ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে বিয়ের গল্প শোনালেন শাওন

বিনোদন প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:৫৫ এএম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রয়াত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের বয়স যখন ৫০ ছুঁই ছুঁই তখন তিনি প্রেম নিবেদন করেন মেহের আফরোজ শাওনকে। এরপর তারা দু’জনে বিয়ে করেন। ২০০৪ সালের আজকের এই তারিখে হুমায়ুন-শাওনের চারহাত এক হয়। কয়েক বছর সুখের কেটেছিল তাদের দাম্পত্য জীবন।

আজ বেঁচে নেই হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু শাওন ভালো আছেন জনপ্রিয় এই লেখকের স্মৃতি আঁকড়ে। তার সঙ্গে রয়েছেন হুমায়ূন আহমেদের দুই পুত্র নিনিত ও নিশাত। হুমায়ূন আহমেদ ও শাওনের বিয়ে বার্ষিকীতে শাওন তার ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন, জানিয়েছেন তাদের বিয়ের গল্প।

‘‘আনলাকি থার্টিন, অশুভ ১৩। এই ১৩ সংখ্যাটাই আমার জন্য সবচেয়ে শুভ। আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির জন্ম ১৩ তারিখ। আমাদের বিয়ের দিন তারিখও ১৩ তারিখ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই হুমায়ূন আহমেদ ভাবলেন একদিন আগেই বিয়ে করবেন। ঠিক করলেন ২০১২ সালের ডিসেম্বরের ১২ তারিখ (১২/১২/১২) ধুমধাম করে উদযাপন করবেন (বছরে ১৩ তম মাস থাকলে হয়তো ১৩/১৩/১৩ উদযাপনের কথা ভাবতেন তিনি)।

এতোক্ষণে নিশ্চয় বোঝা যাচ্ছে যে নানান গল্প ফেঁদে, ইনিয়ে বিনিয়ে আমি বলতে চাচ্ছি ডিসেম্বর ১২ আমাদের বিবাহের তারিখ, হুম তাই। খুব সাদামাটা ভাবেই হওয়ার কথা ছিল আমার বিয়েটা। ভেবেছিলাম কোনরকম একটা শাড়ি পড়ে তিন বার কবুল বলা আর একটা নীল রঙের কাগজে কয়েকটা সাইন। হুমায়ূন আহমেদের বন্ধুরা আছেন তার পাশে আর আছেন তার মা, প্রকাশক মাজহারুল ইসলামের মা (আমার শাশুড়ী মা’র প্রিয় বান্ধবী)।

যখন তার কাছে বিয়ের খবর জানিয়ে আমাদের জন্য দোয়া চাইতে গেলেন তখন তিনি স্পষ্টভাবে বললেন, তার বড়পুত্রের বুদ্ধি এবং দূরদর্শিতার প্রতি তার পূর্ণ আস্থা আছে। বড়পুত্র যখন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন নিশ্চয়ই নিজের ভালো বুঝেশুনেই নিয়েছে। নিজে উপস্থিত না হলেও প্রিয়পুত্রের সিদ্ধান্তের প্রতি তার শুভকামনা সবসময়ই থাকবে। আমার পরিবারের কেউ আমার সঙ্গে নেই, এমনকি নেই কোনও বন্ধুও। সবাই ত্যাগ করেছে আমাকে।

ডিসেম্বরের ১১ তারিখ হুমায়ূন আমাকে জোর করে পাঠালেন নিউমার্কেটে। উদ্দেশ্য, একখানা হলুদ শাড়ি কিনে আনা। যেন সন্ধ্যায় আমি হলুদ শাড়ি পরে নিজের গায়ে একটু হলুদ মাখি। বললেন, তোমার নিশ্চয়ই বিয়ে নিয়ে গায়ে হলুদ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। আমাকে বিয়ে করার কারণে কোনোটাই পূরণ হচ্ছে না। আমি খুবই লজ্জিত। তারপরও আমি চাই আজ সন্ধ্যায় তুমি হলুদ শাড়ি পড়ে ফুল দিয়ে সাজবে। নিজের জন্য তোমার ভবিষ্যত সন্তানের জন্য আমার জন্য আমরা দু’জনে মিলে আজ গায়ে হলুদ করব।

আমি একা একা শাড়ি কিনলাম। গাঁদা ফুলের মালা কিনলাম। কি মনে করে একটা লাল পাঞ্জাবীও কিনে ফেললাম। সন্ধ্যায় নিজে নিজে সাজলাম। বাথরুমের আয়নায় নিজেকে দেখে আমার চোখ ফেটে পানি চলে আসলো। চোখ মুছে খোঁপায় কানে গাঁদাফুলের মালা গুঁজলাম। হঠাৎ শুনি বাথরুমের দরজায় ধুমধাম শব্দ। দরজা খুলে বেরিয়ে দেখি ডালা কুলো হাতে মাজহার ভাইয়ের স্ত্রী স্বর্ণা ভাবী, পাশে ৩ বছরের ছোট্ট অমিয়।

একটু দূরে লাল পাঞ্জাবী পরা হুমায়ূন আহমেদ ঠোঁট টিপে হাসছেন। হই হই করে ঘরে ঢুকলো হুমায়ূনের আরো বন্ধু আর তাদের স্ত্রীরা। তারা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল পাশের রুমে। চার-পাঁচটা প্রদীপ দিয়ে সাজানো ছোট্ট একটি পাশ। সেখানে হলুদের কি স্নিগ্ধ ছিমছাম আয়োজন! লেখক মইনুল আহসান সাহেবের ভাইয়ের স্ত্রী কেয়া ভাবী আর মাজহার ভাইয়ের স্ত্রী স্বর্ণা ভাবী আমার আর হুমায়ূনের হাতে ‘রাখি’ও পরিয়ে দিলো, সেকি খুনসুটি! সে কি আল্লাদ! সে এক অন্যরকম গায়ে হলুদ। আরেক ভাবী নামিরা সব মেয়েদের হাতে মেহেদী দিয়ে দিলো। আমার আর হুমায়ূনের দুই গাল কাঁচা হলুদে রাঙা।

আহা ২০০৪ সালের সেই রাত, আহা ২০১৭ সালের এই রাত। আজ ১২ ডিসেম্বর ২০০৪ এর এই দিনে কুসুম আর হুমায়ূন নতুন জীবন শুরু করেছিল। কুসুম তার জীবনের সবচাইতে শুভ ১৩ বছর পার করে ফেলল। কুসুমকে শুভেচ্ছা। কুসুমের হুমায়ূনকে শুভেচ্ছা।’’

এনই/আরআইপি

আরও পড়ুন