‘হালদা’, ‘অন্তর জ্বালা’ ছবিগুলো। ভালো গল্প ও নির্মাণে ছবিগুলো ছিলো আলোচনার তুঙ্গে, দর্শকও হলে টেনেছিলো আশা জাগানোর মতোই। এইসব ছবির প্রযোজকেরা দাবি করেছেন, তারা ছবিগুলো দিয়ে ব্যবসা সফলও হয়েছেন।
আলোচনাতেই ইতি
এই তালিকার সর্বপ্রথম ছবির নাম মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর ‘ডুব’। বছর জুড়েই ছবিটি আলোচনায় ছিলো নির্মাতার কৌশলী প্রচারণার চাকচিক্যে। সেই প্রচারের বিরাট অংশ ছিলো ছবিটি হুমায়ূন আহমেদের জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হওয়ার বিতর্কে। কেউ বলেছেন এটি হুমায়ূনেরই জীবনী আবার কেউ বলেছেন এটি মোটেও তা নয়। তবে ব্যবসা করতে ব্যর্থ হয়েছে ইন্দো-বাংলার যৌথ প্রযোজনার ছবিটি। ‘ডুব’র প্রাপ্তি তিশার দুর্দান্ত অভিনয়।
এই তালিকায় আরও কিছু নাম আসবে। সেখানে এগিয়ে থাকবে শাকিব-বুবলীর ‘অহংকার’। বছর জুড়েই হুংকার ছেড়েছে শাহাদাত হোসেন লিটনের এই ছবি। কিন্তু হলে দর্শক টানতে পারেনি। একইভাবে ব্যর্থতার মুখ দেখেছে ‘বস টু’ ছবিটিও। তবে যৌথ প্রযোজনার এই ছবিটি কলকাতায় ব্যবসা সফল হয়েছে। দর্শক লুফে নিয়েছে জিৎ-শুভশ্রী ও নুসরাত ফারিয়ার অ্যাকশন-কমেডি ঘরানার এই ছবি।
ম্লান ছিলেন নায়কেরা
শাকিব খান ‘নবাব’ ও আরিফিন শুভ ‘ঢাকা অ্যাটাক’ দিয়ে নামের শেষে বছরে একটি সুপারহিট ছবি যোগ করতে পেরেছেন বটে, তবে বছর জুড়েই তারা ম্লান ছিলেন। পর্দার সাফল্যের আলোচনার চেয়ে বাইরের বিষয় নিয়েই শাকিব ছিলেন অধিক আলোচিত। শুভ সাদামাটা সবসময়ের মতোই। সেইসঙ্গে ঢাকাই ছবির বর্তমান প্রজন্মের সেরা দুই নায়ক সাইমন ও বাপ্পী। বাপ্পীর ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ ও সাইমনের ‘মায়াবীনি’ আলোচনায় থাকলেও নিজেদের খুব একটা মেলে ধরতে পারেননি তারা। চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের মতে, বছরের সর্বাধিক ছবির নায়ক হয়েও ছবির গল্প, নির্মাতা, চরিত্র বাছাইয়ে সচতেন না হওয়ায় ম্লান হয়ে রইলেন ইন্ডাস্ট্রির আস্থাভাজন দুই নায়ক। ‘অন্তর জ্বালা’ দিয়ে তুমুল আলোচিত হয়েছেন নায়ক জায়েদ খান, তবে আশা জাগানিয়া ব্যবসায়ের খবর এই নায়কও দিতে পারেননি।
‘গেম রিটার্নস’ দিয়ে নিরব ও ‘পরবাসিনী’ দিয়ে ইমন বেশ ভালোই ঝলক দেখিয়েছেন। তবে উল্লেখ করার মতো সাফল্য তাদের নামের শেষেও যোগ করা যায় না। আনিসুর রহমান মিলন, কায়েস আরজু, শাহরিয়াজ, শিপন মিত্রসহ নতুন প্রজন্মের নায়কেরাও বেশ ম্লান রয়ে গেলেন। তাদের উত্তর সূরি হিসেবে রিয়াজ-ফেরদৌসরা চলচ্চিত্র অঙ্গনে চলতি বছরে সরব হলেও সিনেমা দিয়ে কোনো আশা জাগানোর গান শোনাতে পারেননি।
নায়িকা নিয়ে হতাশা
মাহিয়া মাহিই এখন শীর্ষ ঢালিউডে, যার নামে দর্শক হলে আসেন। পরীমনি ও বিদ্যা সিনহা মিম দর্শকপ্রিয়তায় সেরা হতে এখনো সংগ্রাম করলেও কিছু দর্শক তিনি তৈরি করতে পেরেছেন। অন্যদিকে নুসরাত ফারিয়ার কিছু দর্শক আছে, তবে তিনি জাজ মাল্টিমিডিয়ার গৃহপালিত বলে সব নির্মাতারা তাকে নিয়ে সিনেমা বানাতে পারেন না। ফারিয়াকে হিসেবের বাইরেই রাখতে হয়। একইভাবে হিসেবের বাইরে থাকেন একমাত্র শাকিবের নায়িকা বলেই পরিচিত বুবলীও। তাই নতুন সিনেমা শুরু করতে গেলে মাহিয়া মাহি, পরীমনি ও মিম ছাড়া আর কোনো নায়িকার নাম খুঁজে পান না নির্মাতা-প্রযোজকরা। বছরজুড়েই চলেছে নায়িকা নিয়ে আক্ষেপ ও হতাশার মিছিল।
মাহি-পরী-মিমের শিডিউল জটিলতা, ছবি পছন্দ না হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে নির্মাতারা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন নতুন-পুরনো নায়িকাদের নিয়ে। কেউ কেউ ছোট পর্দা থেকে বেশ আয়োজন করেই বড় পর্দায় হাজির করেছেন নায়িকাদের। কিন্তু সাফল্য জুটেনি কারও কপালে। চলতি বছরে ছবি মুক্তি পেলেও আশা জাগাতে পারেননি আইরিন, মিষ্টি জান্নাত, তমা মির্জা, বিপাশা কবির, মৌমিতারা।
বছরের সেরা দুই সিনেমার নায়িকা মাহিয়া মাহি ও কলকাতার শুভশ্রী। এরপর আলোচনায় থাকা তিশা মূল ধারার সিনেমায় কখনোই ভরসা নন, আর ‘সুলতানা বিবিয়ানা’র আঁচল তো আড়ালে প্রায় বছর হতে চললো। ‘রাজনীতি’ দিয়ে দীর্ঘদিনের আড়াল ভেঙে সরব হলেও আবার অনিয়মিত অপু বিশ্বাস। পরী-মিম ধুঁকছেন আস্থা অর্জনে। পূর্ণিমা-পপিরা ফিরছেন না। মৌসুমী এখন বোন-ভাবী চরিত্রেই ব্যস্ত। সম্ভাবনার আশা জাগিয়ে কলকাতায় থিতু হলেন জয়া আহসান। তাই এখানে এখন নায়িকার খরা। কে ধরবেন হাল ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রির? নতুন বছরে নতুন কোনো অপু, মাহিদের ব্যবসা সফল ও নির্ভরযোগ্য নায়িকার দেখা মিলবে তো?
আলোচনার শীর্ষে চলচ্চিত্র
বছর দুয়েক আগেও চলচ্চিত্রের মানুষদের আক্ষেপ ছিলো গণমাধ্যমে খুব একটা প্রচার পায় না চলচ্চিত্র শিল্প। সেই আক্ষেপ তাদের মিটে গেছে চলতি বছরে। সিনেমার সাফল্যে না হলেও নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বছরজুড়েই গণমাধ্যমকে ‘গরম’ খবর যোগান দিয়েছে ঢাকাই চলচ্চিত্র। বছরের শুরুতেই আসে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচন। সেখানে দুষ্টের হাওয়া লাগতে লাগতেও বেছে যায় ইন্ডাস্ট্রি। তবে মে মাসের শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে স্মরণকালের সেরা আলোচনা পায় চলচ্চিত্র ও তার মানুষেরা। তিনপি প্যানেলে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে ঘটে গেছে অনেকে লজ্জাজনক ঘটনাই। নির্বাচন হওয়া না হওয়া নিয়ে শাকিবের তালবাহানা, এফডিসিতে পুলিশি মহড়া, নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ, মাঝরাতে ভোটকেন্দ্রে শাকিবের অযাচিত প্রবেশ ও তাকে ঘিরে উত্তেজনা, জায়েদ-সাইমনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে শাকিবের অভিযোগ, নির্বাচিত হয়েও মৌসুমীর পদত্যাগ, দেশীয় টেকনিশিয়ান, কলাকুশলী ও সিনিয়রদের নিয়ে শাকিব খানের অশালীন বক্তব্য ও সেই জের ধরে শাকিব খানকে বয়কট, যৌথ প্রযোজনা নিয়ে আন্দোলন ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার আব্দুল আজিজকে বয়কট, শাকিবের সঙ্গে আপোষ নিয়ে নাটক, প্রযোজক ও সেন্সর বোর্ডের সদস্য ইফতেখার উদ্দিন নওশাদের গায়ে চলচ্চিত্র পরিবারের নেতাকর্মীদের হামলা, শাকিব, আজিজ ও মৌসুমীদের নতুন সংগঠন, শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিয়ের খবর প্রকাশ, শাকিব খানের পুত্র নিয়ে দেশজুড়ে মাতামাতি, সংসার করার নামে শাকিব-অপুর রঙ তামাশা, বছর শেষে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত- এইসব ঘটনা দেশবাসীকে করেছে আহত, মর্মাহত, বিরক্ত।
নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যু দেশের মানুষকে শোকের সাগরে ভাসিয়েছে। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় তাসকিন রহমান নামে অভিনেতার অভিনয় তাক লাগিয়েছে দর্শককে। সরকার কর্তৃক ৫০টি হলে ডিজিটাল মেশিন বসানোর ঘোষণা চলচ্চিত্রে আশা জাগিয়েছে। বলিউড অভিনেতা ইরফান খান প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শক মুগ্ধ করেছেন।
নতুন মুখ
চলতি বছরে নির্মাতা ও শিল্পী-সবখানেই নতুন মুখের দেখা পেয়েছে ঢাকাই সিনেমা। তবে সাফল্যের পাল্লাটা নির্মাতাদের দিকেই ভারী। অভিষেকেই রীতিমত বাজিমাত করেছেন দীপঙ্কর দীপন। তার প্রথম ছবি ‘ঢাকা অ্যাটাক’ বছরের সেরা ব্যবসা সফল ছবি। এরপর বুলবুল বিশ্বাস ‘রাজনীতি’, হিমেল আশরাফ ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ দিয়ে নিজেদের জাত চিনিয়েছেন, জাগিয়েছেন সম্ভাবনা। নতুন অভিনেতা হিসেবে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির ভিলেন চরিত্রে প্রশংসিত হয়েছেন তাসকিন রহমান। নতুন নায়িকা হিসেবে আশা জাগিয়েছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা, তবে তার ছবি ‘ভয়ংকর সুন্দর’ হতাশ করেছে সিনেমার বাজারকে। এসেছেন আরও বেশ ক’জন নতুন নায়ক-নায়িকাও। তবে তেমন করেই আশা জাগাতে পারেননি কেউই।
ইন্ডাস্ট্রির লোকই জানে না সিনেমার খবর
কেউ বলে বিকল্প ধারার ছবি কেউ আবার স্মার্ট হয়ে উচ্চারণ করেন অফট্র্যাকের সিনেমা। অনেকে আবার গতানুগতিক ধারার এইসব ছবিগুলোকে গল্প প্রধান বা চরিত্র প্রধান ছবি বলেও অভিহিত করেন। বিশ্বজুড়েই এইসব ছবিকেই দেখা হয় আদর্শ চলচ্চিত্র হিসেবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে খুব একটা প্রচার বা দর্শকপ্রিয়তা পায় না ছবিগুলো। দর্শক খুঁজে বিনোদনের গল্প ও সংলাপ। সেইদিক থেকে ভিন্ন ভাবনার সিনেমা নির্মাণে কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে বলা চলে বসন্ত চলছে। টালিগঞ্জে প্রায় আশি ভাগ চলচ্চিত্রই এখন গল্প প্রধান। মজার ব্যাপার হলো সেই ছবিগুলো প্রচার ও ব্যবসায়িক সাফল্যে পেছনে ফেলে দিচ্ছে দেব-জিৎদের ধুমধাম মারপিট আর স্বস্তা রসিকতার সিনেমাকে।
কিন্তু এর বিপরীত চিত্র বাংলাদেশে। রীনা ব্রাউন,. তুখোড়, কপালের লিখন, গ্রাস, ছিটকিনি, হঠাৎ দেখা, নুরু মিয়া ও তার বিউটি ড্রাইভা ‘র মতো চমৎকার জীবনবোধ, গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিগুলো সাফল্য তো দূরের কথা, প্রচারই পায় না ঠিকমতো। নির্মাতারাই কোনো এক অজানা কারণে তাদের ছবিগুলোকে দর্শক থেকে দূরে রাখতে চান। ইন্ডাস্ট্রির লোকেরাও জানেন না অফট্র্যাকের এইসব ছবির খবর। অবশ্য চলচ্চিত্রবোদ্ধারা বলেন, বিদেশের বাজারে নির্মাতা হিসেবে নিজেদের পরিচিত করা, নানা রকম অ্যাওয়ার্ড জয় করাই এইসব শীতল মেজাজি সিনেমার নির্মাতাদের মূল টার্গেট। দেশের সিনেমার বাজার, মানোন্নয়ন নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই।
তবে ছোট পর্দা থেকে এসে সিনেমা বানিয়ে কিংবা ভিন্ন চোখে, ভিন্ন মেজাজে গল্প বলে যে দর্শক মুগ্ধ করা যায় তার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন তৌকীর আহমেদ, দীপঙ্কর দীপনেরা।
বিদেশে বাড়ছে সিনেমার বাজার
প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে ঢাকাই ছবির কদর অনেক। বিদেশের মাটিতে বসে নিজের দেশের সিনেমা দেখতে চান তারা। টিভিগুলোতে সিনেমা প্রচার হলে আগ্রহ নিয়েই বসেন। তবে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেশের ছবি দেখার সুযোগ খুব একটা পান না। সেই আক্ষেপ শেষ হতে চলল।
কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো’র হাত ধরে মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাত, ওমান, দুবাই প্রভৃতি দেশে নিয়মিতিই চলছে বাংলাদেশের ছবি, যেগুলো সদ্য দেশে মুক্তি পেয়েছে। এটি কোনো উৎসব উপলক্ষে নয়। শতভাগ ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখানো হচ্ছে বাংলাদেশি ছবি। যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত হবে দেশীয় সিনেমার বাজার।
পাশাপাশি আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্সের বেশ কিছু হলেও মুক্তি দেয়া হচ্ছে ঢাকাই সিনেমা। এতে করে বাড়তি আয়ের পথ পেলেন প্রযোজকেরা। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট মো. অলিউল্লাহ সজিব জানান, নিয়মিতই তারা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি সিনেমা মুক্তি দিয়ে বাজার তৈরি করতে চান।
এই আয়োজনের প্রথম কিস্তিতেই মুক্তি পেয়েছিল প্রেমী ও প্রেমী এবং পরবাসিনী। আরও মুক্তি পেয়েছে ‘নবাব’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘হালদা’।
চলতি বছরে মুক্তি পাওয়া সিনেমার তালিকা
১. মাস্তান ও পুলিশ, ২. কত স্বপ্ন কত আশা, ৩. রীনা ব্রাউন, ৪. তুখোড়, ৫. যে গল্পে ভালোবাসা নেই, ৬. ভালোবাসা এমনই হয়, ৭. মায়াবিনী, ৮. প্রেমী ও প্রেমী ৯. সত্যিকারের মানুষ, ১০. শেষ চুম্বন, ১১. মিসড কল, ১২. ভুবন মাঝি, ১৩. মেয়েটি এখন কোথায় যাবে, ১৪. ভালোবাসা ১৬ আনা, ১৫. ক্রাইম রোড, ১৬. শূন্য, ১৭. সুলতানা বিবিয়ানা, ১৮. নুরু মিয়া ও তার বিউটি ড্রাইভার, ১৯. হঠাৎ দেখা, ২০. সত্তা, ২১. ধ্যাততেরিকি, ২২. তুই আমার, ২৩. আপন মানুষ, ২৪. পরবাসিনী, ২৫. তুমি রবে নীরবে, ২৬. মিলন সেতু, ২৭. নবাব, ২৮. রাজনীতি, ২৯. ড্রেসিং টেবিল, ৩০. বস টু, ৩১. গ্রাস, ৩২. মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা, ৩৩. ভয়ংকর সুন্দর, ৩৪. রাইয়ান, ৩৫. মার ছক্কা, ৩৬. এক পলকের দেখা, ৩৭. রংবাজ, ৩৮. অহংকার, ৩৯. সোনাবন্ধু, ৪০. টু বি কন্টিনিউড, ৪১. শেষ কথা, ৪২. খাঁচা, ৪৩. ১৬ আনা প্রেম, ৪৪. ঢাকা অ্যাটাক, ৪৫. দুলাভাই জিন্দাবাদ, ৪৬. ডুব, ৪৭. গেম রিটার্নস, ৪৮. কপালের লিখন, ৪৯. খাস জমিন, ৫০. হালদা, ৫১. ছিটকিনি, ৫২. চল পালাই, ৫৩. অন্তর জ্বালা, ৫৪. আঁখি ও তার বন্ধুরা এবং ৫৫. গহীন বালুচর।
এলএ